দেশ বিদেশ
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার রিপোর্ট
যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ভীতিকর পর্যায়ে পৌঁছেছে
কূটনৈতিক রিপোর্টার
১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবারযুদ্ধ, সহিংসতা এবং নিপীড়নের কারণে বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। সামপ্রতিক সময়ে এটি ভীতিকর অবস্থায় পৌঁছেছে। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাস্তুচ্যুতদের জন্য মানবিক সহায়তা তহবিল বৃদ্ধির বদলে তা দ্রুতই কমছে। এ অবস্থায় একমাত্র আশার আলো হচ্ছে সিরিয়ার বাস্তুচ্যুতদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট’- এমন চিত্র তুলে ধরেছে। জেনেভা থেকে প্রচারিত ইউএনএইচসিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট’- অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিলের শেষ নাগাদ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ছিল ১২ দশমিক ২১ লাখ। গত বছরে একই সময়ে সংখ্যাটি ছিল ১২ কোটি। এই সংখ্যা গত প্রায় দশকের মধ্যে প্রতি বছরই শরণার্থী ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই বাস্তুচ্যুতির প্রধান কারণগুলো হলো- সুদান, মিয়ানমার এবং ইউক্রেনের মতো বড় সংঘাত এবং যুদ্ধ থামাতে ক্রমাগত ব্যর্থতা। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক তীব্র অস্থিরতার সময়ে বাস করছি; যেখানে আধুনিক যুদ্ধবিগ্রহ এক ভঙ্গুর, মর্মন্তুদ পরিস্থিতি তৈরি করেছে যা তীব্র মানবিক যন্ত্রণার সাক্ষ্য দেয়। শরণার্থী ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য আমাদের শান্তি ও টেকসই সমাধানের খোঁজে আরও বেশি প্রচেষ্টা করতে হবে।’
বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে রয়েছে নিজ দেশের অভ্যন্তরে সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষ, যাদের সংখ্যা ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ৬৩ লাখ বেড়ে বেড়ে ৭ কোটি ৩৫ লাখে দাঁড়িয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থী (৪ কোটি ২৭ লাখ মানুষ)। এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষ রয়েছে সুদানে। দেশটিতে ১ কোটি ৪৩ লাখ শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ রয়েছে। এর আগে এই অবস্থানে ছিল সিরিয়া (১ কোটি ৩৫ লাখ)। এরপর রয়েছে আফগানিস্তান (১ কোটি ৩ লাখ) এবং ইউক্রেন (৮৮ লাখ)।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ধনী অঞ্চলে বেশি শরণার্থী আশ্রয় নেয়। আবার ৬৭ শতাংশ শরণার্থী প্রতিবেশী দেশগুলোতেই আশ্রয় নেন। বিশ্বজুড়ে ৭৩ শতাংশ শরণার্থী এই নিম্ন্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেই রয়েছে। বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে ৬০ শতাংশ তাদের নিজ দেশের মধ্যে থেকেই থেকে যায়।
গত এক দশকে বাস্তুচ্যুত সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু ইউএনএইচসিআর’র তহবিল এখনো ২০১৫ সালের সমানই রয়েছে। মানবিক সহায়তায় চলমান কঠোর কাটছাঁটের কারণে শরণার্থী-বাস্তুচ্যুতরা আরও অতি ঝুঁকির মুখোমুখি।
ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, তহবিল কাটছাঁটের এমন পরিস্থিতির মাঝেও গত ছয় মাসে আশার আলো দেখেছি। সিরিয়ার প্রায় ২০ লাখ মানুষ এক দশকেরও বেশি সময় বাস্তুচ্যুত থাকার পর দেশে ফিরতে সক্ষম হয়েছেন। দেশটি এখনও ভঙ্গুর এবং মানুষের জীবন পুনর্গঠনের জন্য আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন।
২০২৪ সালে মোট ৯৮ লাখ জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মানুষ দেশে ফিরেছেন। যার মধ্যে রয়েছে ১৬ লাখ শরণার্থী (যা গত দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ) এবং ৮২ লাখ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ (যা এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ)।
তবে, এই প্রত্যাবর্তনের অনেকগুলোই প্রতিকূল রাজনৈতিক বা নিরাপত্তা পরিস্থিতির মধ্যে ঘটেছে। যেমন- ২০২৪ সালে বিপুলসংখ্যক আফগানকে আফগানিস্তানে ফিরতে বাধ্য করা হয়েছিল, যারা দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় দেশে ফিরেছে। গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মিয়ানমার এবং দক্ষিণ সুদানের মতো দেশগুলোতে শরণার্থী এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে নতুন করে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতিও ঘটেছে।
এই প্রতিবেদনে ইউএনএইচসিআর’র জীবন রক্ষাকারী কর্মসূচিগুলোর জন্য ক্রমাগত অর্থায়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই কর্মসূচিগুলো দেশে ফেরত আসা শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের সহায়তা করে এবং আশ্রয়দানকারী সমপ্রদায়গুলোতে মৌলিক অবকাঠামো ও সামাজিক পরিষেবাগুলোকে শক্তিশালী করে; যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য এক অপরিহার্য বিনিয়োগ।