দেশ বিদেশ
লালপুরে পদ্মার চরে কৃষির সম্ভাবনা ও সংকট
লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার
নাটোরের লালপুরে পদ্মার বুকে জেগে ওঠা ১৯টি বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চল এখন নয়নাভিরাম সুজলা সুফলা ফসলের এক বিশাল কর্মক্ষেত্র। কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে বছর জুড়ে সেখানে উৎপাদিত হচ্ছে আখ, চীনাবাদাম, আলু, পিয়াজ, পটোল, বেগুন, করলা, কুমড়া, ভুট্টা, গম, ধান, পিয়ারা, কুল, কলা, আমসহ বিভিন্ন সবজি, অর্থকরী ও দানাদার ফসল। চরের ফসলকে কেন্দ্র করে উপজেলার লালপুর ও বিলমাড়িয়ায় গড়ে উঠেছে সবজি ও শস্য বিক্রির পাইকারি আড়ত। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সেগুলো ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বেগবান হচ্ছে অর্থনীতি। সরজমিন চরবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীর ফেলে যাওয়া পলি মাটিতে জেগে ওঠা চরের জমি অত্যন্ত উর্বর। অল্প পরিশ্রমে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, লালপুরে পদ্মার চরে স্থায়ী আবাদি জমির মোট পরিমাণ ৩ হাজার ৬৮৬ হেক্টর। তন্মধ্যে স্থায়ী ফল বাগান ১২২ হেক্টর, আখ ১,৫৬৩ হেক্টর, গম ৮৪১ হেক্টর, মসুর ৪৮২ হেক্টর, চিনাবাদাম ৪৭৮ হেক্টর, শাকসবজি ১২১ হেক্টর উল্লেখযোগ্য। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. আব্দুল্লাহ জানান, চরে প্রায় ১০০টির মতো বাথান রয়েছে। এসব বাথানে প্রায় ৩০০ খামারি ২৫ হাজার গরু ও মহিষ পালন করে বছরে ১ হাজার ২০০ টন দুধ ও ২ হাজার টন মাংস উৎপাদন করে যা উপজেলার সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখছে।
নওসারা সুলতানপুর চরের সফল কৃষি উদ্যোক্তা মাহিদুল (৩০) বলেন, চরে ৩০ বিঘা জমিতে পেয়ারা ও কুলের বাগান, ১০ বিঘা জমিতে আখ, ১০ বিঘা জমিতে চিনাবাদাম চাষ করছেন। চরের পলি মাটিতে অল্প পরিশ্রমে ব্যাপক ফসল হয়। কৃষক ছানা ঘোষ (৬০) বলেন, চরে আমার ৭০ বিঘা জমিতে এখন ধান, আখ ও চীনাবাদাম আবাদ করছি। এর আগে ভুট্টা, গম ও মসুর চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। তবে যোগাযোগের রাস্তা ও আধুনিক কৃষি সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে ফসলের উৎপাদন খরচ যেমন হ্রাস পাবে, তেমনি বৃদ্ধি পাবে উৎপাদন। লাভবান হবেন প্রান্তিক কৃষকরা।
এ বিষয়ে সাংবাদিক আলাউদ্দিন জালাল বলেন, চরের মানুষ ও কৃষকের ভাগ্য বদল না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে না। তাই চরে উন্নত যোগাযোগ ও আধুনিক কৃষি সুবিধা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। চরে রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে বিলমাড়িয়া ইউপি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক সিদ্দিক আলী মিষ্টু বলেন, খোঁজ নিয়ে কীভাবে রাস্তাগুলো উঁচু করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বড়াইগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী ও লালপুর উপজেলা সেচ কমিটির সদস্য সচিব মো. জিয়াউল হক মানবজমিনকে বলেন, আগামী অর্থবছরে পানাসি প্রকল্পের নতুন পর্যায়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লালপুরে পদ্মার চরে সেচ ব্যবস্থা ও রাস্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তারা আবেদন করলে সেচের জন্য বৈদ্যুতিক মোটরের লাইসেন্স দেয়া হবে।
চরের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ইউএনও মো. মেহেদী হাসান বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে রাস্তা নির্মাণ ও সেচের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।