দেশ বিদেশ
কথিত বাংলাদেশি অভিবাসী সন্দেহে ২৫ শতাধিক মানুষকে জোরপূর্বক বিতাড়ন
মানবজমিন ডেস্ক
১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার
৭ই মে থেকে শুরু হওয়া অভিযানে এ পর্যন্ত ২৫০০’র বেশি ব্যক্তিকে কথিত ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে জোরপূর্বক বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে ভারত সরকার। এই কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, আইনি মহল ও কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। এ খবর দিয়ে লন্ডনের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে- দিল্লি, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, আসাম ও রাজস্থানে ব্যাপক ধরপাকড় চালানো হয়। পরে আটক ব্যক্তিদের সীমান্তবর্তী রাজ্য আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাদের বাংলাদেশে পুশব্যাক করে। এবারই প্রথম এই আটক ব্যক্তিদের ভারতীয় বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজে সীমান্তে পাঠানো হয়েছে, যা এই অভিযানে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই কঠোর অবস্থান গ্রহণের পেছনে ২২শে এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার উল্লেখ করছে কর্তৃপক্ষ। ওই হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। তারপর থেকেই ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র কথা উল্লেখ করে সরকার অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় জোরদার করেছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা দাবি করেছেন, গত কয়েক মাসে প্রায় ১০০০ (কথিত) বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০৩ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের রায়ে সাময়িক সুরক্ষা পাওয়া ব্যক্তিরাও এই অভিযানে রেহাই পাননি। তবে, পরে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপে তাদের আবার ভারতে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। ডিজিটাল ফরেনার্স আইডেন্টিফিকেশন পোর্টালের মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের নাগরিকত্ব যাচাই করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আধার, ভোটার আইডি, রেশন কার্ড আবেদনকারীদের তথ্যও মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে নাগরিকত্ব নির্ধারণের জন্য কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও, ভুলভাবে ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত হচ্ছেন কেউ কেউ। যেমন আসামের মোরিগাঁওয়ের সরকারি স্কুলের সাবেক শিক্ষক খায়রুল ইসলাম। ২০১৬ সালে তাকে এক ট্রাইব্যুনাল বিদেশি ঘোষণা করে। পরে হাইকোর্টও সেই রায় বহাল রাখে। তিনি দুই বছর ডিটেনশন সেন্টারে ছিলেন, তার আবেদন সুপ্রিম কোর্টে এখনো বিচারাধীন। ২৩শে মে তাকে পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। চারদিন পর বাংলাদেশ সীমান্তে ফেলে যায়। বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি সীমান্তের মাঝামাঝি এক খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে বলছেন, ‘আমার হাত বেঁধে, আমাকে চোরের মতো বাসে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ পরে তাকে আবার ভারতীয় পুলিশ হেফাজতে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
৮ই মে বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে কূটনৈতিকভাবে প্রতিবাদ জানায়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা দেখছি কী ঘটছে। কিন্তু এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এই বিষয়টি কূটনৈতিক ও আইনি পথে সমাধান হওয়া উচিত। ভারতের দাবি, বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন বাড়ছে। তবে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মতে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে এ ধরনের প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতের চেয়েও বেশি ছিল। মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীরা এই ধরনের ‘পুশব্যাক’ প্রক্রিয়াকে ভারতের সংবিধানে নিশ্চিত নাগরিক অধিকার ও আইনি প্রক্রিয়ার পরিপন্থি বলেই মনে করছেন। ১২৫ জন শিক্ষক, গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, এ ধরনের অভিযান শুধু আইনি ব্যর্থতা নয়, এটি ভারতের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের কেন্দ্রে আঘাত। ভারতীয় গণমাধ্যম স্ক্রলের তথ্য অনুযায়ী, দিল্লি থেকে আটক প্রায় ৪০ জন রোহিঙ্গাকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে নিয়ে গিয়ে হাতকড়া ও চোখ বাঁধা অবস্থায় মিয়ানমারের সমুদ্র উপকূলে ফেলে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।