ঢাকা, ৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৫ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

হাটে আসছে কোরবানির পশু, ক্রেতারা শুধু দরদাম করছেন

আফজাল হোসেন
২ জুন ২০২৫, সোমবার
mzamin

ঈদুল আজহা সামনে রেখে কোরবানির পশুর হাট জমতে শুরু করেছে। হাটে পশু আসছে, ক্রেতারা দরদাম করছেন। বেচাকেনা হচ্ছে না খুব একটা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ক্রেতারা দেখে দরদাম করছেন, ঈদের আগের দুই/তিনদিনই কোরবানি পশু বিক্রি হয়ে থাকে। এজন্য তারা ক্রেতার অপেক্ষা করছেন। হাটে আসা ক্রেতারা জানিয়েছেন, পশু দেখে দরদামের ধারণা নিচ্ছেন। ঢাকা শহরে পশু রাখার অনেকের জায়গা নেই। এ কারণে শেষ মুহূর্তে  কোরবানির পশু কিনে থাকেন। 

রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন এলাকায় ১৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ১০টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে। ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি’র সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ বছর ঈদুল আজহার দিনসহ মোট ৫ দিন নির্ধারিত স্থানে পশুর হাট বসবে। ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খামারিরা ট্রাকভর্তি করে কোরবানির পশু আনতে শুরু করেছেন। এ বছর হাটে নেই ভারতীয় গরু। সরজমিন দেখা যায়,  প্রতিবছরের মতো রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় কোরবানির অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। গত মঙ্গলবার থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার খামারিরা ট্রাকভর্তি গরু আনতে শুরু করেছেন। যদিও ঈদের ৫ দিন বাকি রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনুমোদনে দনিয়া কলেজ মাঠ ও ছনটেকখালী এলাকায় এ হাটের ইজারা নিয়েছেন তারিকুল ইসলাম তারেক। প্রতি বছরের মতো এবারো হাটটি জমে উঠছে ধীরে ধীরে। পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটকে ঘিরে ক্রেতা-বিক্রেতা, খামারি, স্বেচ্ছাসেবক, পরিচালনা ও উপদেষ্টা কমিটির  মধ্যে ব্যস্ততা বিরাজ করছে। হাটে ইতিমধ্যে খামারিরা গরু নিয়ে এসেছেন। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বেচাকেনা শুরু হয়নি। ছাউনির কাজ চলছে পুরোদমে। বিক্রেতারা নিজেদের মতো করে বাঁশ ও নানা রঙের ত্রিপল দিয়ে শেড তৈরি করছেন, যাতে গরুগুলোকে ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করা যায়। শিশু- কিশোররা দলে দলে বাবা-মা ও বন্ধুদের সঙ্গে হাট ঘুরে বেড়াচ্ছে। মহাসড়কের আশপাশের ছনটেক, কাজলা, শেখদী সড়ক, দনিয়া কলেজ সড়ক, বর্ণমালা স্কুল রোড, জিয়াসরণি, গোবিন্দপুর মৃধাবাড়ী সড়ক ও রায়েরবাগসহ আশপাশের অলিগলিতে পশুর হাট ছড়িয়ে পড়েছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বড়রাও গরু দেখতে ভিড় করছেন হাটে। হাটে ইজারাদারদের পক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা, বৈদ্যুতিক লাইট, শৌচাগার ও পশু চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফরিদপুরের খামারি টিটু শেখ গরুর জন্য বাঁশ পুঁতে শেড তৈরি করছিলেন। তিনি বললেন, ২০টা গরু এনেছি। যেগুলোর দাম ১ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত। গরুগুলোর মধ্যে অধিকাংশই সিন্ধি জাতের, সঙ্গে কিছু দেশি গরুও রয়েছে। তিনি বলেন, “গ্রামের হাট জমে ঈদের এক সপ্তাহ আগে, কিন্তু শহরে জমে দুই/তিনদিন আগে। এখন শুধু দেখা ও যাচাই চলছে, শেষ সময়েই মূল বেচাকেনা শুরু হবে। তিনি আরও জানান, সব গরুই আমার সন্তানের মতো। কিনে যখন চোখের সামনে দিয়ে ওদের নিয়ে যায়, বুকটা কেঁপে উঠে। তবু ভাবি হালাল পথে কামাই করবো বলেই এই কষ্ট।

কুষ্টিয়ার খামারি মোহাম্মদ টিটু খড়ের বিছানায় ক্লান্ত শরীর এলিয়ে বসেছিলেন। চোখে-মুখে ঘুম, অথচ চোখের ভেতরে জেগে আছে অস্থিরতা। তিনি বলেন, বৃষ্টি দেখে আগেভাগে চলে আসলাম। ৫০টা গরু এনেছি- এর অধিকাংশই সিন্ধি, শাহীওয়াল ও দেশি জাতের। অনেকে গরু দেখতে আসছে, দামও জিজ্ঞেস করছে, কিন্তু এখনো কেউ কিনছে না। সবাই দাম বোঝার চেষ্টা করছে। বিক্রি শুরু হলে বোঝা যাবে বাজার কেমন। যেমন কষ্ট করেছি, তেমনি চাই সঠিক দামটা পাই। এখনো অনেকেই আসে, দেখে, দাম করে না। আমরা তো গরু শুধু বেচতে না, দুইটা টাকা কামাতে এসেছি। সারাবছরের লড়াইটা যেন এবার কাজে লাগে। গরুর খামারি আমিনুল বলেন, আমার ১৫০টি গরু আছে। সব ধোলাইখালের হাটে নিয়ে যাবো। ইতিমধ্যেই ৫টি বিক্রি করে দিয়েছি আমার প্রতিবেশীর কাছে। বাকি গরুগুলো হাটে চলে যাবে। আরেক ব্যবসায়ী তোফাজ্জল সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন পশু বিক্রির জন্য। তিনি জানান, আমি ৫০টি গরু এনেছি। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ছাগল রয়েছে। বৃষ্টির সময়, তাই একটু আগে থেকেই এসেছি হাটে। ২ বছর ধরে নিজের খামারেই কোরবানির  পশুগুলো পালন করেছি। দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বছর আশা করছি- ভালো দাম পাবো; বাকিটা কপালে কী আছে দেখা যাক। 
হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে  পোশাকধারী ও সাদাপোশাকে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে- যাতে কেউ প্রতারিত না হন। তিনি আরও বলেন, মলমপার্টি, ছিনতাইকারী বা পকেটমারদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিক্রেতাদের পশু বিক্রির টাকা হাট এলাকায় থাকা অস্থায়ী ব্যাংকে জমা দেয়ার এবং ক্রেতাদের টাকা নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।  

বিক্রেতাদের  কথা থেকে বারবারই ফুটে উঠেছে একটি অনুভব- এই হাট শুধু গরুর নয়, তাদের জীবনের সংগ্রামের মঞ্চ। প্রতি বছর তারা নতুন স্বপ্ন নিয়ে আসেন, হাটের কাদায় নেমে রক্ত-ঘামে মিশে থাকা তাদের জীবিকার চূড়ান্ত পরীক্ষা হয় এখানে। এ হাটের প্রতিটি বাঁশের খুঁটি, ত্রিপলের ছাউনি আর গরুর চোখের দিকে তাকালে বোঝা যায় এটা কেবল বেচাকেনার জায়গা নয়। এটা জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার চেষ্টার গল্প।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status