ঢাকা, ৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৫ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে দুর্ভোগ চরমে

সুদীপ অধিকারী
২ জুন ২০২৫, সোমবার

চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাই কর্মবিরতিতে থাকায় গত পাঁচদিন ধরে বন্ধ রয়েছে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। হচ্ছে না শিডিউল অপারেশনও। রোগীদের বরাদ্দ খাবারও পরিবেশন করা হচ্ছে না। নির্দিষ্ট প্যাথলজি পরীক্ষা ছাড়া অনেকেই চোখের চিকিৎসা পর্যন্ত শুরু করতে পারছেন না। বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নানা বয়সী রোগীরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়ছেন তারা। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে  দুঃখ প্রকাশ করে আপাতত এই হাসপাতালের রোগীদের অন্যত্র চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। গতকাল সকালে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মেইন গেট দুটোই বন্ধ। পাশের পকেট গেট খোলা। তবে ভর্তিরোগী ছাড়া ভেতরে কেউই প্রবেশ করতে পারছেন না। গেটের ভেতর বেঞ্চে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কিছু আনসার সদস্যরা। পাশেই বেঞ্চে বসে আছেন কিছু পুলিশ সদস্য। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা এসে একের পর এক ভিড় করছেন গেটের সামনে। আনসার সদস্যরা তাদেরকে বলছেন- হাসপাতাল বন্ধ তোমরা চলে যাও। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। কবে খুলবে আমরা জানি না। হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় বেশির ভাগ কাঁচের গেটে তালা ঝুলছে। ভেতরের তথ্য কেন্দ্রেও কেউ নেই। জরুরি বিভাগও বন্ধ। বিড়াল ঘোরাফেরা করছে। পাশের বহির্বিভাগ, চিকিৎসকদের রুম, প্যাথলজি সবক’টি বিভাগই জনশূন্য। চিকিৎসক-নার্স তো দূরের কথা আনসার ছাড়া হাসপাতালটিতে কোনো অফিস স্টাফ কেউ দেখা যায়নি। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও হাসপাতালের পক্ষ থেকে  কোনো রোগীকে কোনো ওষুধ বা বরাদ্দকৃত খাবারও সরবরাহ করতে চোখে পড়েনি। জুলাই আহতসহ যারা হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই অলস সময় কাটাচ্ছেন। এমনই একজন মো. ইব্রাহীম মিয়া। গত জুলাই বিপ্লবে চোখে বুলেটবিদ্ধ হয়ে গত ৮ মাস ধরে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। ইব্রাহীম বলেন, গত ৫ দিন ধরে এই হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স থেকে শুরু করে সকলে কর্মবিরতিতে রয়েছেন। আমরা কেউ কোনো চিকিৎসা পাচ্ছি না। তিনি বলেন, বর্তমানে এই হাসপাতালে অন্তত ৮০ জন জুলাই আহত যোদ্ধা ভর্তি রয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই চোখে গুলিবিদ্ধ রোগী। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরও ৪০ থেকে ৫০ জন সাধারণ রোগী ভর্তি আছেন। আমরা চোখের যন্ত্রণায় মারা গেলেও কেউ কোনো চিকিৎসা পাচ্ছি না। এমনকি আমাদের কোনো খাবারও দেয়া হচ্ছে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য আপাতত কিছু খাবারের ও জরুরি ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বাকি রোগীরা কিছুই পাচ্ছেন না। তাই অনেক রোগী চিকিৎসার অভাবে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকা রায়হান নামে আরেক রোগী বলেন, যত যাই হোক এইভাবে একটা হাসপাতালের সকলে মিলে জোটবদ্ধ হয়ে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেয়া মোটেও উচিত নয়। আমার ডান চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। কিছুই দেখতে পাই না। গত পাঁচদিন ধরে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। এখন ডান চোখের প্রভাব বাম চোখেও দেখা যাচ্ছে। শুধু পানি পড়ছে আর জ্বালা করছে। এরপরও কোনো চিকিৎসকের দেখা পাচ্ছি না। কবে তারা আসবে তাও জানি না। যত যাই হোক এইভাবে একটা হাসপাতালের সকলে মিলে জোটবদ্ধ হয়ে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেয়া মোটেও উচিত নয় বলেও জানান তিনি। এদিকে হাসপাতালটির বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীরাও চিকিৎসা নিতে পারছেন না। আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা রোগীদের ধার্য দিনে অপারেশন করাতে না পেরে অনেকেই হতাশায় পড়েছেন। গতকালও শতাধিক লোক চিকিৎসাসেবা নিতে বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এসে ফিরে গিয়েছেন। এমনই একজন সায়মা আক্তার। 
বৃদ্ধ বাবার চোখের অপারেশন করাতে আগেরদিন রাতে কুষ্টিয়া থেকে রওনা করে গতকাল ভোরে আসেন রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সামনে। কিন্তু এসে দেখেন অপারেশন তো দূরের কথা হাসপাতালে ডাক্তার-নার্স কেউ নেই। পুরো চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ। অশ্রুশিক্ত হয়ে সায়মা আক্তার বলেন, আজকে আমার বাবার ডান চোখের অপারেশনের কথা ছিল। অনেক কষ্ট করে রাতে না ঘুমিয়ে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ঢাকায় আসি। কিন্তু এসে দেখছি হাসপাতাল বন্ধ। কিন্তু আমার বাবার  চোখের অবস্থা ভালো না। তার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে। আমাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো না। এখন যে কোনো বেসরকারি হাসপাতালে যাবো সে উপায়ও নেই। 
হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসক ও কর্মীরা কাজে ফিরতে চাচ্ছেন না।

পাঠকের মতামত

এখানে চিকিৎসা আগেও হয়নি।চিকিৎসার নামে রোগীদের কে হয়রানি ছাড়া ওখানে আর কিছু হয় না।ওখানে রোগী গেলে ডাক্তারদের খারাপ ব্যবহার চিকিৎসায় অবহেলা নিত্যনইমিতিক ব্যপার! একই ডাক্তারের হাসপাতালে কুকুরের মত ব্যবহার আবার চেম্বারে গেলে ভালো ব্যবহার। এগুলো দেখার কেউ নেই। আমি নিজে ভুক্তভোগী।

মোঃ মনিরুল ইসলাম সরক
২ জুন ২০২৫, সোমবার, ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status