বাংলারজমিন
জুলাই আন্দোলনে জীবিত ভাইকে নিহত দেখিয়ে মামলা
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
১ জুন ২০২৫, রবিবারজুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভাইয়ের সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে জীবিত ভাই সোলাইমান হোসেন সেলিমকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ দেখিয়ে মামলা করেছেন তারই বড় ভাই গোলাম মোস্তফা। গত বছরের ৩০শে আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় সেই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে হইচই পড়েছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায়। স্থানীয় পুলিশ ইতিমধ্যে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় আতঙ্কের আরেক নাম মোস্তুফা ডাকাত। তার অত্যাচারে মৃত্যুভয়ে পৈতৃক ভিটে মাটি ছেড়ে বাসা ভাড়া নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে জেলা উপজেলায়। পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলেও লাভ নেই, তার কাছে পুলিশও অসহায়। বেশ কিছুদিন আগে পুলিশ তাকে ধরলেও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পুলিশকে আহত করে পালিয়ে যায়। ঢাকায় গিয়ে গাড়ি চালালেও গাড়িতে করেন ডাকাতি জানান স্থানীয়রা। মো. সোলাইমান হোসেন সেলিম (৫০) ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ধামর গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে। ধামর বেলতলি বাজারে সেলিম মুদির ব্যবসা করলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তাকে শহীদ দেখিয়ে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। ৩রা আগস্ট রাজধানীর কাজলা পেট্রোল পাম্পের সামনে সেলিম গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে এমন অভিযোগ এনে তারই বড় ভাই গোলাম মোস্তুফা ওরফে মস্তু (৫২) ডাকাত ৩০শে আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় সাক্ষী করা হয় তাদের দুই সহোদর হেলাল উদ্দিন (৫৫) এবং আবুল হোসেন (৫৪)কে।
প্রশ্ন হলো জীবিত সেলিমকে কেন নিহত দেখিয়ে মামলা করলেন তারই সহোদর মস্তু। ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে তাদের বাবা আব্দুল হাকিম মারা যাওয়ার পর জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় ভাইদের মধ্যে। সেলিম দুই কন্যা সন্তানের জনক হওয়ায় তার সকল সহায় সম্পত্তির মধ্যে নজর পড়ে বাকি তিন ভাইয়ের। এদিকে, দুইটি হত্যাসহ চারটি মামলায় জড়িয়ে নিঃস্ব মস্তু ফন্দি আঁটে সেলিমকে নিয়ে। ভুক্তভোগী মো. সোলাইমান হোসেন সেলিম বলেন, মস্তু এলাকায় চিহ্নিত ডাকাত। সে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। প্রায় ১৫ বছর ধরে বাড়িতে আসে না। কিন্তু মস্তু বাড়িতে না এলেও বাকি দুই ভাইকে দিয়ে আমার সম্পত্তি গ্রাস করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমার ছেলে সন্তান নেই বলে সবকিছু তাদেরকে লিখে দিতে বলে। তাদের অত্যাচারে ধামর বেলতলি বাজারে আড়াই শতক জমি কিনে বাড়ি ও দোকান করে চলছি। বাপের ভিটায় গেলেই ঝগড়া বাঁধে তাই যাওয়া হয় না।
ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান বলেন, মস্তু এলাকায় একজন স্বীকৃত ডাকাত। তার নামে দুইটি হত্যা, একটি চাঁদাবাজি এবং একটি মারামারির মামলা রয়েছে। সে কম করে হলেও ১৫ বছর ধরে এলাকায় আসে না। কিন্তু সেলিমের জমি-জমা তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতা পেতেই হয়তো ভুয়া মামলাটি করেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লিখিত প্রতিবেদন দিয়েছি। এ বিষয়ে তারাই ব্যবস্থা নেবেন।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে মামলার বাদী গোলাম মোস্তুফা নিরুদ্দেশ হওয়ার কথা জানিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা ডিবি ওয়ারী পুলিশের উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, সেলিম মৃত না জীবিত- আদালতে দুই ভাইকে সামনাসামনি করে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। মামলার তৃতীয় নম্বর তদন্ত কর্মকর্তা আমি। এই মামলায় এখন পর্যন্ত একজন আসামি গ্রেপ্তার রয়েছে। মামলাটির তদন্ত কাজ আমি দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি। গোলাম মোস্তুফার বিরুদ্ধে অন্য মামলা থাকায় সে পলাতক রয়েছে। মামলায় তার যে মোবাইল নম্বরটি সেটিও বন্ধ পাচ্ছি। তার সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।