বাংলারজমিন
সুন্দরবনে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা, বিপাকে বনজীবীরা
আবু সাঈদ শুনু, বাগেরহাট থেকে
১ জুন ২০২৫, রবিবারসুন্দরবনে সব ধরনের বন্যপ্রাণী রক্ষা ও মাছের প্রজনন মৌসুমে নদী খালে মাছ ও মধু আহরণ বন্ধ করেছে সুন্দরবন বিভাগ। একইসঙ্গে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। রোববার থেকে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে গত ২৪শে মে থেকে জেলে, মৌয়ালী ও পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশের পাস দেয়া বন্ধ করেছে বন বিভাগ। বন বিভাগের এই সিদ্ধান্ত সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে, বনজীবী ও পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। সুন্দরবনে প্রবেশে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে শরণখোলার জেলে ইয়াহিয়া শিকদার, রুস্তম বয়াতী, আলী আকব্বরসহ অনেকে জানান, এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কী করবো। মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে সারা বছর সুন্দরবনের নদী খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। এখন বন বিভাগ মাছ ধরা বন্ধ করায় আমাদের তিন মাস বেকার থাকতে হবে। সমুদ্রে মৎস্য আহরণ বন্ধ করলে যেভাবে জেলেদের মৎস্য বিভাগ খাদ্য সহায়তা দেয়, সেভাবে আমাদেরও প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস'া করা হোক। না হলে পেটের দায়ে এই সময়ে অনেকে অবৈধ উপায়ে সুন্দরবনে ঢুকে মাছ আহরণ করতে বাধ্য হবে।
শরণখোলা বাজারের মৎস্য আড়ৎদার জালাল মোল্লা ও তুহিন বয়াতী বলেন, সুন্দরবনে এই সময় মাছ আহরণের ভরা মৌসুম। এই সময়ে তিন মাস মাছ ধরা বন্ধ করায় আড়ৎদাররা প্রতি বছরই লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আড়ৎদারের দাদনের টাকা পরিশোধ করার বিকল্প উপায় না থাকা ও জীবন ধারণ করতে ২০ হাজার জেলের একটি বড় অংশই চোরাপথে সুন্দরবনে ঢুকে নিষিদ্ধ সময়ে মাছ আহরণ করে। সুন্দরবন ট্যুর অপারেটর আব্দুল্লাহ বনি জানান, তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সময়ে পর্যটনের সঙ্গে জড়িত ২ হাজারের অধিক পরিবার অর্থ সংকটে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইড ম্যানগ্রোভ বনে বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ১লা জুন থেকে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের নদী খালে মাছ ও বনের মধ্যে মধু আহরণ বন্ধসহ দেশি-বিদেশি সব পর্যটকের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এজন্য গত ২৪শে মে থেকে জেলে, মৌয়ালী ও পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশের পাস দেয়া বন্ধ করেছে। নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই জেলে, মৌয়ালী ও সব পর্যটকদের সুন্দরবন থেকে বের করে আনা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সুন্দরবন সন্নিহিত লোকালয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এবার সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল দরিদ্র বনজীবীদের তালিকা করে খাদ্য সহায়তাসহ প্রণোদনা দেয়ার জন্য বন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।