বিশ্বজমিন
নিখোঁজের ৩৮ বছর পর তুষার-সমাধি থেকে ভারতীয় সেনার মরদেহ উদ্ধার
মানবজমিন ডেস্ক
(১ বছর আগে) ১৫ আগস্ট ২০২২, সোমবার, ২:৫৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১০:৩০ পূর্বাহ্ন
পাকিস্তান যাতে গুরুত্বপূর্ণ পর্বতশৃঙ্গ দখল করতে না পারে সে জন্য দুর্গম সীমান্তে বিশেষ অভিযান চালিয়েছিল ভারত। ১৯৮৪ সালে সেই ‘অপারেশন মেঘদূত’ পরিচালনার সময় নিখোঁজ হয়েছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ল্যান্সনায়েক চন্দ্রশেখর হরবোলা। অবশেষে নিখোঁজের ৩৮ বছর পর সেই চন্দ্রশেখরের মরদেহ উদ্ধার করা গেলো। বিশ্বের সর্বোচ্চ যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত সিয়াচেনে বরফের নিচে চাপা পড়ে ছিলেন এই ভারতীয় সেনা।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে জানানো হয়েছে, চন্দ্রশেখরের মরদেহ খুঁজে পাওয়ার খবর রোববারই তার পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের হলদিয়ানিতে বসে সেই খবর পান ল্যান্সনায়েক চন্দ্রশেখরের স্ত্রী শান্তিদেবী। বর্তমানে ৬৩ বছর বয়স শান্তিদেবীকে খবর দেন ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারা। খবর শুনে তিনি বলেন, যখন আমাকে জানানো হয় যে শনিবার সিয়াচেন হিমবাহের একটি পুরনো বাঙ্কারে ওর দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছে, তখন আমি হতবাক হয়ে যাই। মাথা কাজ করছিল না। আমি কিছু বলে উঠতে পারছিলাম না। প্রায় ৩৮ বছর হয়ে গিয়েছে।
জানা গেছে, চন্দ্রশেখর হরবোলা ১৯৭১ সালে কুমায়ুন রেজিমেন্টে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালের এপ্রিলে সিয়াচেন হিমবাহে ‘অপারেশন মেঘদূত’-এ ল্যান্সনায়েক চন্দ্রশেখর হরবোলার কুমায়ুন রেজিমেন্টও ছিল। পাকিস্তান যাতে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বা শৃঙ্গ দখল করতে না পারে, সেজন্য এই অভিযান চালিয়েছিল ভারত। প্রবল প্রতিকূল পরিবেশে সেই অভিযানে ছিলেন ল্যান্সনায়েক চন্দ্রশেখর হরবোলা। টহলদারির সময় এক তুষারঝড়ের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে আর খোঁজ মেলেনি ল্যান্সনায়েক চন্দ্রশেখর হরবোলাসহ অভিযানে যোগ দেয়া একাধিক সদস্যের।
তার স্ত্রী শান্তিদেবি বলেন, আমার বয়স যখন ২৫, তখন ও নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। আমরা ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেছিলাম। ন'বছর পর ও নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। সেইসময় আমার দুই মেয়ে কবিতা ও ববিতা খুব ছোটো ছিল। কবিতা’র বয়স ছিল চার এবং ববিতার বয়স ছিল দেড় বছর। আপাতত বড় মেয়ে কবিতার (৪২) সঙ্গে থাকেন শান্তিদেবী। আর কখনও বিয়ে করেননি। তিনি বলেন, আমার সন্তানদের বড় করার জন্য জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছিলাম। প্রচুর বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও গর্বিত মা এবং শহিদ সেনা সদস্যের সাহসী স্ত্রী হিসেবে আমার সন্তানদের বড় করে তুলেছি। সঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে জানানো হয়েছে যে মঙ্গলবার ওর দেহাবশেষ আসবে। সাথে সেনা কর্মকর্তারাও আসবেন।
চন্দ্রশেখরের মেয়ে কবিতা কবিতা বলেন, তিনি বুঝতে পারছেন না এ খবর শুনে তার আনন্দিত হওয়ার কথা না দুঃখিত। কারণ তার বাবা অনেক দিন হয়ে গেছে নেই। তারা কখনো আশাও করেননি যে বাবার মরদেহ পাওয়া যাবে। তবে হিন্দু রীতি অনুযায়ী তার সৎকার করা যাবে ভেবে তারা কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছেন। তিনি আরও বলেন, বাবা বাড়ি ফিরে আসবে কিন্তু তিনি যদি জীবিত ফিরতেন এবং আমাদের সঙ্গে একসাথে স্বাধীনতা দিবস উৎযাপন করতেন তাহলে সেটি দারুণ হতো।