ঢাকা, ২ মে ২০২৫, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

প্রক্সি ভোট নিয়ে সন্দেহ দলগুলোর

স্টাফ রিপোর্টার
৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
mzamin

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট প্রয়োগের সুযোগ দিতে প্রক্সির মাধ্যমে ভোট দেয়ার পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল। প্রবাসীদের ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য পদ্ধতি নিয়ে নির্বাচন ভবনের মিলনায়তনে গতকাল অংশীজনদের সঙ্গে সেমিনার করে ইসি। সেখানে দলগুলো নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে। সেমিনারে নানা পরামর্শ আসে। তবে শেষমেষ কোন পদ্ধতিতে প্রবাসীদের ভোট হতে পারে, সেই বিষয়ে আগামী ১৫ই মে এর মধ্যে লিখিত আকারে দলগুলোকে পাঠাতে বলেছে ইসি। সেমিনারে বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতির-‘প্রক্সি বাছাই, পছন্দের প্রতীকে ভোট ও নিরাপত্তার’ বিষয়গুলো তুলে ধরেছে। 

দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি: বিএনপি’র পক্ষে প্রবাসীদের ভোট পদ্ধতি নিয়ে অবস্থান তুলে ধরেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে কেবল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বিবেচনায় নিলে হবে না, এনআইডি’র পাশাপাশি পাসপোর্টও বিবেচনায় নিতে হবে। কেননা, অনেকের এনআইডি নেই। নজরুল ইসলাম খান বলেন, ২০১৪ সালে ইসি যখন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল, তখন আমরা প্রবাসীদের ভোটাধিকারের সুযোগের প্রস্তাব করেছিলাম। ২০১৭ সালের ভিশন-২০৩০, ২০২২ সালের ২৭ দফাতেও প্রবাসীদের ভোটের কথা বলেছি। ২০২৩ সালে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফাতেও বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। প্রবাসীদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়ার উদ্যোগের প্রতি বিএনপি’র পূর্ণ সমর্থন আছে। বিএনপি’র এই নেতা বলেন, সেমিনারে প্রবাসীদের ভোটিংয়ের তিন প্রস্তাব (অনলাইন, প্রক্সি ভোটিং ও পোস্টাল ব্যালট) উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা আমাদের দলে আলোচনা করে মতামত দেবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুনিয়ায় কোনো সিস্টেমই ফুল প্রুফ না। ফুল প্রুফ হলে সংস্কার, বিপ্লবের প্রয়োজন হয় না। আমরা বিবেচনা করবো, সবচেয়ে যেটা সহজ, বোধগম্য হবে, সবচেয়ে যেটা গ্রহণযোগ্য হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে, যেটা সবচেয়ে সাশ্রয়ী হবে, সেই প্রক্রিয়ার প্রতি আমরা সম্মত হতে পারবো বলে আশা করি।

প্রক্সির ত্রুটি তুলে ধরেছে জামায়াত: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আমরা ইসি’র সঙ্গে বৈঠকে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি এনেছিলাম। ইসি সে উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে গত ১৫ বছরে। ইসি’র প্রতি ট্রাস্ট অ্যান্ড কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলেছে। প্রক্সি ভোটের ত্রুটির বিষয়ে এই নেতা বলেন, এক্স একজনকে পছন্দ করে, ওয়াই আরেকজনকে পছন্দ করে। তাহলে এক্স-এর প্রক্সি যদি ওয়াইকে দেয়া হয়, তাহলে ভোটারের রায়ের সঠিক প্রতিফলন হবে না। এতে নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তনও হয়ে যেতে পারে। তবে দলীয় ফোরামে আলোচনার পরই পরবর্তীতে মতামত দেয়া হবে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে। কোনো অবস্থাতেই সিস্টেমকে ডেস্ট্রয় করা যাবে না।

প্রক্সি নিয়ে সন্দেহ এনসিপি’রও: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রবাসীদের ভোট দেয়ার আগ্রহ বেশ দেখছি। ইসি’র কাছে আমাদের প্রত্যাশা, পরিপূর্ণ এফোর্ট দিয়ে যেন তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারে। প্রক্সি ভোট হলে কোথাও কোথাও বেশি ভোট আসতে পারে। সেক্ষেত্রে এটা একটা থ্রেট হতে পারে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে ইসিকে মতামত জানাবো। তিনি বলেন, সবার যেন ট্রাস্ট থাকে, সেটা অনলাইন হোক, আর পোস্টাল হোক। প্রক্সি নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। সেটা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে জানাবো।
প্রক্সি ভোটে সিকিউরিটি চায় গণঅধিকার পরিষদ: গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাবো। প্রক্সি ভোটে দেখেছি যেটা, আমার মা একটি দলকে ভোট দেয়, আমার বাবা আরেকটি দলকে ভোট দেয়। এক্ষেত্রে প্রক্সির মাধ্যমে কী করে সিকিউরিটি নিশ্চিত করা যায়, সেটা ভেবে দেখতে হবে।

প্রক্সি ভোট বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, পাসপোর্টও বিবেচনায় চায় এবি পার্টি: এবি পার্টির শ্যাডো অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি আব্বাস ইসলাম খান বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের এনআইডি আছে। কিন্তু পশ্চিমা দেশে কিন্তু বেশির ভাগেরই পাসপোর্ট আছে। তারা মিশনে গিয়ে কেন এনআইডি নেবে। কাজেই পাসপোর্টও যেন অপশন রাখা হয়। তিনি বলেন, এনআইডি’র ডেটার নিরাপত্তা দিতে পারিনি। তাই অনলাইন ভোটিংয়ে পাবলিক ট্রাস্ট নিয়ে আসতে হবে। অনলাইনে যেহেতু হ্যাক করা যায়, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার এলে কী হবে, সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ছাড়া প্রক্সি ভোট বাংলাদেশের জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ। উন্নত বিশ্ব যেখানে পারছে না, আমাদের নাগরিকরা যেখানে সত্যিকার নাগরিক হতে পারেনি, সেখানে দলগুলো কিন্তু ফাঁকফোকর বের করে ফেলবে।

তিন পদ্ধতিতেই সুবিধা-অসুবিধা দেখছে সিপিবি: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম মেম্বার কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, অনলাইন, প্রক্সি ও পোস্টাল-তিনটি পদ্ধতিরই সুবিধা-অসুবিধা আছে। তবে দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তিনি বলেন, প্রবাসে দেড় কোটি ভোটার, এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে আছে। তাই সতর্কতার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। তাই ইসি’র উচিত দলগুলোকে আস্থায় এনে যেন কাজ করে।

অন্যান্য রাজনৈতিক দল যা বলেছে: নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার বলেন, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেন ভুল না হয়। আস্থা ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি। বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, তার দল প্রক্সি ভোটের পক্ষে। অনলাইন ভোটিং নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, আর পোস্টাল ব্যালট নিয়ে আগ্রহ নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বলেছে, তারা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত দেবে। জালিয়াতির সুযোগ থাকায় প্রক্সি ভোটের বিপক্ষে মত দিয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেস। সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রধান আবু লায়েন্স মুন্না বলেন, তার দল প্রক্সি ভোটিংয়ের পক্ষে নয়। বাংলাদেশ জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহজাহান আলী সাজু বলেন, তারা দলের ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাবে। বাংলাদেশ মুসলিম লীগের অতিরিক্ত মহাসচিব আকবর হোসেন পাঠান বলেন, প্রবাসীদের ভোট নেন, তবে আগে দেশের ভেতরে ভোট সুষ্ঠু করেন। দলটির সভাপতি কাজী আবুল খায়ের বলেন, প্রবাসীদের ভোটিং ব্যবস্থা নির্ধারণের পূর্বে দলগুলোর একমত হতে হবে যে ভুল হলেও মেনে নেবো।

এ ছাড়া সেমিনারে অংশ নেয়া এক প্রবাসীও প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতির বিপক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, এতে ভোটারের মতামত কার্যকর নাও হতে পারে। যেখানে নিজেকে বিশ্বাস করা যায় না, সেখানে অন্যকে বিশ্বাস করা কঠিন বলে মনে করেন তিনি। 

সিইসি বললেন- অন্তত যাত্রা শুরু হোক: আগামী নির্বাচনে ছোট পরিসরে হলেও প্রবাসীদের ভোটিং চালু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা পরবর্তী নির্বাচনে অন্তত শুরু করতে চাই, অন্তত যাত্রা শুরু হোক। প্রক্সি ভোট অনেক দেশ চালু করেছে, অনেক দেশ চালু করতে পারেনি। আমরা চালু করতে চাই, অন্তত সীমিত পরিসরে শুরু করতে চাই। প্রবাসীদের ভোট পদ্ধতি নির্ধারণে রাজনৈতিক দলের সমর্থন না পেলে ইসি’র সব উদ্যোগ বৃথা যাবে। অন্যদিকে সেমিনারের সমাপনী বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আপনারা অত্যন্ত মূল্যবান মতামত দিয়েছেন। আমরা অ্যাপ্রোপিয়েট পদ্ধতি বাছাইয়ের চেষ্টা করছি। ইনশাআল্লাহ আপনাদের মতামতকে গুরুত্ব দেবো। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আবার দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে মন্তব্য করে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দল হচ্ছে আমাদের প্রধান অংশীজন। ভবিষ্যতে আপনাদের দাওয়াত দেবো, আপনারা আসবেন। আপনাদের মতামতের জন্য এবং সর্বোপরি নির্বাচনের জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।
 

পাঠকের মতামত

এজন্যই তো বলি বাংলাদেশে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা বদলের পদ্ধতি বাতিল করা হোক। তার থেকে চীনের মতো শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হোক। এতে অর্থের সাশ্রয় হবে,খুনো খুনি, হানা হানি বন্ধ হবে,পরিবার তন্ত্রের অবশান হবে।

এমরান
৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ৫:১৯ পূর্বাহ্ন

প্রক্সি ভোট কেন? যেখানে পোষ্টাল ভোটের বিধান আছে। পোষ্টাল ভোট চালু করা হউক।

মিলন আজাদ
৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১২:১৫ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status