অর্থ-বাণিজ্য
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশকে বেছে নেয়ার আহ্বান ইয়াংওয়ান প্রধানের
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(১ সপ্তাহ আগে) ৭ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৯:৩৪ অপরাহ্ন

বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে ইয়ংওয়ান কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) ও টেক্সটাইল খাতের অগ্রদূত কিহাক সাং সোমবার সফররত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশকে তাদের ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্তর্র্বতী সরকার বিনিয়োগকারীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সত্যিকার অর্থেই আন্তরিক উল্লেখ করে তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশের এই নতুন প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে পারেন।’
কিহাক সাং বলেন, অতীতে অনেক সরকার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বর্তমান প্রশাসন খুবই কার্যকরভাবে কাজ করছে।
তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আনোয়ারায় কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (কেইপিজেড) বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
জমি সংক্রান্ত বিরোধের কথা উল্লেখ করে কিহাক সাং বলেন, ‘আমরা একটি কঠিন সময় পার করেছি এবং নতুন অন্তর্র্বতী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখন পরিস্থিতি ঠিক হয়ে গেছে।’ বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশকে খুব ভালোবাসি।’
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং নেদারল্যান্ডসের প্রায় ৭০ জন বিনিয়োগকারী কেইপিজেড পরিদর্শন করেছেন এবং সেখানকার কার্যক্রম দেখেছেন।’
কিহাক সাং এবং ইয়াংওয়ান বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জাহাঙ্গীর সাদাত আনোয়ারার কেইপিজেডে সফররত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানান।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও পোশাক খাতের অগ্রদূত ইয়ংওয়ান করপোরেশনের নির্মিত ও পরিচালিত কেইপিজেড শিল্প উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী সর্বোত্তম চর্চার প্রতিফলন ঘটায়।
এই অঞ্চলটি উচ্চ-প্রযুক্তি শিল্প উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এখানে ৭ মিলিয়ন বর্গফুট এলাকাজুড়ে ৪৮টি গ্রিন-সার্টিফাইড কারখানা রয়েছে এবং এখানে উন্নত লজিস্টিক্স ও ওয়ারহাউজিং সুবিধাও রয়েছে।
কেইপিজেড কর্ণফুলী টানেল হয়ে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের ড্রাইভে কর্ণফুলী নদীর বাম তীরে অবস্থিত।
২ হাজার ৪৯২ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এটি দেশের বৃহত্তম বেসরকারি মালিকানাধীন এবং পরিবেশবান্ধব রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল।
বিস্তৃত বনায়ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে, ইয়াংওয়ান একসময়ের অনুর্বর জমিকে সমৃদ্ধ সবুজ শিল্প অঞ্চলে রূপান্তর করেছে, যা পরিবেশ সংরক্ষণ এবং বিশ্বমানের পরিচালন ব্যবস্থা প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।
ডিপিএস আজাদ বলেছেন, কেপিজের ৫২% জমি সবুজ অঞ্চল এবং জলাশয়ের জন্য নির্ধারিত, যেখানে বিপুল পরিমাণ গাছ লাগানো হয়েছে।
কিহাক সুং বলেছেন, কেইপিজেড-এ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম তন্তু উৎপাদন কারখানা রয়েছে, যা ২ মিলিয়ন বর্গফুট এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এবং টেকসই উৎপাদন নিশ্চিতে সব কারখানায় বর্জ্য পানি শোধনাগার প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে।
সোমবার (৭ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের অংশ হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রাম সফর করছেন। কেইপিজেডের সুযোগ-সুবিধা দেখে তারা মুগ্ধ হয়েছেন। বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন।
আগামীকাল ৮ এপ্রিল বিদেশি অংশগ্রহণকারীরা আড়াইহাজারে অবস্থিত জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন।
রূপান্তরমুখী সুবিধা ও অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ পরিবেশকে উপস্থাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারী এবং শীর্ষ নির্বাহীদের আশ্রয় দিচ্ছে।
বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী এবং শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তাদের আতিথেয়তা জানাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে দেশের বিকাশমান বিনিয়োগ পরিবেশকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা হচ্ছে। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো দেশের নতুন সুযোগ এবং অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে তুলে ধরা, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে।
আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় বাংলাদেশের বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ সম্ভবনা নিয়ে আলোচনায় বসবেন বৈশ্বিক বিনিয়োগ নেতা, নির্বাহী কর্মকর্তা এবং শিল্পখাতের পথিকৃৎরা।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, আগামী ৯ এপ্রিল রাজধানীর একটি হোটেলে মূল অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে, এতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যোগ দেবেন।
বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটি একটি যৌথ প্রচেষ্টা। বেসরকারি খাত এবং দূতাবাস (ঢাকায় বিদেশি মিশন) সমানভাবে এতে অংশগ্রহণ করছে।’
তিনি আরও বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কথা শুনব, যাতে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ সম্পর্কে কী মনে করেন এবং কীভাবে বাংলাদেশ আরও উন্নতি করতে পারে সেই বিষয়ে তাদের মতামত জানতে পারি।
পাঁচটি কোম্পানি এবং ব্যক্তিকে তাদের অবদানের জন্য সম্মানিত করা হবে এবং একটি বিদেশি বিনিয়োগকারীকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
আশিক মাহমুদ বলেন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য আরও অনেক আয়োজন থাকবে এবং ভবিষ্যতে বিনিয়োগের দিকে নজর রেখে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য একটি বিশেষ স্থান থাকবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নাসার সঙ্গে অ-সামরিক মহাকাশ অনুসন্ধানের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ভাবছি। এটি স্বাক্ষরিত হলে আমরা বিস্তারিত জানাতে পারব।’