দেশ বিদেশ
যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজন করা সরকারের অগ্রাধিকার
স্টাফ রিপোর্টার
৫ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, জনগণকে আশ্বস্ত করেছি যে, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হলে আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করবো। গতকাল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালে লাখ লাখ সাধারণ নারী-পুরুষ, শিশু ও যুবক একটি নৃশংস সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসব্যাপী গণহত্যায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছিল। আমাদের জনগণ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত ও স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিল যেখানে প্রতিটি সাধারণ মানুষ তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। দুঃখজনকভাবে, গত পনেরো বছরে আমাদের জনগণ বিশেষ করে যুবসমাজ, ক্রমাগত তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা সংকুচিত হতে দেখেছে। তারা রাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের অবক্ষয় ও নাগরিক অধিকারের অবমাননা প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি বলেন, সাধারণ জনগণ একটি নৃশংস স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে প্রায় দুই হাজার নিরীহ মানুষ, যাদের বেশির ভাগই তরুণ এবং ১১৮ জন শিশু প্রাণ হারিয়েছে। ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তার ইতিহাসে এক নবজাগরণ প্রত্যক্ষ করেছে।
যেসব ছাত্রনেতা এই গণজাগরণে নেতৃত্ব দিয়ে শেখ হাসিনার দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরাচারী শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করেছে, তারা তাকে অনুরোধ করেছিল এই সংকটময় মুহূর্তে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে। তিনি বলেন, আমি আমাদের জনগণের স্বার্থে এই দায়িত্ব গ্রহণে সম্মত হয়েছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে তারা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বলিষ্ঠ ও সুদূরপ্রসারী সংস্কার গ্রহণ করবে। আমরা সুশাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই বিষয়গুলোই আমাদের পরিকল্পিত সংস্কারের মূল লক্ষ্য। সরকার ইতিমধ্যে বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছে, যাতে জনগণের মালিকানা, জবাবদিহিতা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা যায়। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ষষ্ঠ বিমসটেকের জন্য চারটি এজেন্ডা প্রস্তাব করেছেন। তিনি যুবসমাজের শক্তিকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বলেন, বাংলাদেশি তরুণরা সামনে থেকে এতটা ইচ্ছা এবং কর্মপ্রচেষ্টা দেখাচ্ছে এমনকি শাসনব্যবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী কিছু ধারণা সংস্কার করার জন্যও প্রস্তাব করেছে। ড. ইউনূস কৃষিকাজ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিশেষ করে এই অঞ্চলের বিশাল ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সম্পর্কিত ‘৪ আইআর’ সরঞ্জাম এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেছেন। সরকারপ্রধান বিমসটেক দেশ এবং সম্প্রদায়ের জন্য জ্ঞানের ক্ষেত্রে জোরালোভাবে জড়িত হওয়ার জন্য তাদের সম্পদ তৈরি, উদ্ভাবন এবং ভাগ করে নেয়ার জন্য সমস্ত উপায় উন্মুক্ত করার সুপারিশ করেছেন। তিনি এমন একটি ইকো-সিস্টেম প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব করেছেন যেখানে সরকার ছাড়াও অন্যান্য সংস্থাগুলো জনস্বাস্থ্য বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জলবায়ু অভিযোজন- জরুরি অবস্থা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিমসটেকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে পারে।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, সময় আমাদের পক্ষে নেই। আমাদের কেবল পরিবর্তন আনতে হবে না, রূপান্তর করতে হবে। এজন্যই বাংলাদেশ তিনটি শূন্যের বিশ্বকে এগিয়ে নিতে চায়: শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন। এ ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা বিমসটেক সদস্য দেশগুলোকে পারস্পরিক স্বার্থ ও সবার কল্যাণে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে উন্মুক্ত আঞ্চলিকতাবাদের স্বপ্ন লালন করে আসছে। আমরা এমন একটি অঞ্চলের স্বপ্ন দেখি, যেখানে সব দেশ ও জনগোষ্ঠী ন্যায্যতা, পারস্পরিক সম্মান, পারস্পরিক স্বার্থ ও যৌথ কল্যাণের ভিত্তিতে সম্পৃক্ত হতে পারে। তিনি বলেন, বিমসটেক অঞ্চল বিশ্ব জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের আবাসস্থল, যেখানে বহু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। এই চ্যালেঞ্জগুলোকে সম্ভাবনায় হিসেবে রূপান্তর করা গেলে সব দেশের জন্য বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, বিমসটেক সচিবালয় হোস্টিং করার মাধ্যমে বাংলাদেশ এই সংস্থার বিশাল সম্ভাবনাকে অর্থবহ উপায়ে কাজে লাগাতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, বিমসটেক অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যৌথভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সীমান্ত পেরিয়ে বিদ্যুৎ বাণিজ্য এবং জ্বালানি দক্ষতা ব্যবহারে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে আমাদের জনগণের জন্য একটি নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়। সরকারপ্রধান দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত ‘বিমসটেক গ্রিড ইন্টারকানেকশন চুক্তি’ জ্বালানি খাতে সহযোগিতার সূচনা পর্ব হতে পারে। আমরা আমাদের বিমসটেক অঙ্গীকার অনুযায়ী কানেক্টিভিটি বাড়াতে, পারস্পরিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য একটি মানবিক চ্যানেল স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সেখানে বাস্তুচ্যুতি বন্ধ করা যায়। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যের সামপ্রতিক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে রাখাইন রাজ্যে আসন্ন দুর্ভিক্ষের বিষয়ে ইউএনডিপি’র সতর্কবার্তার মধ্যে, রাখাইন থেকে আরও বাস্তুচ্যুতি বন্ধ করার জন্য জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে রাখাইনে একটি মানবিক চ্যানেল স্থাপন করা যেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের যদি মীমাংসা না হয়, তাহলে সমগ্র অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। বিমসটেক অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, বিশেষ করে রাখাইনের বিরোধপূর্ণ পক্ষগুলোর মধ্যে সমাধানের জন্য সংলাপ চালাতে পারে। সরকারপ্রধান বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে স্থায়ীভাবে প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে রাখাইনে স্থিতিশীলতা আনতে মিয়ানমারকে আরও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘রোহিঙ্গা মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি সম্পর্কিত উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন’-এ বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে। ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর কাছ থেকে এই সম্মেলনে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ আশা করে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ ১৩-১৬ই মার্চ বাংলাদেশে একটি ঐতিহাসিক সফর করেন এবং রোহিঙ্গাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার অধিকারের প্রতি সম্পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেন। সম্মেলনে থাই প্রধানমন্ত্রী এবং সম্মেলনের চেয়ারপার্সন পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, বিমসটেক মহাসচিব রাষ্ট্রদূত ইন্দ্র মনি পান্ডে এবং বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। শীর্ষ সম্মেলনের শেষে বাংলাদেশ আগামী দুই বছরের জন্য বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ।
আসিয়ানের সদস্য হতে থাইল্যান্ডের বিশিষ্টজনদের সমর্থন চাইলেন ড. ইউনূস: এদিকে আসিয়ানে বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়ে ঢাকার প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন দানের জন্য থাইল্যান্ডের বিশিষ্টজনদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি থাই বিশিষ্টজনদের উদ্দেশ্যে বলেন, আসিয়ানের খাতভিত্তিক সংলাপ অংশীদার হিসেবে যোগ দেয়ার পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের, তবে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো এই গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক গোষ্ঠীর পূর্ণ সদস্য হওয়া। গতকাল ব্যাংককের একটি হোটেলে থাই বিশিষ্টজনদের সঙ্গে এক প্রাতঃরাশ বৈঠকে ড. ইউনূস এ কথা বলেন। সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ বহুপাক্ষিকতায় বিশ্বাস করে এবং আমরা সার্ক ও বিমসটেকের গর্বিত সদস্য। তিনি বলেন, আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে আরও বেশি উদ্যোগ নেয়া উচিত। বৈঠকে থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অভিজিৎ ভেজ্জাজীবা, সাবেক এক উপ-প্রধানমন্ত্রী, শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ব্যাংকার, শিক্ষাবিদ এবং নাগরিক সমাজের নেতারাও অংশ নেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আশা করছে আসিয়ানের সদস্যপদ অর্জনে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াসহ আসিয়ানের শীর্ষ দেশগুলোর সমর্থন পাওয়া যাবে। প্রফেসর ইউনূস থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে আরও বৃহত্তর সহযোগিতার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, উভয় দেশ একইরকম ইতিহাস ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। আমরা যে ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই, এই বৈঠকের মাধ্যমে তার সূচনা হলো। প্রধান উপদেষ্টা সামপ্রতিক বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, বিশ্ব এই ‘বিশৃঙ্খল অবস্থা’কে তার সুবিধায় রূপান্তর করতে পারে। সরকারপ্রধান বলেন, বিশৃঙ্খলা অনেক কিছুকে নাড়িয়ে দিতে পারে। আমাদের আরও সহযোগিতা দরকার। আমরা একটি নতুন ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে ভাবতে পারি কি-না সে বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন তিনি। বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
বিমসটেক যুব উৎসব আয়োজনে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিমসটেক সচিবালয়কে সদস্য দেশগুলোর তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য ‘বিমসটেক যুব উৎসব’- আয়োজনের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলন শেষে সংস্থাটির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ইউনূস মহাসচিব ইন্দ্র মণি পান্ডেকে এ নির্দেশনা দেন। ভারতের সাবেক কূটনীতিক ইন্দ্র মণি সম্মেলনের শেষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংগঠনের ভবিষ্যৎ উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বিমসটেকের পরবর্তী সম্মেলন যখন দুই বছর পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে, তখন একটি আলাদা যুব সমাবেশ আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে। ড. ইউনূস বলেন, যখন বিমসটেক নেতারা একসঙ্গে মিলিত হবেন, তখন আমাদের একটি আলাদা যুব সমাবেশ আয়োজন করা উচিত। যাতে সদস্য দেশগুলোর তরুণরা একত্রিত হতে পারে।
ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতে থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার: বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য থাইল্যান্ডের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঢাকায় অবস্থিত থাই অ্যাম্বাসির যথেষ্ট ভিসা প্রসেস করার সক্ষমতা না থাকায় দীর্ঘ সময় বাংলাদেশিদের থাইল্যান্ড ভ্রমণে অপেক্ষা করতে হয়। তিনি বলেন, থাইল্যান্ডে যেসব বাংলাদেশি চিকিৎসা নিতে চান তারাও ভিসা পেতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হন। জবাবে থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বিষয়টি দেখবেন বলে প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, জাহাজ চলাচল ও সামুদ্রিক সম্পর্ক এবং বিমান যোগাযোগ সম্প্রসারণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট চালু করা গেলে দুই দেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে সময় কমে আসবে। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা একদশক আগের এয়ার এশিয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও থাইল্যান্ডের পর্যটন শহর চিয়াং মাইয়ের মধ্যকার ফ্লাইট চলাচলের প্রভাবের কথা স্মরণ করেন। থাই প্রধানমন্ত্রী বিমসটেকের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করায় প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানান। বলেন, বাংলাদেশের নেতার দায়িত্ব গ্রহণে আঞ্চলিক এ জোটে গতিশীলতা সঞ্চার হবে।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত পেতে শ্রীলঙ্কার সহায়তা চাইলেন ড. ইউনূস: এদিকে বিমসটেক সম্মেলনের সাইড লাইনে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিণী আমারাসুরিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ দু’টির মধ্যে বাণিজ্য ও সহযোগিতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন। এ সময় শ্রীলঙ্কান প্রধানমন্ত্রী তাদের দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়ার বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। বলেন, শ্রীলঙ্কান সংসদ এসব ফেরত আনার জন্য নতুন একটি আইন অনুমোদন করেছে। প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিলিয়ন ডলারের অর্থ ফেরত আনতে শ্রীলঙ্কার সহায়তা প্রত্যাশা করেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ড. ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক: ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। এ সময় দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এ সময় দুই নেতা দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ দু’টির মধ্যকার বাণিজ্য ও যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন। প্রধান উপদেষ্টা শেরিং তোবগেরের প্রতি আহ্বান জানান যেন তিনি আগামী সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ইনভেস্টমেন্ট সামিটে তার দেশের ইনভেস্টরদের পাঠানো হয়। এ সময় তারা কুড়িগ্রামে অবস্থিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভুটানের জন্য নির্ধারিত এলাকার অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা করেন।
এদিকে ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলন শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরেছেন। গতকাল স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডে পৌঁছানোর পর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকসহ অনেকগুলো ইভেন্টে অংশ নেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।
পাঠকের মতামত
এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হলে ভালো হয় ।