প্রথম পাতা
ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ঘোষণা
স্টাফ রিপোর্টার
২৮ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার
২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিতর্কিত নির্বাচনের ফল বাতিল করে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল-১৫ এর (যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত) বিচারক মো. নুরুল ইসলাম এই রায় ঘোষণা করেন। ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে ওই নির্বাচনের ফল বর্জন করেছিল বিএনপিসহ অন্যান্য দল। আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রিত এই নির্বাচনের আগেই অনেকটা ফল নির্ধারিত হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য প্রার্থীদের প্রচারণারই সুযোগ দেয়া হয়নি খুব একটা। আওয়ামী লীগের জমানায় হওয়া ভোটারবিহীন অন্যান্য নির্বাচনের মতোই ঢাকার এই নির্বাচন ছিল সরকারের সাজানো ছকে। নির্বাচনের অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাসময়ে আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তা নিষ্পত্তির কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
২০২০ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নিয়ন্ত্রিত ওই নির্বাচনে চার লাখ ২৪ হাজার ভোট পান তাপস। ইশরাক পেয়েছিলেন দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। এরপর ওই বছরের ২৭শে ফেব্রুয়ারি সেই নির্বাচনে ঢাকার দুই সিটির নব-নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা শপথ নেন। গত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিতদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। যদিও এর আগেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিতর্কিত নির্বাচনে হওয়া মেয়র-কাউন্সিলরদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়।
আদালতের রায়ের পর ইশরাক হোসেনের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনাল নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণা করে সরকারের জারি করা গেজেট বাতিল করে দেন। একই সঙ্গে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে দায়িত্ব গ্রহণ করতে কোনো বাধা নেই। নতুন করে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
গতকাল রায় ঘোষণার সময় বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, মহান আল্লাহ’র দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমি মেয়র হতো পারবো বা মেয়র হিসেবে শপথ নেবো কিনা সেটা সম্পূর্ণ দলীয় বিষয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ফিরে আসুক। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার পতনের পর সাধারণ মানুষ যে ন্যায়বিচার পায়, সেটার ধারা শুরু হচ্ছে বা শুরু হয়েছে। এই ধারাটা অব্যাহত থাকুক। বাংলাদেশের সর্বস্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা আমাদের মূল উদ্দেশ্য। নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ধানের শীষ প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। সেই নির্বাচনে দিনদুপুরে ভোট ডাকাতি হয়েছিল। নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকেই আমরা অভিযোগ দিয়ে আসছিলাম। তখন আমাদের প্রচারণাকে বিভিন্নভাবে বাধা দেয়া হয়েছিল। তখনকার বিএনপি’র সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিনা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। আমাদের প্রচারণার মাইক ভাঙচুর করা হয়েছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। ইশরাক বলেন, প্রচারণার শেষ পর্যায়ে আমার মিছিলে হামলা করে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে। নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি ও ভোট কারচুপি করা হয়। আমরা তখন মামলা করেছিলাম। সবকিছু আইনগতভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
ইশরাক হোসেনের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের প্রার্থী ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা করা হয়, ইভিএম মেশিনে ভোট জালিয়াতি করা হয়, নির্বাচনে ভোটারদের ভোটগ্রহণে বাধা দেয়া হয়, নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি করা হয়। এতসব জালিয়াতির পরেও নির্বাচন কমিশন শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণা করে।
নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ৩রা মার্চ ইশরাক হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ মোট আটজনকে বিবাদী করা হয়েছিল। আদালত পূর্ণাঙ্গ শুনানি নিয়ে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করেছেন। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারেন সংক্ষুব্ধ প্রার্থী বা তার মনোনীত ব্যক্তি। মামলার পর ১৮০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করার নিয়ম থাকলেও ইশরাকের ক্ষেত্রে সময় লাগলো পাঁচ বছর।
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট হতে পারে ঈদের পর: ইসি সচিব
ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ঘোষণা করে ঈদের পর গেজেট প্রকাশ হতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার আহমেদ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি এই তথ্য জানান। ইসি সচিব বলেন, আদালতের রায় পাওয়ার পর আমরা গেজেট প্রকাশ করার বিষয়ে ভাববো। সেক্ষেত্রে ঈদের পর হতে পারে। তিনি বলেন, আদালতের রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আইন বিধি অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেবো। রায়ের কপি পাওয়ার পরে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেবো।