ঢাকা, ২ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

ভূমিকম্পে মিয়ানমারে ধ্বংসযজ্ঞ

মৃত্যু ১০০০ ছাড়ালো

মানবজমিন ডেস্ক
৩০ মার্চ ২০২৫, রবিবারmzamin

ভূমিকম্পে মিয়ানমার যেন মৃত্যুপুরী। শুক্রবারের প্রলয় সৃষ্টিকারী এই ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে এক হাজার। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। শুধু মিয়ানমারই নয়, থাইল্যান্ডসহ প্রতিবেশী বেশ কয়েকটি দেশেও এই কম্পন বড় রকম প্রভাব ফেলেছে। প্রতিবেশী থাইল্যান্ডে নিহতের সংখ্যা দেড় শতাধিক। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে। এই শহরটি ভূমিকম্পের উৎসস্থলের একেবারে কাছে। ঘটনার পর থেকে উদ্ধারকর্মীরা অবিরাম মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে জীবিতদের সন্ধান করছেন। অসংখ্য মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন। তাদের পরিণতি কী হয়েছে- তা কেউ জানেন না। একজন উদ্ধারকর্মী মান্দালয় থেকে বিবিসিকে বলেছেন, তারা খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে একটি হাইরাইজ ভবন ধসে পড়েছে। ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। সেখানেও উদ্ধার অভিযান চলছে। সেই ধ্বংসস্তূপের নিচে প্রায় ১০০ শ্রমিক আটকা পড়ে আছেন। তাদের কোনো খোঁজ মিলছে না। সেখানে মারা গেছেন কমপক্ষে ৬ জন। পরিস্থিতির শিকার হয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় ন্যূব্জ দেশটির অর্থনীতি এবং শাসকরা দৃশ্যত একঘরে হয়ে আছেন। এমন অবস্থায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া শাসকদের পক্ষ থেকে সহায়তা চাওয়ার ঘটনাও বিরল। দেশটি সেনাবাহিনীর কঠোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাছাড়া আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন নাগরিক সমাজের মধ্যে অক্ষমতার কারণে সেখানে আসলে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা বোঝা খুবই কঠিন। বিভিন্ন দেশ থেকে এরই মধ্যে ত্রাণ সহায়তা পাঠানো শুরু হয়েছে।

নিরাপদ আছেন সুচি 
ভয়াবহ ভূমিকম্প মিয়ানমারকে তছনছ করে দিয়েছে। ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে সেখানে শুক্রবার নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০০২ জন। এই সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। কারণ, যেসব মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছিলেন, তাদের অনেককে উদ্ধার করা হচ্ছে মৃত অবস্থায়। তবে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী বলে পরিচিত অং সান সুচি নিরাপদে আছেন। জেল কর্তৃপক্ষের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বিবিসিকে বলেছেন, সুচি অক্ষত আছেন। রাজধানী  নেপিড’তে অবস্থিত একই জেলের অন্যরাও নিরাপদে আছেন। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের শুরুতে ১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন অং সান সুচি। তারপর থেকেই তিনি জেলে আছেন। ২০২৩ সালে তাকে জেল থেকে গৃহবন্দি করা হয়। পরে আবার রাজধানীতে একটি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। 

বুকফাটা আর্তনাদ নারুয়েমোলের
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক। সেখানে ধসে পড়েছে বহুতল একটি ভবন। তার কয়েক মিটার দূরেই একটানা কেঁদে চলেছেন এক নারী। তিনি বলছেন, তাকে আমি একবার দেখতে চাই। সে কি অবস্থায় আছে আমি জানতে চাই। এই নারীর নাম নারুয়েমোল। তার ৪৫ বছর বয়সী স্বামী ওই ভবনটির নির্মাণকাজে যোগ দিয়েছিলেন। শুক্রবারের ভূমিকম্পে ভবনটি ধসে পড়েছে। তার নিচে চাপা পড়েছেন নারুয়েমোলের স্বামী। এ খবর জানার পর তিনি বুকফাটা আর্তনাদে চিৎকার করছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার স্বামীর কোনো খোঁজ মেলেনি। তবু তিনি আশা ছাড়েননি। মনে করছেন, এখনও তার স্বামী বেঁচে আছেন এমন অন্তত একটি খবর পাবেন। চিৎকার করে তিনি বলছেন, সে ছিল পুরো পরিবারের আয়ের উৎস। তার আর্তনাদের সঙ্গে সমানতালে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসাবশেষ সরাচ্ছিল মেশিন। উদ্ধারকর্মীরা ইট-লোহার বিশাল বিশাল চাঁই সরাচ্ছিলেন। 

‘মুহূর্তেই পুরো বাড়ি ধসে পড়লো আমার ওপর’
ভূমিকম্পের সময় মিয়ানমারের মান্দালয়ের একজন অধিবাসী অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন কী ঘটেছিল শুক্রবার। তার ভাষায়- ভূমিকম্পের সময় বাথরুমে ছিলাম। আকস্মিক পায়ের তলায় সবকিছু ভয়াবহভাবে দুলতে থাকে। কমপক্ষে ১০ সেকেন্ড দুলতে থাকে। পুরো বাড়িটা আমার চোখের সামনে ধসে পড়ে। বাড়িটা ধসে পড়ার আগে আমি পিঠের ওপর ভর করে শুয়ে পড়লাম। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ পরে সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করি। আমার পিতা ও এক চাচা এসে উদ্ধার করেন আমাকে। ৫ থেকে ৬ জন তাদের সঙ্গে যোগ দেন। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধারের কয়েক সেকেন্ড পরেই আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত করে। আমাদের ভবনটি আরও ধসে যেতে লাগলো। ভয়ে শুকিয়ে গেলাম। বেদনায় মুষড়ে পড়লাম। হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেললাম। আমার পিতা আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেলেন। আমাদের বাড়িতে সাতজনের বসবাস। তার মধ্যে আমার দুই আন্টিকে উদ্ধার করা হয়েছে আমার সঙ্গে। তার একজন মারা গেছেন। অন্যজন হাসপাতালে। আমার দাদা, চাচি ও চাচাদের এখনও পাওয়া যায়নি। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন তারা। তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা শতকরা শূন্য ভাগ। এ সবই ঘটে গেছে আমার চোখের সামনে। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status