ঢাকা, ৩১ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ১৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতোই প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিল ডাকাতদল

স্টাফ রিপোর্টার
২৮ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার

রাজধানীর ধানমণ্ডিতে র‌্যাবের পোশাক পরে কথিত অভিযানের নামে ডাকাতির চেষ্টা করা দলটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আদলে প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে যায়। বুধবার ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে ধানমণ্ডি ৮ নম্বর সড়কের এম এ হান্নান আজাদ নামে ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাসায় ডাকাতির সময় ২৫ থেকে ৩০ জনের সংঘবদ্ধ চক্রের কাছে র‌্যাবের পোশাকের পাশাপাশি ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট, সোর্স হিসেবে ভুয়া ছাত্র প্রতিনিধি এবং বুম হাতে পরিচয় দেয়া ভুয়া মিডিয়ার লোকও ছিল। অপারেশন পরিচালনার জন্য পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে ধরনের প্রিপারেশন নিয়ে যায়, সে ধরনের ফুল প্রিপারেশন তাদের ছিল। গতকাল ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিএমপি রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মাসুদ আলম।

তিনি বলেন, ডাকাতির শিকার ধানমণ্ডি ৮ নাম্বার রোডের ওই বাড়িটি ‘অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স’-এর মালিক এম এ হান্নান আজাদের। বাড়িটির নিচতলায়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস আছে। এ ছাড়া ওই বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি কনসালটেন্সি অফিস এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে। বুধবার ভোর পাঁচটার দিকে ডাকাত দলটি তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকারে বাসার সামনে এসে গেটে নিরাপত্তা কর্মীদের বলে- তারা র‌্যাবের লোক। তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তারা বাড়িতে অভিযান চালাবে বলে তাড়াতাড়ি গেট খুলতে বলে। তাদের কয়েকজনের গায়ে র‌্যাব লেখা কটি পরা ছিল। সে সময় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে। তখন অভিযুক্ত ডাকাতরা সিকিউরিটি গার্ডদের গালাগালি করতে থাকে এবং গেট না খুললে তাদের হত্যার হুমকি দেয়। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন গেটের উপর দিয়ে উঠে জোর করে গেট খুলে ফেলে। এরপর তারা সবাই জোর করে বাড়িতে ঢুকে সিকিউরিটি গার্ড, কেয়ারটেকার ও গাড়িচালককে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। ব্যবসায়ীর বাসায় স্বর্ণ থাকতে পারে ধারণা করে ডাকাত দলটির টার্গেট ওই বাসা থাকলেও তারা নিচতলায় এস এম সোর্সিংয়ের অফিস থেকেই তল্লাশির নামে লুটপাট শুরু করে। নিচতলার অফিসের গেট ভেঙে পিয়নকে মারধর করে এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে ৪৫ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর ডাকাতরা তাকে ভয়তীতি দেখিয়ে তৃতীয় তলায় গিয়ে এস এম সোর্সিংয়ের অফিসের গেট ভেঙে ফেলে। এ সময় গেট ভাঙার শব্দ পেয়ে চতুর্থ তলায় থাকা এস এম সোর্সিংয়ের তিনজন অফিস সহকারী তৃতীয় তলায় নেমে আসেন। ডাকাতরা তখন তাদেরকেও আটক করে মারধর করে অফিসের চাবি ও বাসার চাবি দিতে বলে। এরপর তারা চাবি নিয়ে তৃতীয় তলার অফিসের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে অফিসের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ২২ লাখ টাকা লুট করে নেয় ও অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তাদের আরেকটি দল চতুর্থ তলার অফিসে ঢুকে আলমারি ভেঙে নগদ ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়। সবশেষে বাড়ির মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বাসা থেকে দেড় লাখ টাকা, স্বর্ণের কানের দুল ও চেইনসহ আনুমানিক আড়াই ভরি স্বর্ণ লুট করে নেয়। এরপর তারা মালিক এম এ হান্নানকে জোর করে নিচে নামিয়ে গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করে।

এসবের মধ্যে কেউ একজন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে খবর দিলে নিকটস্থ পুলিশের টহল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে ডাকাতদলের লোকজন পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ডাকাতদলের সদস্যদের হাতাহাতিও হয়। এতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হন। তখন আশপাশে থাকা লোকজনের সহায়তায় পুলিশ ফরহাদ বিন মোশারফ (৩৩), ইয়াছিন হাসান (২২), মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩), ওয়াকিল মাহমুদ (২৬) নামে চারজনকে আটক করে ফেলে। আর ডাকাতদলের বাকি সদস্যরা গাড়িতে করে পালিয়ে যায়। পরে ওই ব্যবসায়ীর ভাগ্নে তৌহিদুল ইসলামের করা একটি মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পরিপ্রেক্ষিতে রাতে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি গাড়িসহ আবদুল্লাহ ও সুমন নামে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিসি মাসুদ আলম বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ছয় জনের বাইরে যারা আছে শিগগিরই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো বলে আশা করছি। তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে, রিমান্ডে এনে এসব তথ্য ক্রসচেক করবো। যেহেতু ২৫-৩০ জনের মতো একটা টিম কাজ করেছে, তাই বাকিদের গ্রেপ্তারের সুবিধার্থে কিছু তথ্য আমরা পরে ডিসক্লোজ করতে চাচ্ছি। 

এ সময় ডিএমপি’র গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, যাদের সহায়তায় ঘটনাস্থলে চার ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন পাঁচ জনকে আর্থিক পুরস্কার দেয়াসহ অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
 

পাঠকের মতামত

Very much alarming for the city dwellers. Community awareness and preparedness must come in effect with joint collaboration of law enforcers.

habibur rahmans khan
২৮ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার, ৯:২০ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status