বিশ্বজমিন
শ্রীলঙ্কা ইস্যুতে উদ্বেগ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের
মানবজমিন ডেস্ক
(২ বছর আগে) ৩ আগস্ট ২০২২, বুধবার, ৭:৫৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

রাজনৈতিক সংস্কার এবং দেশের অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার দাবিতে আন্দোলনরত কর্মীদের জরুরি অবস্থা ব্যবহার করে হয়রান ও খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার করছে শ্রীলঙ্কা সরকার। দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ কথা বলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা আরও বলেছে, গত ২১শে জুলাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন রণিল বিক্রমাসিংহে। তখন থেকেই বিক্ষোভকারী, নাগরিক সমাজের অধিকারকর্মী, আইনজীবী এবং সাংবাদিকদেরকে ভীতি প্রদর্শন, নজরদারি করে এবং খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমন করছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, রাজধানী কলম্বো ও দেশের অন্যান্য স্থানে সরকারবিরোধী প্রতিবাদে তখনকার প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তারপর ১৫ই জুলাই তিনি পদত্যাগ করেন।
এরপর ২২শে জুলাই দায়িত্বে আসেন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহে। তিনি বিক্ষোভকারীদের তাড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। তাদেরকে কলম্বোর মূল প্রতিবাদস্থল থেকে উঠিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপরই পুলিশ বিক্ষোভের নেতাদের গ্রেপ্তার ও আটক করতে শুরু করে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালাচ্ছে শ্রীলঙ্কা সরকার। দেশটির অর্থনৈতিক সংকট সমাধান হওয়ার বিষয় থেকে দৃষ্টি সরাতে এক্ষেত্রে দৃশ্যত ভুলপথে এবং বেআইনি উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের পরিষ্কার হওয়া উচিত যে, দেশটিতে যে অর্থনৈতিক সমস্যা গভীরে শিকড় গেড়ে আছে তা সমাধানে যথার্থ সম্মানজনক প্রশাসনিক কাজ করা উচিত।
কলম্বোতে জনতার মূল বিক্ষোভের স্থানে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা অভিযান চালায় ২২শে জুলাই। এদিন কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়। এক্সপোজার নিউজের তিনজন সাংবাদিককে অপদস্ত ও প্রহার করে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। তারা হলেন চতুরঙ্গ প্রদীপ কুমারা, রাসিকা গুনাওয়ার্ধনা এবং শাবির মোহাম্মদ। একই অবস্থার শিকার হন বিবিসির সাংবাদিক জরিন স্যামুয়েল। নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিদেশী কূটনীতিকদের সমালোচনাকে অবহেলা করেন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহে। এর জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন বেশ কিছু বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং খ্রিস্টানদের ধর্মীয় নেতা। মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ক্যাথোলিক যাজক ফাদার জীওয়ান্থা পেইরিসের বিরুদ্ধে কলম্বো ম্যাজিস্ট্রেটস কোর্ট ২৫শে জুলাই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর দু’দিন পরে পুলিশ তার চার্চে অভিযান চালায় এবং জানায় যে, তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ আছে। যাজককে টার্গেট করার নিন্দা জানিয়ে ৩১শে জুলাই বিবৃতি দেয় ওই সম্প্রদায়ের ১৬৪০ জন ধর্মীয় নেতা। ২৬ শে জুলাই কর্তৃপক্ষ সুপরিচিত আরেকজন বিক্ষোভকারী দানিজ আলিকে গ্রেপ্তার করে। তিনি কলম্বো থেকে আন্তর্জাতিক একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়ছিলেন। এ সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৭শে জুলাই বেসামরিক পোশাকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা সাবেক ছাত্র অধিকার আন্দোলনকারী এবং সাংবাদিক বীরাঙ্গা পুষ্পিকাকে অপহরণ করে। তাকে কোথায় রাখা হয়েছে সে বিষয়ে পুলিশ মুখ খোলেনি।
বিক্ষোভকারীরা এর আগে প্রেসিডেন্টের বাসভবন দখলে নিয়েছিল। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট হয়। এমন বিপুল পরিমাণ অর্থ পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার পর চার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আইনজীবীদের সাক্ষাতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। এ দাবি করেছেন মানবাধিকার বিষয়ক কর্মীরা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে আইনজীবীরা ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, তাদেরকে ক্রমবর্ধমান হারে ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। সহিংসতার হুমকি দেয়া হচ্ছে। নজরদারির কথা বলা হচ্ছে। এমনি এক ঘটনায় অনলাইন প্রতিষ্ঠান এক্সপোজার নিউজের অফিস পরিদর্শনে যায় পুলিশ পরিচয়ে সাধারণ পোশাকের একটি গ্রুপ।
৩১শে জুলাই একজন প্রতিবাদকারী ছাত্র ফেসবুকে দেয়া পোস্টে বলেছেন, তাকে আটক করে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা তিন ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাকে সতর্ক করেছে। বলেছে, তারা তার কাছে মাদকের মজুদ দেখিয়ে গ্রেপ্তার করতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্মী রথিদু সেনারত্না, যিনি রাত্তা নামেও পরিচিত, তাকে ১লা আগস্ট সমন পাঠায় পুলিশ। এদিনই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে গ্রেপ্তার দেখায় তারা। সে ও অন্য ১১ জনের বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কলম্বোর একজন ম্যাজিস্ট্রেট। ২রা আগস্ট কর্তৃপক্ষ বৃটিশ নাগরিক কেলি ফ্রাসারের পাসপোর্ট জব্দ করে। তিনি বিক্ষোভের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহের ব্যক্তিগত বাড়িতে ৯ই জুলাই অগ্নিসংযোগের অভিযোগে কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার করেছে কমপক্ষে ৭ জনকে। অধিকারকর্মীরা বলছেন, এর মধ্যে কমপক্ষে এমন কিছু ব্যক্তি আছেন, যারা পথচারী। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের খাবার সরবরাহ করেছিল এমন একটি হোটেলের বিষয়েও তদন্ত করছে পুলিশ। সেখানে রেইড দিয়েছে তারা। তবে তাদের হাতে কোনো ওয়ারেন্ট নাই।
অপহরণ, গ্রেপ্তার, ভীতি প্রদর্শন এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার ১৭৫ জন মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের সংগঠন।