বিনোদন
নতুন ভোরের সুরের তিরন্দাজ মানিক
স্টাফ রিপোর্টার
২১ জানুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার৫ই আগস্ট ২০২৪, বাংলাদেশে অভূতপূর্ব এক গণ-অভ্যুত্থানে চমকে ওঠে গোটা পৃথিবী। ছাত্র-জনতার রক্ত, অঙ্গহানি, অন্তর্ধান এবং আহত শরীরের বিনিময়ে আসে নতুন সকাল। তবে, এই সকাল নির্মাণে প্রায় দুই দশক ধরে সংগীতাঙ্গনে লড়াই করছেন হাতেগোনা কয়েকজন শিল্পী। আগুনের জুতো পায়ে হেঁটে চলা সেই সব শিল্পীর মধ্যে অন্যতম আমিরুল মোমেনীন মানিক। তিনি ইতিমধ্যে জীবনমুখী গানের শিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ এবং ভারতের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রায় দুই দশক ধরে গান, লেখালেখি ও সাংবাদিকতার মাধ্যমে জাগরণ তৈরির নিরন্তর চেষ্টা করছেন মানিক। ২০১৪ সালে জীবনমুখী গানের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তীর সঙ্গে গাওয়া ‘আয় ভোর’ শিরোনামের গানটি আলোড়ন তৈরি করে। এরপর যৌথভাবে প্রকাশিত হয় সচেতনতামূলক গান ‘নীল পরকীয়া’। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নচিকেতার সঙ্গে প্রকাশিত হয় আরেক জাগরণী সংগীত ‘সকাল হবে কি?’। গণ-অভ্যুত্থানের বুনিয়াদ তৈরিতে গানটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জোগায়। মানিকের কথা-সুরে এবং নচিকেতার সহযোগে গাওয়া এ গানের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের রাজনৈতিক মুক্তির বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দেয়া হয়। এর আগে জনজীবনের নানা অসঙ্গতি ও দুর্ভোগ নিয়ে কণ্ঠশিল্পী আগুনের সঙ্গে প্রকাশিত মানিকের ‘মা গো তুমি কেমন আছো?’ শিরোনামের গান প্রকাশ হয়। ২০১১ সালে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ফেলানী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে শিল্পী হিসেবে প্রথম সোচ্চার হন মানিক। তিনি লিখেন- ‘সীমান্ত প্রহরী’ শিরোনামের গান। গানটি বিজিবি’র সৈনিকদের কাছে অঘোষিত থিম সংয়ে পরিণত হয়। ২০২০ সালে মানিকের কথা এবং হাবিব মোস্তফার সুরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়ের ‘আগুনের জুতো পায়ে হাঁটছি’ শিরোনামের গান বোদ্ধামহলে সাড়া ফেলে। নানা প্রতিবন্ধকতা, রক্তচক্ষু এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বৈষম্যের শিকার হয়েও মানিক থেমে থাকেননি। একের পর এক গানের মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় খায়রুল বাবুইয়ের কথায় ‘মানুষ কবে মানুষ হবে?’, নচিকেতার কথায় ‘তুমি কোন পার্টির লোক’ গান প্রকাশিত হয়। দু’টি গানেই মানুষের বিবেকহীনতা এবং রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কঠোর শব্দমালা উচ্চারিত হয়। ২০২১ সালে রাষ্ট্রীয় জুলুমের বিরুদ্ধে তার ‘জাগো’ শিরোনামের গান প্রকাশ হলে বিভিন্ন পক্ষ থেকে হুমকির সম্মুখীন হন মানিক। পরের বছর প্রকাশ হয় তার স্ট্যান্ডবাই সং ‘মধ্যবিত্ত চুচু ভাই’, ফেসবুকে ভাইরাল হয় এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠে। ৫ই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে পুনরায় শুরু হয় ষড়যন্ত্র। এ সময় মানিক গেয়ে ওঠেন, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ/তিতুমীর থেকে আবরার, প্রেরণা দেয় বারবার’। ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে নিজের সাঙ্গীতিক লড়াই নিয়ে আমিরুল মোমেনীন মানিক বলেন, ৫ই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত করতে গত দুই দশক ধরেই নানা অঙ্গনে নানাভাবে বুনিয়াদ তৈরির কাজ করতে হয়েছে। সংগীতে সময়কে ধারণ করতে গিয়ে মানুষের পক্ষে থাকার অব্যাহত চেষ্টা করেছি। গানের কথা ও সুরের নানা অনুষঙ্গ দিয়ে একদিকে মানুষের মধ্যে জাগরণ তৈরি এবং অন্যদিকে নিপীড়কদের প্রতি ঘৃণা ও দ্রোহ উচ্চারণ করার কাজটি আমরা সার্থকভাবে করতে পেরেছি- এটাই বড় সফলতা।
কিংবদন্তীতুল্য কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর 'ছাত্রবেলার প্রেম' শিরোনামে একটি গান গেয়েছিলেন, যেটার সুরকার ছিলেন মানিক। আমি বহুবার শুনেছি গানটি। ❤️