বাংলারজমিন
কুমিল্লায় অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না গুলিবিদ্ধ দুই শিক্ষার্থী
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার
কুমিল্লার দাউদকান্দিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ কলেজছাত্র ইয়াছিন হাজারী (১৭) ও নাহিদ মুন্সী (১৮) অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এলাকাবাসীর সহায়তায় ও নিজেদের চেষ্টায় তারা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি। ইয়াছিন হাজারী দাউদকান্দির সুখীপুর গ্রামের আবদুল কাদের হাজারীর ছেলে। আর নাহিদ মুন্সী উপজেলার ষোলপাড়া গ্রামের মৃত মুজিবুর রহমান মুন্সীর ছেলে। গত ৪ঠা আগস্ট দুপুরে দাউদকান্দির শহীদনগর এলাকায় আন্দোলনরত অবস্থায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে তারা গুলিবিদ্ধ হন। ইয়াছিন স্থানীয় হাসানপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ও নাহিদ দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন।
গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন হাজারী জানান, আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। ৪ঠা আগস্ট গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে প্রথমে দাউদকান্দি সদরের এ্যাপোলো হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু সরকারি কোনো হাসপাতালে সেভাবে চিকিৎসা পায়নি। পরে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। টানা ৪১ দিন চিকিৎসার পর তিনি হাঁটতে শুরু করেন। তার গুলিবিদ্ধ পায়ে এখনো ব্যথা করে। অর্থাভাবে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি।
ইয়াছিনের বাবা আবদুল কাদের হাজারী বলেন, দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন তিনি। তিন মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। করোনা মহামারি শুরুর পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। এরপর অনেক চেষ্টা করেও আর বিদেশে যেতে পারেননি। দেশে প্রথমে দোকান, পরে ভুট্টার ব্যবসা ও গরু লালন-পালনের চেষ্টা করেছেন। কোথাও সফল হতে পারেননি। বর্তমানে বসতবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। বেকার জীবনযাপন করছেন। ছেলের গুলিবিদ্ধ পা এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। টাকার অভাবে এখন আর চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ইয়াছিনের বোন রুপা আক্তার বলেন, একমাত্র ছোট ভাই পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। টাকার অভাবে এখন চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের কাছে ছোট ভাইয়ের চিকিৎসায় সহযোগিতা কামনা করছেন।
অন্যদিকে নাহিদ হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে প্রথমে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু ৫ই আগস্ট বিকাল পর্যন্ত তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়নি। নিরুপায় হয়ে স্বজনেরা তাকে রাজধানীর ধানমণ্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় করে দুই মাসের বেশি সময় চিকিৎসা দেয়া হয়। টাকার অভাবে এখন আর চিকিৎসা করাতে পারছেন না। গত মঙ্গলবার তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নেয়া হয়। নাহিদের মা নার্গিস বেগম বলেন, নাহিদের বাবা দীর্ঘ ১৬ বছর অসুস্থ থাকার পর গত বছর মারা যান। তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে ৩০ লাখ টাকা ঋণ করেছেন। নাহিদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে টাকা ধার করে নাহিদের চিকিৎসা করিয়েছেন। বর্তমানে কেউ তাদের ঋণও দিচ্ছে না। উল্টো ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন। তার চিকিৎসায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন তিনি।