বাংলারজমিন
পুলিশের গুলিতে চোখের আলো হারানো দিশাহারা মাসুদের পরিবার
পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
১৩ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার
বাবা অসুস্থ। একমাত্র ছেলে মাসুদ। চার সদস্যের পরিবারের ভরণ-পোষণ মাসুদের ওপরই। ট্রাক চালানোর আয়ে চলতো পরিবার। এক চোখ হারিয়ে মাসুদ এখন অসুস্থ। দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে ট্রাক চালাতে পারছেন না। কবে পারবেন- সেটাও অনিশ্চিত। এতে মাসুদের পরিবারে দেখা দিয়েছে আর্থিক সংকট। একমাত্র ছেলের এমন অবস্থায় পরিবারও এখন অন্ধকার দেখছে। মাসুদ মিয়া (২৪) কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চরকাওনা মুনিয়ারীকান্দা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে। পেশায় একজন ট্রাকচালক। গত ২০শে জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পাকুন্দিয়া পৌরসদরে পুলিশের ছররা গুলিতে মাসুদের বাম চোখের আলো নিভে গেছে। এক চোখে তিনি এখন আর দেখতে পান না। জানা গেছে, গত ২০শে জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন মাসুদ। এ সময় ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ ছররা গুলি চালায়। এতে তার চোখে ও মুখে তিনটি গুলি লাগে। ওইদিনই তাকে কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা চক্ষু হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোখের গুলি বের হলেও চোখে দেখতে পান না তিনি। ছয় মাস পর আরও একটি অস্ত্রোপচারের কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু চোখের আলো ফিরবে কিনা সেটা নিশ্চিত নয়। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাসুদের বাবা হানিফ মিয়া গাড়ি চালাতেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনিও অসুস্থ। গাড়ি চালাতে পারছেন না। দুই বোন ও মা-বাবা নিয়ে তাদের পরিবার। এক বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মাসুদের বাবা বলেন, মাসুদ গাড়ি চালিয়ে যা আয়-রোজগার করে তা দিয়েই কোনোরকমে সংসার চলছিল। ছেলের এমন অবস্থায় আমরা এখন অন্ধকার দেখছি।
মাসুদ বলেন, আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে চোখ হারিয়েছি। এখনও দু’টি গুলি রয়ে গেছে। অস্ত্রোপচার করে বের করতে হবে। আমার চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জের সমাবেশে বিএনপি ২০ হাজার টাকা অনুদান দেয়। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা মেলেনি। ছয় মাস পর আরও একটি অপারেশন করাতে হবে। তবে আলো ফিরবে কী-না সেটা নিশ্চিত করেনি চিকিৎসক।
তিনি আরও বলেন, এক চোখে আলো হারিয়ে আমার জীবন এখন অন্ধকার। পরিবারকে কীভাবে সাপোর্ট দিবো সেটা ভাবতেই কষ্ট লাগছে।