বিশ্বজমিন
এনপিআরকে সাক্ষাৎকার
পুরোনো অবস্থায় ফিরে যেতে হলে এত প্রাণ দেয়ার মানে কী: ড. ইউনূস
মানবজমিন ডেস্ক
(১ সপ্তাহ আগে) ১ অক্টোবর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৬ পূর্বাহ্ন
যদি পুরোনো অবস্থায় ফিরে যেতে হয় তাহলে এত প্রাণ দেয়ার মানে কী দাঁড়ালো! মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনপিআরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, আমরা পুরোনো অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। তাহলে এত প্রাণ দেওয়ার মানে কী দাঁড়ালো! এর কোনো মানে হয় না। তাই আমাদের নতুন দেশ গড়ার কাজ শুরু করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ জাতি সবচেয়ে বড় একটি সুযোগ পেয়েছে। এর আগে কখনোই সব মানুষ একটি বিষয়ে এতটা ঐক্যবদ্ধ হয়নি যে আমাদের পরিবর্তন দরকার।
এনপিআরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কত দিন হবে, তা নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। কেউ বলছে, দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত। কেউ বলছে, সংস্কার শেষ করার পরই নির্বাচন হওয়া উচিত। তবে জনগণ আগের মতো অবস্থায় ফিরে যেতে চায় না, পরিবর্তন চায়।
নির্বাচন নিয়ে ড. ইউনূসের কাছে সাংবাদিক জানতে চান, সামরিক নেতারা বলছেন, অন্তর্রর্তী সরকারের ১৮ মাস ক্ষমতায় থাকা উচিত। আর বিরোধী দলগুলো নভেম্বরে নির্বাচন চেয়েছিল। আপনার যা করতে হবে, তার জন্য ১৮ মাস সময় কি যথেষ্ট? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, কেউ কেউ বলছে, যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করার জন্য, না হয় আপনি (ড. ইউনূস) যত দেরি করবেন, তত অজনপ্রিয় হয়ে পড়বেন। সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাবে। আবার কেউ কেউ বলছে, না, আপনাকে অবশ্যই এই সংস্কার শেষ করতে হবে। তাই আপনাকে এই দীর্ঘ সময় থাকতে হবে। কারণ, সবকিছুর সংস্কার না করে আমরা বাংলাদেশ ২.০-তে যেতে চাই না। তাই এই বিতর্ক চলছে।
বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, মাজারে হামলা ও মব জাস্টিসের (উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে বিচার) শিকার হয়ে মৃত্যু বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, লোকজন বিপ্লবের আবহে ছিল। বিপ্লবী পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। অনেকে খুন হয়েছে। যাদের কারণে তাদের সহযোদ্ধাদের প্রাণ গেছে, তাদের খুঁজছিলেন তারা। এ জন্য তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের সমর্থকদের আক্রমণ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি যখন সংখ্যালঘুদের কথা বলছেন। এই সংখ্যালঘুরা বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়, তার (শেখ হাসিনা) দলের সঙ্গে যুক্ত। তাই আপনি এটা আলাদা করতে পারবেন না যে তারা শেখ হাসিনার অনুসারী হওয়ার কারণে নাকি হিন্দু হওয়ার কারণে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এটা নিশ্চিত যে তারা আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু যখনই আমরা সরকারের দায়িত্ব নিই, শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। সবাই বলতে থাকি, আমাদের ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে একে অপরকে আক্রমণ করতে হবে।
প্রতিশোধপরায়ণতার মানসিকতা থেকে সংস্কারের দিকে মানুষকে নিয়ে যেতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিশোধ নেওয়ার ঘটনাটি মাত্র সপ্তাহ দুয়েকের মতো হয়তো ছিল। এরপর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে শুরু করে। তবে বিক্ষোভ হচ্ছে, প্রতিশোধমূলক বিক্ষোভ নয়। বেশির ভাগ বিক্ষোভই মজুরি বাড়ানো, চাকরির দাবি নিয়ে, যারা আগের সরকারের সময় চাকরি হারিয়েছিলেন। তারা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন অন্য কিছুর জন্য নয়, শুধু অন্য রাজনৈতিক দল করার কারণে। ফলে সবাই তাদের দাবিদাওয়া পূরণের চেষ্টা করছেন। কারণ, তারা বঞ্চিত হয়েছেন। ড. ইউনূস বলেন, আমরা তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি। দেখুন, আপনাদের ১৫ বছরের দুঃখ-দুর্দশা আমরা ১৫ দিনে সমাধান করতে পারব না। বিষয়টি সুরাহা করতে আমাদের কিছু সময় দিন। আপনারা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছেন। আমাদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে এটা সমাধান করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সার্বিক কার্যক্রমের গতিশীলতা বাড়ানো প্রয়োজন। সংস্কার কার্যক্রমের গতি বাড়িয়ে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। তাহলে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই ভালো হয়ে যাবে। হত্যা, মারামারি, মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশসহ অন্যান্য কার্যক্রম এটা আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চলমান প্রক্রিয়ায়। সে যেই সরকারই আসুক না কেন সেটা সুনিশ্চিত চলমান থাকবেই।
Overall activities of the Interim Government is very slow.
পুলিশের মধ্যে অনেকেই চাকরি হারিয়েছিলেন হাসিনার আক্রোশের কারণে, কারণ তারা ভিন্ন রাজনৈতিক মত পোষণ করতেন, বা ধার্মিক দাড়ি রেখেছিলেন। এখন যেহেতু অনেক খুনি পুলিশ কাজে যোগদান করেনি, পলায়ন করেছে এই শূন্য পদ বঞ্চিত পুলিশ নিয়োগ করে পূরণ করার চিন্তা ভাবনা করে দেখতে পারেন। এরা কিন্ত অনুগত থাকবে । আওয়ামীলীগের দোসর এর আনুপাতিক হার কমবে ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উচিত মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর দিকে বিশেষ নজর দেয়া। এগুলো ঠিক থাকলে দেশের পরিস্থিতি ভালো থাকবে। হত্যা, মারামারি, মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশসহ অন্যান্য কার্যক্রম এটা চলতেই থাকবে, সে যে সরকারই আসুক না কেন।