বিশ্বজমিন
হানিয়া হত্যাকাণ্ড
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে শঙ্কা বাইডেনের
মানবজমিন ডেস্ক
(১ মাস আগে) ২ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবার, ৫:৪৫ অপরাহ্ন
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যার ফলে গাজার যুদ্ধবিরতির আলোচনা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানে অতিথিদের বাসভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় হানিয়াকে। এতে ইরান সহ হামাসের মিত্রদের দাবি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ইসরাইলের গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। যদিও ইসরাইল এ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে এখনও বিরত রয়েছেন। তবে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়তুল্লাহ আলী খামেনী ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীকে ইসরাইলে হামলার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে। এতে গত কয়েক মাস ধরে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চলছিল তা আরও উত্তপ্ত হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কার্যত নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়লে গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্যতা নিয়ে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এবং উপত্যকাটিতে যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হতে পারে। এমন পরিস্থিতি সামনে রেখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্যতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এ খবর দিয়ে বিবিসি বলেছে, হানিয়ে ছিলেন হামাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতা। তিনি মধ্যস্থতাকারী দেশ মিশর এবং কাতারের যুদ্ধবিরতির আলোচনায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন। হামাসের উচ্চ পর্যায়ের এই নেতাকে হত্যা করায় প্রতিশোধের আগুনে যুদ্ধ আরও দীর্ঘ করতে পারে হামাস। যদিও হামাসের পরবর্তী নেতৃত্ব আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে বিশ্ববাসীকে অপেক্ষা করতে হতে পারে। মার্কিন প্রশাসন ইসরাইলকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করলেও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনিও গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে তৎপরতা চালিয়েছেন। বেশ কয়েকবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন। তিনি এখনও মনে করেন ইসরাইলের যুদ্ধবিরতির পথে হাঁটা উচিত এবং তাদের জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।
মে মাসের শেষের দিকে বাইডেন গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি রূপরেখা প্রস্তাব করেছিলেন। এরপর থেকে বাইডেনের প্রস্তাবনাকে গুরুত্ব দিয়েই মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর যুদ্ধবিরতির পথ অন্বেষণের চেষ্টা করছিলেন। তবে ইসরাইলের বাস্তবিক কার্যকরণ সেই প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত করতে বার বার বাধাগ্রস্ত করেছে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত রয়েছে। তেল আবিব ওই প্রস্তাবনার পর গাজায় তাদের হামলার মাত্রা আরও কয়েক গুন বৃদ্ধি করেছে। যাতে নিহত হচ্ছেন গাজার বেসামরিক লোকজন। যদিও হামাস যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবনা মেনে নিতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ইসরাইলের হামলা জোরদার হওয়ায় হামাস সম্প্রতি সময়গুলোতে ইসরাইলের ওপর দায় চাপিয়েছে। তারা বলেছে ইসরাইল নতুন নতুন শর্ত দিয়ে যুদ্ধবিরতি সম্ভাব্যতা বিলম্ব করছে। হামাস যে প্রস্তাবনা দিয়েছে সেখানে ইসরাইল ২৯টি পরিবর্তনের দাবি করেছে।
উল্লেখ্য, গতবছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। এতে ইসরাইলের দাবি অনুযায়ী প্রায় ১২০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছেন। সেসময় হামাস ২৫০ জনের মতো ইসরাইলি নাগরিককে জিম্মি করে যাদের বেশ কয়েকজনকে সাময়িক যুদ্ধবিরতির সময় মুক্তি দেয় হামাস। পক্ষান্তরে ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইসরাইল। তারা আকাশ, স্থল পথে হামলা জারি রেখেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৩৯ হাজার ৪৮০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এছাড়া ইসরাইলের হামলায় বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন প্রায় ৯০ হাজার ফিলিস্তিনি।
হামাস নেতা হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর প্রথমবারের মতো এই ইস্যুতে কথা বলেছেন বাইডেন। সেখানেই তিনি যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন এখন যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন বিলম্ব হতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গে বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্ত হওয়া মার্কিন নাগরিকদের স্বাগত জানাতে মেরিল্যান্ড অ্যান্ড্রুজ এয়ার ফোর্সের ঘাঁটিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় গাজা ইস্যুতে এসব কথা বলেন বাইডেন। তিনি ইরানের হুমকি মোকাবিলায় ইসরাইলকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেছেন। যদি ইরান ইসরাইল সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে গোটা মধ্যপ্রাচ্য বহু গুন উত্তপ্ত হয়ে উঠবে যার প্রতিঘাত আসতে পারে বৈশ্বিক আর্থিক খাতগুলোতে।