ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বিশ্বজমিন

ব্রাজিলের যুবতী মডেল যখন অন্যদের যৌনকাজে বাধ্য করেন

মানবজমিন ডেস্ক
১৬ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার
mzamin

ব্রাজিলের সাবেক মডেল, যুক্তরাষ্ট্রে বেশ প্রভাবশালী কেট টোরেস তার অনুসারীদের যৌনকাজে বাধ্য করেছেন। তাদেরকে যৌনদাসী হিসেবে নিজের কাছে রাখতেন। একসময় কানকথা ছড়িয়ে পড়ে যে, তিনি অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর সঙ্গে ডেটিং করছেন। তাছাড়া ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো ঐশ্বরিক শক্তি আছে তার। তার এসব ভণ্ডামি ধরা পড়ার পর আট বছরের জেল দিয়েছে আদালত। এ খবর দিয়ে অনলাইন এনডিটিভি বলছে, ২০২২ সালে দু’জন নারী নিখোঁজ হন। তারপর তা নিয়ে অনুসন্ধান করে এফবিআই। এরপর এতে যুক্ত হিসেবে পাওয়া যায় কেট টোরেসকে। ফলে মানব পাচার এবং নারীদের দাসত্বে বাধ্য করার অভিযোগে আদালত তাকে জেল দিয়েছে। ওই নিখোঁজ দুই নারী বলেছেন, টোরেস তাদেরকে পাচার করে নিয়ে দাসী বানিয়ে রেখেছিল। তার সঙ্গে থাকতে বাধ্য করেছে। এ সময় ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদেরকে।

অথচ তাদেরকে ধনী হওয়ার টোপ দেয়া হয়েছিল। ব্রাজিলের হতদরিদ্র এলাকার মেয়ে টোরেস। তিনি সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কীভাবে ধনী হয়েছেন, হলিউডের তারকাদের সঙ্গে মিশেন সেই কাহিনী ফেঁদে প্রলুব্ধ করেন নারীদের। এক পর্যায়ে দাবি করেন, নিজের ঐশ্বরিক ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি পূর্বাভাস দিতে পারেন। ব্রাজিলের টেলিভিশন শোগুলোতে তিনি ছিলেন একজন সুপরিচিত মুখ। একজন নারী বলেছেন, বিভিন্ন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করা হয়েছে টোরেসকে নিয়ে। লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর সঙ্গে দেখা গেছে তাকে। এসব দেখে মনে হয়েছে, তিনি বিশ্বাসযোগ্য সব কথা বলেন। নিউ ইয়র্কে টোরেসের সাবেক ফ্ল্যাটমেট বলেছেন, হলিউডে তার বন্ধুরা তাকে হ্যালুসিনেজেনিক মাদকে আসক্ত করেছে। এর নাম আয়াহুয়াস্কা। তিনি নিজেই শরীরের শিরায় এই মাদক ব্যবহার করতেন। সহসাই টোরেস একটি ওয়েবসাইট খোলেন। তাতে সাবস্ক্রিপশন সার্ভিস রাখা হয়।

নিবন্ধিতদের বলা হয়- ভালোবাসা, অর্থ এবং নিজস্ব বাসনা, স্বপ্নের সবই পাবেন। এ ছাড়া তিনি সম্পর্ক, ভালো থাকা, ব্যবসায় সফলতা নিয়ে নিজস্ব ধরনের ভিডিও বানান। ওয়ান-টু-ওয়ান ভিডিও পরামর্শসেবা খোলেন। এর বিনিময়ে নেন ১৫০ ডলার। এতে যেকোনো রকম সমস্যার সমাধান দেয়ার কথা বলা হতো। 
২০১৯ সালে আনা নামে এক নারী ছুটে যান নিউ ইয়র্কে। সেখানে টোরেসের সঙ্গে সহকারী হিসেবে কাজ করার কথা তার। শৈশবে সহিংসতার শিকার হয়েছেন আনা। তাছাড়া সম্পর্কে জড়িয়ে নির্যাতিত হয়েছেন। ফলে তিনি ব্রাজিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান একা একা। সেখানে বস্টনে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুষ্টি বিষয়ে পড়াশোনা করছিলেন। কিন্তু টোরেসের সঙ্গে তার কাজ ছিল তার প্রাণীগুলোকে দেখাশোনা করা, তার জন্য রান্না করা, পোশাক লন্ড্রি করা, ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা। বিনিময়ে মাসে তাকে দেয়ার কথা ছিল ২০০০ ডলার। কিন্তু আনা যখন টোরেসের বাসায় উপস্থিত হন, বাসার অবস্থা দেখে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। পুরো বাড়ি ময়লা। আনাকে ঘুমাতে দেয়া হতো একটি সোফার উপর। বিড়ালের মূত্র ত্যাগের ফলে তাতে ভয়াবহ গন্ধ। তাকে ঘুমাতে দেয়া হতো মাত্র কয়েক ঘণ্টা। কিন্তু তাকে পাওনা দেয়া হতো না। এসব নিয়ে তিনি টোরেসের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। এক পর্যায়ে আনা সেখান থেকে পালিয়ে যান। এ অবস্থায় আরও দু’জন নারী- ডেসাইরে এবং লেতিসিয়া’কে নিয়োগ দেন টোরেস। তারা তার সঙ্গে টেক্সাসের একটি বাড়িতে যান। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের কাছে এই বাসস্থান ভয়াবহ হয়ে ওঠে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ডেসাইরেকে চাপ দেয়া হয় স্থানীয় একটি স্ট্রিপ ক্লাবে কাজ করতে। এ সময় তার ওপর জাদুবিদ্যা প্রয়োগ করেন টোরেস। তার বাড়িতে থাকা এই দুই নারীকে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়। তাদেরকে রুম থেকে বের হতে হলে এমনকি বাথরুমে যেতে হলে টোরেসের অনুমতি নিতে হতো। 

অল্প সময়ের মধ্যেই ডেসাইরে’কে পতিতাবৃত্তিতে নামিয়ে দেন টোরেস। এক্ষেত্রে টার্গেট সেট করে দিতেন টোরেস। যদি সেই অনুযায়ী আয় না হতো তাহলে ওই রাতে তাকে টোরেসের বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়া হতো না। ডেসাইরে বলেন, এ অবস্থায় বেশ কয়েকবার রাস্তায় ঘুমাতে হয় আমাকে। সেপ্টেম্বরে দুই নারীর পরিবার ও বন্ধুরা তাদেরকে খুঁজে বের করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালায়। মিডিয়ার দৃষ্টি এড়াতে টোরেস ওই দুই নারীকে নিয়ে টেক্সাস থেকে চলে যান মেইনে এলাকায়। সেখান থেকে ওই দুই নারীকে দিয়ে ইনস্টাগ্রামে ভিডিও পোস্ট করান টোরেস। তাতে তারা বলেন, তাদেরকে আটক রাখা হয়নি। তাদেরকে যেন কেউ খুঁজতে চেষ্টা না করেন। এমন অবস্থায় কমপক্ষে ২০ জন নারী সামনে এগিয়ে এসে তাদের ওপর চালানো ঘটনা প্রকাশ করে দেন। তারা টোরেসের হাতে যে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এখনো মানসিক রোগের থেরাপি নিচ্ছেন।

 

 

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান/ একাধিক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত

১০

নেতানিয়াহুর ভূয়সী প্রশংসা করলেন ট্রাম্প/ ইরানের ৩ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status