ঢাকা, ২১ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

‘বাংলাদেশে রাজস্ব আদায় পৃথিবীর সবচেয়ে কম’

স্টাফ রিপোর্টার
১ মে ২০২৪, বুধবার

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ধারাবাহিকভাবে সরকারের খরচের সঙ্গে ধারের পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে বিনিয়োগ করা হয় তার পুরোটাই ধার করে করা হয়। গত ১৫ বছর বা তার বেশি সময় সরকারের কোনো সেভিংস নেই, যা মোটেও ভালো বিষয় নয়। কর আহরণের বড় সমস্যা হচ্ছে সরাসরি আদায় কম। মোট করের মাত্র এক তৃতীয়াংশ আদায় হয় সরাসরি।  মঙ্গলবার গুলশানের একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ'স ডমিস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশন- ইমপেরেটিভস অ্যান্ড অ্যা রোডম্যাপ’- শীর্ষক সেমিনারে প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। পিআরআই আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন- অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। সভাপতি হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে বিনিয়োগ করা হয় তার পুরোটাই ধার করে করা।

বিজ্ঞাপন
সরকারের খরচের সঙ্গে এই ধারের পরিমাণ বাড়ছে, যা ভালো বিষয় নয়। তবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, অর্থ ধার নেগেটিভ নয়, এটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য ভালো। 

 আহসান এইচ মনসুর বলেন, জাতীয় রাজস্বের ৪৩ শতাংশ চলে যায় বেতন, ভাতা ও পেনশনে, যা অনেক বেড়েছে। মাথাপিছু আয়ের তুলনায় দেশে রাজস্ব আদায় যে পরিমাণ কম হয়, তা অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না। বলা যায়, বাংলাদেশ যে রাজস্ব আদায় করে তা পৃথিবীর সবচেয়ে কম। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এত কম রাজস্ব আদায় দেখা যায় না।’ পিআরআই বলছে, ২০৪১ সালের মধ্যে সরকার ৯৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নিয়েছে। কিন্তু বর্তমান ভ্যাট আইনে এটি ২৯ লাখ কোটি টাকার বেশি হবে না। যদি সিস্টেম পরিবর্তন করা যায়, তাহলে তা ৭৮ লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত আয় হবে। সেক্ষেত্রে বর্তমানে স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সব প্রয়োজনীয় খাতে যেভাবে খরচ কমানো হয়েছে, তা কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব হবে। পুরাতন ভ্যাট আইনে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে পিআরআই’র পরিচালক বলেন, ‘২০১২ সালের ভ্যাট আইনটি ঠিক ছিল। এখন যেটা আছে তাতে একাধিক পর্যায়ে একসেস ডিউটি রয়েছে। যা বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষতি করছে। তাই ২০১২ সালের ভ্যাট আইনে ফিরে যাওয়া দরকার। তখন ভ্যাট সিস্টেম পুরোপুরি কাজ করবে।’ দেশের আর্থিক খাতের উন্নতি করতে হলে আরও তিন বছর সময় লাগবে উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দেশের আর্থিক খাত এমনিতেই ছোট, সেটি আরও ছোট হয়ে যাচ্ছে। 

আর্থিক খাতের ভালো করতে যেসব উদ্যোগ নেয়া দরকার, সেগুলো এখন নিলেও কাজে আসতে অন্তত তিন বছর সময় লাগবে। যেটা আইএমএফও জানে।’ অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম বলেন, যেসব ব্যবসা এনবিআর’র রাজস্ব আহরণের বাইরে আছে, তারা অনেক ভয়ঙ্কর। তাদেরকে কর আহরণের নিয়মে আনতে হবে। শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামের ওপর নির্ভর করলে হবে না। ট্যাক্স নীতি অটোমেশনে চালু করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ট্যাক্স নীতি ও আহরণের নিয়মে অটোমেশন সিস্টেম চালু করতে হবে। যখন অটোমেশন হবে তখন কর আহরণ বাড়বে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের কয়েক বছরে লোকসান হয়েছে। সেজন্য এই লোকসানের বিপরীতে প্রণোদনা দরকার। তিনি বলেন, ব্যাংকের সুদহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এটি ১৪ শতাংশের বেশি হলে তা অসহনীয় হয়ে যাবে। মাহবুবুল আলম বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুৎ না পেলে আমরা উৎপাদন ঠিক রাখতে পারবো না। ডলার সংকট এখনো রয়েছে। আমদানি ব্যয় বাড়ায় গত ৪-৫ বছরে ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই আগামী অর্থবছরের জন্য ব্যবসাবান্ধব একটি বাজেট হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। কর রেশিও নিয়ে হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, অনেকে জিডিপি’র তুলনায় কর রেশিও নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। কিন্তু আমি এখানে হতাশার কিছু দেখি না। 

যেসব দেশের সঙ্গে এটা তুলনা করা হয়, সেসব দেশের অর্থনীতির অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বাংলাদেশেরগুলো তুলনা করতে হবে। অর্থ ধারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘অর্থ ধার করা বিষয়টি নেগেটিভ নয়, এটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য ভালো কিছু। নিজের অর্থ দিয়ে কাজ করলে ধীর গতিতে আগাতে হবে, কিন্তু ধার করে কাজ করলে অনেক দ্রুত উন্নয়ন করা সম্ভব। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বড় বড় অবকাঠামোগুলো থেকে রিটার্ন পেতে শুরু হয়েছে, যা জিডিপিতে অবদান রাখছে। ২০০৯-১০ থেকে এখন পর্যন্ত অর্থনীতি যে অবস্থায় এসেছে তা স্বল্প সময়ে হয়নি। এ সময় তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ব্যবসায়ীদের এমনও কর সুবিধা দেয়া হয়েছে যা ২৫ বছর আগের। এত বছর ধরে সুবিধা অব্যাহত রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। ব্যবসায়ীদেরকেও সে বিষয় খেয়াল করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, ব্যাংকের সুদহার নির্ধারণ করে দেয়া হবে না বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে, তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কতটা কাজ করবে তার ওপর নির্ভর করবে। তিনি বলেন, এক্সচেঞ্জ রেটের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরের আগে যে দর নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল সেটা প্রতি বছর সমন্বয় করা হয়নি। যদি প্রতি বছর কিছু করে সমন্বয় করা হতো, তাহলে পাঁচ বছর পরে এসে সেটার ধাক্কা বড় হতো না। 

প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কামরান টি রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) আশরাফ আহমেদ, এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, এনবিআর’র সাবেক সদস্য (মূসক নীতি) জাহাঙ্গীর হোসেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন- পিআরআই’র গবেষণা পরিচালক এমএ রাজ্জাক। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা করেন পিআরআই’র ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ। রাজস্ব সংগ্রহে বাণিজ্য করের উপর বিশেষ আলোচনা করেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার।

পাঠকের মতামত

পৃথিবীর একমাত্র দেশ যে জন্ম পূর্ববর্তী সময় থেকে মৃত্যুর পরেও সরকারকে মাসুল বা কর দিতে হয়, সে কর হতে পারে লিখিত বা অলিখিত, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, ধনী কিংবা ভিখিরি সবাইকে কর দিতে হয়, এটাই সোনার বাংলা বা বাংলাদেশ।

ইতরস্য ইতর
১ মে ২০২৪, বুধবার, ২:৩৩ অপরাহ্ন

ভুল তথ্য দিচ্ছে এনবিআর ভারতে ১৪০ কোটী জনসংখ্যা র দেশে আয়কর দেয় মাত্র ৬.৭৭ কোটী মানুষ। তথ্যসূত্র: ' এই সময়' অনলাইন ভার্সন ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩।

মিলন আজাদ
১ মে ২০২৪, বুধবার, ১১:৩২ পূর্বাহ্ন

ভুল তথ্য ভারতে ১৪৩ কোটীর দেশে মাত্র আয়কর প্রদান করে ৭.৭৭ কোটী মানুষ বাকী আয় সরকারের আসে পরোক্ষ কর থেকে। তথ্য সূত্র : এই সময় পত্রিকা

মিলন আজাদ
১ মে ২০২৪, বুধবার, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

Wrong! Most of the money go to NBR’s own pocket.

Rahman
১ মে ২০২৪, বুধবার, ৬:০২ পূর্বাহ্ন

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status