ঢাকা, ১০ মে ২০২৪, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে বিভক্ত আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার
mzamin

 প্রতীক ছাড়াই হচ্ছে এবারের উপজেলা নির্বাচন। সিলেটের দু’একটি উপজেলা ছাড়া সবক’টিতেই এবার আওয়ামী লীগ নেতারা একে অপরের মুখোমুখি হয়েছেন। প্রার্থী হয়ে নিজেদের লোকজনকে নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এতে করে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। কোথাও কোথাও হয়ে পড়ছেন মুখোমুখিও। এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে উত্তাপ-উত্তেজনার কমতি নেই। তবে; এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তাদের মতে- প্রতীক না থাকায় এবারের উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাড়ছে। প্রার্থীদের অংশগ্রহণের চেয়ে ভোটারের অংশগ্রহণ বেশি হবে বলে মনে করেন তারা। এ ছাড়া নির্বাচন নিয়ে কোথাও যদি দ্বন্দ্ব প্রকট হয় সেটি পরবর্তীতে মীমাংসা করা যাবে।

বিজ্ঞাপন
এই মুহূর্তে নির্বাচনকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। ফলে কোন্দলের বিষয়টিকে তারা মাথায় নিচ্ছেন না। অন্যদিকে, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে কোনো ধরনের গাফিলতি না করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। সিলেট সফরকালে ইসি মো. আনিসুর রহমান সুষ্ঠুু ও নিরপেক্ষ ভোটের তাগিদ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে তার। গতকাল তিনি সিলেটে এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠুু ও প্রভাবমুক্ত রাখার নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সিলেটের প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছেন ইসি আনিসুর রহমানকে। প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে সিলেট জেলার ৪টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই ৪ উপজেলায় ২৪ চেয়ারম্যান প্রার্থীর ১৭ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। ভোটের মাঠে তারা একে অপরের মুখোমুখি হয়েছেন। প্রতিটি উপজেলায়ই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ভোটকে কেন্দ্র করে দিচ্ছেন চ্যালেঞ্জ-পাল্টা চ্যালেঞ্জও। সিলেট সদর উপজেলার ৬ প্রার্থী এবারের উপজেলা নির্বাচনে লড়াইয়ে নেমেছেন। এর মধ্যে ৪ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। প্রার্থীরা হচ্ছেন- সিলেট জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এজাজুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা সুজাত আলী রফিক, শামসুল ইসলাম ও মিল্লাত আহমদ চৌধুরী। সদরের তৃণমূল নেতারা ইতিমধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা আড়ালে থেকে একেক প্রার্থীর পক্ষে কৌশলে মাঠে কাজ করছেন। এ কারণে সিনিয়র নেতাদের অনুসারীরা নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপি কিংবা জামায়াতের কোনো প্রার্থী মাঠে না থাকায় সদরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই রয়েছে মূল লড়াইয়ে। গোলাপগঞ্জে ৩ প্রার্থীই আওয়ামী লীগের নেতা। এরা হচ্ছেন- বর্তমান চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর কাদির শাফি এলিম, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহিদুর রহমান চৌধুরী জাবেদ ও ব্রাজিল যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান উজ্জ্বল। গত সংসদ নির্বাচন থেকেই গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগে বিভক্তি চলছে। হঠাৎ করে উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি তৃণমূল বিএনপি’র প্রার্থী সমসের মবিন চৌধুরীর পক্ষে মাঠে সক্রিয় ছিলেন। ফলে বর্তমান এমপি গ্রুপের নেতারা এই উপজেলায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্যের পক্ষে কৌশলে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। দিন যত যাবে তাদের অবস্থান আরও পরিষ্কার হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের বিভক্তি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে- উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে শক্তিশালী কোনো প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেননি। দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ৫ প্রার্থীর মধ্যে লড়াইয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। মাঠ পর্যায়ের নেতারা ৪ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এ উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন- আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক তেতলী ইউপি চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম, মোহাম্মদ জুয়েল আহমদ, বদরুল ইসলাম ও শামীম আহমদ। দলের নেতারা জানিয়েছেন, সিলেট সদরের কাছাকাছি হওয়ার কারণে দক্ষিণ সুরমার উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা লড়াই করতে নিজেদের পক্ষে টানছেন তৃণমূল নেতাদের। প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের নেতারা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। বিশ্বনাথে আওয়ামী লীগের ৭ নেতা প্রার্থী হয়েছেন। এরা হচ্ছেন- যুক্তরাজ্যের ডরসেট আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল রোশন চেরাগ আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আকদ্দুছ আলী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য শমসাদুর রহমান রাহিন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ এস আলী এনামুল হক, জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আহমদ, বিশ্বনাথ পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাব হোসেন। ফলে বিশ্বনাথে আওয়ামী লীগে সবচেয়ে বেশি বিভক্তি। ইতিমধ্যে উপজেলা, পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। এতে ছড়াচ্ছে উত্তেজনাও। বিশ্বনাথের মেয়র মুহিবুর রহমানও এক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় সরব হয়েছেন। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশফাক আহমদ গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে জানিয়েছেন, এ নির্বাচনে দল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। বরং নির্দলীয় বিবেচনায় উপজেলা নির্বাচন ফিরেছে, এটা নির্বাচনের জন্য ভালো। আগে মার্কার মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হতেন। এখন পছন্দমতো প্রার্থীর পক্ষে যে যার মতো মাঠে থাকবেন। এতে করে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে। তিনি বলেন, অতীতে এভাবে নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু দলের কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং লাভই হয়েছে। ফলে দলীয় সভানেত্রীর এ সিদ্বান্ত খুবই ভালো হয়েছে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের মতে- নির্বাচনে জেলার নেতারা কোনো ভূমিকা রাখছেন না। ভোটের পর যদি তৃণমূলে ছোটোখাটো কোনো সমস্যা হয় তাহলে সেটি আমরা বসেই মীমাংসা করবো। দলের অভ্যন্তরে এ নিয়ে বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। 
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status