ঢাকা, ৮ মে ২০২৪, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

উপজেলা নির্বাচনকেও ভোটারবিমুখ দেখাতে চায় বিএনপি

কাজী সুমন
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার
mzamin

জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকেও ভোটারবিমুখ দেখাতে চায় বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। সেই লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা আঁটছে বিরোধীরা। ইতিমধ্যে উপজেলার ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। একই ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলো। কেন্দ্রের আহ্বানে উপজেলার অনেক নেতা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বিরোধীদের বর্জনের ফলে দলীয় প্রতীকবিহীন প্রথম ধাপে ভোটের আগেই ২৬ প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এদিকে দলের যেসব নেতা এখনো প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি তাদের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গতকাল ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি। এর আগে আরও ১০ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া আরও ৬৪ নেতাকে শোকজ নোটিস পাঠানো হয়েছে বিএনপি’র দপ্তর থেকে।

 বিএনপি’র দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ৭ই জানুয়ারির মতো উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানাবে বিএনপি।

বিজ্ঞাপন
জেলা-উপজেলায় ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান সংবলিত লিফলেট বিতরণ করবে বিএনপি নেতারা।

 এ ছাড়া পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক, পথসভা, পদযাত্রা, গণসংযোগ ও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সাধারণ মানুষকে ভোট বর্জনে উদ্বুদ্ধ করবে তারা। গত বৃহস্পতিবার  থেকেই বিভিন্ন উপজেলায় লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি শুরু করেছে দলটি। ইতিমধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করে এই নির্দেশনা দিয়েছেন।  উপজেলার ভোট বর্জনের আহ্বানে কর্মিসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। প্রতিটি উপজেলায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করবে স্থানীয় বিএনপি নেতারা। ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করতে নানা কৌশল বাতলে দেয়া হবে। বুধবার থেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর দিয়ে কর্মিসভা শুরু হয়েছে। ময়মনসিংহের তিন উপজেলা হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুরে কর্মিসভা হয়েছে। ধাপে ধাপে অন্যান্য মহানগর, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে কর্মিসভা করবে বিএনপি।  বিএনপি’র একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ৭ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন বর্জনের জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছিল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। বিএনপি’র আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের ৯৫ শতাংশ ভোটার জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছিল। প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ছিল ভোটারশূন্য। সেজন্য এবারের উপজেলা নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক দেয়নি আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ায় দলীয় প্রতীকবিহীন উপজেলা নির্বাচনও অনেকটা এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে ভোটের আগেই ২৬ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। 

  এদিকে গত সোমবার রাতে দলটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে- উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নেতাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। পরবর্তী ধাপেও যারা অংশ নেবেন তাদের বিরুদ্ধে একই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিএনপি মনে করে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনের সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচনে গেলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিএনপি’র দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি বর্জনের ঘোষণা দিলেও প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলার মধ্যে দলের পদধারী, সাবেক ও সমর্থক মিলিয়ে ৩৮ জন নেতা অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে থানা-উপজেলার বিএনপি’র পদধারী ২০ জন, বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত বা অব্যাহতিপ্রাপ্ত ১১ জন এবং সমর্থক বা নেতাদের আত্মীয়স্বজন ৯ জন রয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ১৬১ উপজেলা নির্বাচনের জন্য চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপি সংশ্লিষ্ট অন্তত ৩০ জন। তাদের অনেকে অবশ্য বিভিন্ন কারণে আগেই দল থেকে বহিষ্কৃত।  বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মানবজমিনকে বলেন, উপজেলা নির্বাচন শুধু বর্জনের ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না আমাদের কার্যক্রম। ইতিমধ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত উপক্ষো করে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। 

৭ই জানুয়ারি নির্বাচনের মতো একই আঙ্গিকে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানানো হবে। বিভিন্ন জেলা উপজেলায় গণসংযোগ, পথসভা, উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করা হবে। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসকারী আওয়ামী লীগ সরকারের উপজেলা নির্বাচনের ফাঁদ থেকে দূরে থাকার জন্য জনগণকে আহ্বান জানানো হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবো। বিএনপি’র কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত আমরা প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছি। ইতিমধ্যে কুমিল্লা বিভাগের ৫ জন প্রত্যাহার করেছে। আর যারা প্রত্যাহার করেননি তাদের শোকজ করা হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শোকজের সন্তোষজনক জবাব না দিলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশের ‘ইলেকশন’ শব্দটা মানুষের কাছে হাসির ব্যাপার হয়ে গেছে। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। নির্বাচন পদ্ধতি বলতে কিছু নেই। ইলেকশনের নামে সিলেকশন হচ্ছে। সরকারি দল যাদেরকে সিলেক্ট করবে তাদেরকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। তাই নির্বাচনের নামে ধোঁকাবাজির এই ব্যবস্থায় বিএনপি’র অংশ নেয়ার প্রশ্নই আসে না। দেশের মানুষও জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও বয়কট করবে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ভোটের পক্ষে না। কিন্তু কিছু ভোটপাগল নেতাকর্মী আছেন, তাদেরই এখানে আগ্রহ আছে। তবে, তাদের বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনাও আমাদের দায়িত্ব। আমরা সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status