বাংলারজমিন
গরিবের এসি
হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবারদেশে চলছে গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ আর গরমে অতিষ্ঠ দেশের মানুষ। এ তীব্র গরমে মাটির ঘর যেন গরিব মানুষদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তীব্র গরমেও মাটির ঘরের ভেতরে বিরাজ করে ঠাণ্ডা। তাই গরিব মানুষদের জন্য এসব মাটির ঘর যেন এসি। একটা সময় এদেশের প্রতিটি গ্রামেই মাটির ঘর পাওয়া যেতো। দেশে মাটির ঘর প্রায় বিলুপ্তির পথে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের মতো কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার চির ঐতিহ্যের নিদর্শন সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা শান্তির নীড় মাটির ঘর। যা এক সময় ছিল গ্রামের মানুষের কাছে মাটির ঘর বা গরিবের এসি বাড়ি নামে পরিচিত। মাটির ঘরের কদর কমিয়ে দিয়েছে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
গ্রামীণ অর্থনীতির গতি সচল হওয়ায় মাটির ঘরের পরিবর্তে তৈরি হচ্ছে পাকা ঘর। কয়েক বছর পর পর মাটির ঘর সংস্কারের ঝক্কি-ঝামেলা ও ব্যয়বহুল দিক পর্যবেক্ষণ করে মাটির ঘরের পরিবর্তে দালান-কোটা বানাতে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন এখানকার মানুষ। উপজেলার ঢেকিয়া গ্রামের জসিম উদ্দিন জানান, মাটির ঘর তৈরি করতে প্রথমে এঁটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হতো। ১০ থেকে ১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় অথবা টিনের ছাউনি দেয়া হতো। এসব মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের সময় লাগতো দেড় থেকে দুই মাস। এক সময় আমাদের এলাকার প্রতিটা ঘর মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো। অনেকেই মাটি, বাঁশ, টিন সংগ্রহ করে নিজেরাই মাটির ঘর তৈরি করতো। তিনি আরও বলেন, ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির বাড়ি শত বছরেও বেশি স্থায়ী হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে কালের বিবর্তনে ইটের দালানকোঠা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে মাটির বাড়িঘর।
মাটির ঘরে দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের শিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় বা টিনের ছাউনি দেয়া হতো। মাটির বাড়িঘর অনেক সময় দোতলা পর্যন্ত করা হতো। মাটির ঘর বড় মাপের হয় না। গৃহিণীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে মাটির বাড়িঘরের ক্ষতি হয় বলে বর্তমান সময়ে দীর্ঘ স্থায়িত্বের কারণে গ্রামের মানুষ ইটের বাড়ি নির্মাণের আগ্রহী হচ্ছেন। উপজেলার ধূলজুরী গ্রামের গৃহিণী জেসমিন বেগমের বাড়িতে আজ মাটির ঘর আছে। তিনি জানান, অর্থ সংকটে আজও তার টিনের ঘর তৈরি করা হয়নি। স্বামীর তৈরি করা মাটির ঘরটিতেই সন্তান-স্বামী নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। তাদের পূর্বপুরুষরাও এই মাটির তৈরি বাড়িতেই জীবন কাটিয়ে গেছেন। হোসেনপুর আদর্শ মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আশরাফ হোসেন সোহাগ জানান, মাটির বাড়ি বসবাসের জন্য আরামদায়ক হলেও যুগের পরিবর্তনে আধুনিকতার সময় অধিকাংশ মানুষ মাটির বাড়ি ভেঙে অধিক নিরাপত্তা ও স্বল্প জায়গায় দীর্ঘস্থায়ীভাবে অনেক লোকের নিবাস কল্পে গ্রামের মানুষরা ইটের বাড়িঘর তৈরি করেছেন। অনেকেই শখ করে আবার অনেকেই বাড়ি করার অর্থবিত্ত না থাকায় মাটির বাড়িতেই বসবাস করছেন।