ঢাকা, ৩ মে ২০২৪, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

বিআইপিডির কোটি টাকা পরিশোধ করছে না ফারইস্ট ফাইন্যান্স

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(১ সপ্তাহ আগে) ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৮:৪০ অপরাহ্ন

mzamin

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইপিডি)-এর মেয়াদোত্তীর্ণ এফডিআরর ১ কোটি ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ফেরত দিচ্ছে না ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। এমনকি আমানতের ওপর পাওনা মুনাফাও দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থমন্ত্রণালয়, এনবিআর এমনকি, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বরাবর একাধিকবার চিঠি দিয়েও কোনো সমাধান পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেছে বিআইপিডি। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিআইপিডির চেয়ারম্যান মো. এহসান খসরু, পরিচালক কাজী মো. মোরতুজা আলী, জেনারেল সেক্রেটারি এ কে এম এহসানুল হক।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইপিডি) কোম্পানি আইনের অধীনে নিবন্ধিত একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি, যা বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যথা ব্যাংক, বীমা ও পুঁজিবাজারে কর্মরত পেশাজীবীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্রিয় বয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিআইপিডি'র চেয়ারম্যান এহসান খসরু লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিআইপিডি ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে সর্বমোট ১ কোটি ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকার ছয়টি এফডিআর অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। সবকটি এফডিআর ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তা সত্ত্বেও ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড বিআইপিডির কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি। এমনকি লভ্যাংশও দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, এ যাবত ৫৬টি পত্র দেয়া স্বত্বেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমন কি ২০২০ সালের পরে কোনো পত্রের জবাবও দেয়নি। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের শরণাপন্ন হয় বিআইপিডি। বিআইপিডি’র চেয়ারম্যান বলেন, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের বিষয়টি নিয়ে বিআইপিডি ২০১৯ সালের ১১ই জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর সর্বপ্রথম পত্র দেয়।

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ চলতি বছরের ১৭ই এপ্রিল পত্র পাঠানো হয়। এ যাবত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর এবং ফিন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগ বরাবর ৩৬টি পত্র ও ইমেইল পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। জবাব না দেয়ার কোনো কারণ আছে কি না আমরা তাও জানতে পারিনি।

তিনি বলেন, ২০২২ সালের ২০শে ডিসেম্বর এবং ২০২৩ সালের ২রা আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড কর্তৃক বিআইপিডির অর্থ পরিশোধ না করার বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়া হয়। এই চিঠি দেয়ার পরে ৮ মাস পার হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বা আমাদেরকে অবহিত করেনি।

তিনি বলেন, চলতি বছরের ১৯শে ফেব্রুয়ারি সরাসরি সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিএফআইএম’র ডিরেক্টর মো. আমির উদ্দিন বলেন, কোম্পানি ম্যাটার নং-২৪৩/২০২০ এর প্রেক্ষিতে আদালতের ২০২১ সালের ১৭ই জানুয়ারির আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে রক্ষিত বিআইপিডির আমানত অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

বিআইপিডি’র চেয়ারম্যান বলেন, এ বক্তব্য আদৌ যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য নয়। উক্ত মামলাটি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং পিএফআই প্রোপারটিজ লিমিটেডের মধ্যে সংগঠিত হয়েছে। এই মামলার সঙ্গে বিআইপিডি কোনোভাবে জড়িত নয়। আদালতের আদেশে বিআইপিডির হিসাব ফ্রিজ করার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিষ্কার করে বলার পরেও এ যাবত বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বা আমাদের কোনো জবাব দেয়নি।

তিনি জানান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ২০২২ সালের ২৩শে মার্চ ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে বিআইপিডির প্রাপ্য অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়। এই নির্দেশনাও অমান্য করেছে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

মহাপরিচালক মোরতুজা আলী বলেন, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের অন্যায় ও অযৌক্তিক কর্মকা-ের ফলে বিআইপিডির মতো একটি সম্ভাবনাময় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। আমাদের প্রায় ১ কোটি ০৮ লাখ টাকার ছয় মাস মেয়াদি আমানত ছিল। প্রথম দিকে সেই আমানতের মুনাফা দেয়া হলেও ২০১৮ সাল থেকে আর দিচ্ছে না, এছাড়া পুনরায় রিনিউও করা হচ্ছে না। মর্তুজা আলী আরও বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড কর্তৃক বিআইপিডির অর্থ পরিশোধ না করার বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পত্র প্রদান করা হয়। তবুও বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের মার্চ শেষে ফারইস্ট ফাইন্যান্সের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪০ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ রয়েছে ৮৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মোট ঋণের ৯৪.২৫ শতাংশ খেলাপি। এছাড়া ২০২৩ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ হালনাগাদকৃত কোয়ার্টারলি ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টসে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল প্রায় ৪৮ কোটি টাকা।

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status