রাজনীতি
বাংলাদেশের মানুষ কোনো দেশের প্রভুত্ব মেনে নেবে না: মির্জা ফখরুল
স্টাফ রিপোর্টার
(১ মাস আগে) ২৫ মার্চ ২০২৪, সোমবার, ১:৪১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৩ পূর্বাহ্ন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফকির আলমগীরের একটি গান আছে, দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয়। আমরা রক্তের দাম দিয়ে এই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। কারো দয়ার বাংলাদেশ স্বাধীন হয় নাই। আজকে সেই বোধ নিয়ে রুখে দাঁড়ান। আন্তর্জাতিক বিশ্ব নিশ্চয় সেই বিষয়গুলো দেখবে। দেখেছে অতীতে। আর কোনো দেশ যদি মনে করে আমাদের উপর প্রভুত্ব করবে, বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিন সেই প্রভুত্ব স্বীকার করেনি। মুঘল আমলেও করেনি, ব্রিটিশ আমলেও করেনি এবং পাকিস্তানের আমলেও করেনি। এখনো করবে না।
সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এই সমাবেশ শুরু হয়।
আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, গত দুই বছরে আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী রাজপথে প্রাণ দিয়েছেন। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। অনেকের হাত ও পা ভেঙে দিয়েছে। ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা দরজা বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। সুতরাং মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নামতে হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে না নামলে আপনারা জয়ী হতে পারবেন না। শ্রমিক ও ছাত্রদের নামাতে হবে। সেদিনই হবে সফল গণঅভ্যুত্থান, সফল বিস্ফোরণ এবং বিজয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার এবং প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য নেতাকর্মীদের পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, আজকে জোর করে এই যে দখলদারি একটা রেজিম, শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের মানুষের বুকের উপরে চেপে বসে আছে। এদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই, এদের কোনো সাংবিধানিক অধিকার নেই এই চেয়ারগুলোতে বসে থাকার। এরা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে ১৯৭৫ সালেও প্রতারণা করেছিলো। বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলো। আজকে আবার ভিন্ন কায়দায় ছদ্মবেশে মুখে গণণতন্ত্রের কথা বলে একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে। আজকের অবস্থা আরও ভয়াবহ। এই আপনারা মোবাইল ব্যবহার করছেন। মোবাইলের যে টেকনোলজি, এটাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যা কিছু করে তা তারা দেখতে পায়। শুনতে পায়। ফলে যখন বাংলাদেশের কোনো মানুষ কথা বলতে চায়, প্রতিবাদ করতে চায়, বিপ্লব করতে চায় এবং ঘুরে দাঁড়াতে চায় তখনই তাকে তুলে ফেলে।
ফখরুল বলেন, ১৪ সালের নির্বাচনে তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) বিরোধী দলকে আসতে দেয়নি। অত্যন্ত সুকৌশলে ১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করে মানুষের মতামতকে কেড়ে নিয়েছে। আর এবার আরও চমৎকার নাটক করেছে। নিজেরা নিজেরাই নির্বাচন করেছে। ডামি প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। যারা বিরোধী দল বলে দাবি করে তাদের আসন বন্টন করে একটা নির্বাচন করেছে! যে নির্বাচনকে কেউ গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করেনি এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বও গ্রহণ করেনি।
মুক্তিযুদ্ধ করার লক্ষ্য তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, সংবিধান তৈরি হয়েছে, সেই সংবিধানে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশের জনগণ। কী দুর্ভাগ্য আমাদের, আজকে এই ৫২ বছর পরেও এই বাংলাদেশের মানুষ তাদের মালিকানা হারিয়ে ফেলেছে। এখন বাংলাদেশের মানুষ তার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করে, তাদের সেই ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। আজকে মানুষ সত্য কথা বলতে চায় এবং মোবাইলে যদি কোন পোস্ট দেয়, এমনকি আকার-ইঙ্গিতেও কথা বললে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এবং মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুর রহমান, ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।
বিশেষ করে, ভারতের তাবেদারী আমরা সচেতন নাগরিকরা মেনে নিতে পারি না।
"দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা...." গানটির রচয়িতা ও শিল্পী হলেন আব্দুল লতিফ।
সাবাস বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বীর মুক্তিযোদ্ধার বীরোচিত বক্তব্য, দেশের ৯০ ভাগ জনগণেরই মনের কথাই আপনি বলেছেন
Agreed
আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা কারো আধিপত্য মেনে নিতে পারিনা। ভারতীয় আধিপত্যবাদ এখন বাংলাদেশকে চারদিক থেকে চেপে ধরেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। তার মানে হলো আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে দিয়ে হলেও ক্ষমতায় থাকতে চায় এবং সেভাবেই চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়েছে ভারতের সহযোগিতায়। প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত কেন আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে বা সহযোগিতা করে ক্ষমতা জবরদখল করে ধরে রাখতে? বাংলাদেশের জনগণের গনতান্ত্রিক আকাঙ্খাকে ভারত কেন গুরুত্ব দিচ্ছেনা? ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখার্জির স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায় ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের সেনা শাসিত সরকারের কুশীলব মঈন ইউ আহমেদের সাথে তিনি রফাদফা করেছেন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে। এরপর ২০১৪ সালে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এসে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার মেয়াদ কার্যত বৃদ্ধি করে দেয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভারতের সমর্থনে রাতে ভোট করে আওয়ামী লীগ আরেকদফা ক্ষমতার মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়। আর গত ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের কথা সবাই জানে জনগণের বর্জনের মুখে কিভাবে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করেছে। সর্বশেষ এই নির্বাচনে ভারতের সমর্থন ছিল ওপেন সিক্রেট। কিন্তু কেন ভারত বারবার আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে? জনগণের মতামতের মূল্যায়ন ভারত করছেনা কেন? জনগণ ভোটের অধিকার থেকে, গনতান্ত্রিক ভোটের থেকে বঞ্চিত। তাই জনগণের মনে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। যার পরিণতি ভারতীয় পন্য বয়কটের মধ্য দিয়ে প্রকাশ হয়েছে। কারণ ভারত বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু নয়; আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ সরকার ভারতীয় কোম্পানি গুলোকে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে বাজার দখল করার সুযোগ করে দিয়েছে। যার পরিণামে দেশীয় কোম্পানিগুলো টিকে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিশেষে বলা যায় ভারতের দরকার বানিজ্যিক আধিপত্য। আওয়ামী লীগের দরকার ক্ষমতা। কিন্তু জনগণ কস্মিনকালেও ভারতের আধিপত্য মেনে নেবেনা।