ঢাকা, ৮ মে ২০২৪, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অনলাইন

ফিরে দেখা

যে কৌশলে প্রেসিডেন্ট কেনেডির কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকা ফি নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী

তারিক চয়ন

(১ বছর আগে) ২ জুলাই ২০২২, শনিবার, ১:১১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:৫৪ অপরাহ্ন

mzamin

আজ (১ জুলাই) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের ১৬০ তম জন্মদিবস। একই তারিখে মারাও গিয়েছিলেন তিনি। অনেকেই জানেন, 'আধুনিক বাংলার রূপকার' হিসেবে পরিচিত এই রাজনীতিবিদ একজন স্বনামধন্য চিকিৎসকও ছিলেন।

১৯৪৮ সাল থেকে মৃত্যু অবধি (১ জুলাই, ১৯৬২) সুদীর্ঘ ১৪ বছর তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ওদিকে, তার ক্ষমতার মেয়াদের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জন এফ কেনেডি (১৯৬১-১৯৬৩)।

প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও যখন নানা আয়োজনে বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে তখন প্রেসিডেন্ট কেনেডির সাথে তার একটি 'অন্যরকম স্মৃতি' নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ওই ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬১ সালের ৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমস এ। ওই পত্রিকার বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস বিস্তারিত ছেপেছে।

১৯৬১ সালের ৬ আগস্ট। আজ থেকে প্রায় ৬১ বছর আগে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাতে বসেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায়।

স্বাভাবিকভাবেই দুই দেশের দুই রাজনীতিবিদের মধ্যে টুকটাক কথাবার্তা হচ্ছে। হঠাৎ করে ডা. রায় প্রশ্ন করে বসলেন, 'আচ্ছা, আপনার কি বেশ কিছুদিন ধরে পিঠটা খুব ব্যথা করছে?' প্রশ্ন শুনেই চমকে উঠলেন প্রেসিডেন্ট কেনেডি। বিস্ময়ের সুরে বললেন, 'ঠিক বলেছেন তো! বেশ যন্ত্রণা পিঠে।

বিজ্ঞাপন
কিন্তু আপনি কীভাবে জানলেন?'

উত্তরে ডা. রায় মুচকি হেসে বললেন, 'পেশায় আমি একজন চিকিৎসক। তবে নেশায় আমি রাজনীতিবিদ।'
তার উত্তর শুনে তখন আরও অবাক কেনেডি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিজ্ঞাসা করলেন, 'কিন্তু আপনি তো আমার রোগ পরীক্ষাও করেননি। এভাবে দেখে কী করে বলে দিলেন?' উত্তরে স্রেফ হাসতে থাকেন বিধানচন্দ্র রায়।

যাই হোক, বিধানচন্দ্রের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিজের সমস্ত প্রেসক্রিপশন, মেডিকেল হিস্ট্রি, টেস্ট রিপোর্ট এনে তাকে দেখান প্রেসিডেন্ট। সেগুলো দেখে ডা. রায় বেশ অসন্তুষ্ট হন। তারপর তিনি নিজে কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে বলেন, 'এই আমি ওষুধ লিখে দিলাম। আগামী এক বছরের মধ্যে যদি কোমরে ব্যথা না সারে, তাহলে আমি নিজে আবার আসবো আপনার কাছে, তাও আবার নিজের টাকা খরচ করে।'

প্রেসিডেন্ট কেনেডি পুরো ব্যাপারটায় বেশ মজা পেলেন। খুব খুশিও হলেন। এরপর বেরিয়ে আসছেন বিধানচন্দ্র রায়, এমন সময়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লেন। বললেন, 'আচ্ছা আমার চিকিৎসার পারিশ্রমিক?'

প্রশ্ন শুনে যারপনাই অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সত্যিই তো, ডাক্তারকেতো তাঁর ফি দেওয়া উচিত! একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, 'হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, আপনার ফি কত টাকা?'

আর, সেই সুযোগে বিধানচন্দ্র রায় যেটা করে বসলেন, তা কল্পনাতীত। বের করে বসলেন নিজ রাজ্য কলকাতার উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যান। জানালেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তার রাজ্যের ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন।

দূরদেশ ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এমন প্রচেষ্টায় অবাক হয়ে গেলেন প্রেসিডেন্ট কেনেডি। সঙ্গে সঙ্গেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সহায়তায় কলকাতার উন্নয়নের পরিকল্পনার সমীক্ষা করা হবে বলে জানালেন।

এরপর বাকিটাতো ইতিহাস। গঠিত হল ক্যালকাটা মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন। এর অধীনে টাউনশিপ, স্কুল, হাসপাতাল, মিউনিসিপ্যাল ম্যানেজমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন- কত কী! আর এভাবেই নিজ বুদ্ধি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে নিজ এলাকার জন্য অর্থ আদায় করে ছাড়লেন পশ্চিমবঙ্গের একজন মুখ্যমন্ত্রী।

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status