শেষের পাতা
হাসপাতালে ভালো আছেন সমরা মুণ্ডা
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার‘দুটি কুঁচিয়া হাতে ছিল। পিছলে পড়ে যাওয়ার পর একটি পানিতে চলে যায়। অন্যটি আমার পরনে থাকা হাফ প্যান্টের ভেতরে ঢুকে যায়। পায়ুপথ দিয়ে কিছু একটা ঢুকেছে বলে অনুমান করছিলাম। পরে বুঝলাম কুঁচিয়াই ঢুকেছে।’ কথাগুলো বলছিলেন হাসপাতালের বেডে থাকা সমরা মুণ্ডা। সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের ‘আলোচিত’ রোগী তিনি। পায়ুপথে ঢুকার প্রায় দু’দিন পর সমরা মুণ্ডার পেটের ভেতর থেকে জীবিত কুঁচিয়াকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বের করা হয়। এখন হাসপাতালের ১১ নং ওয়ার্ডে ভর্তি সমরা। ভালো আছেন তিনি। জানালেন- ‘পেটের ভেতরে ২৫ ইঞ্চি লম্বা কুঁচিয়া ঢোকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর মনে করেছিলাম মারা যাবো।
তিনি জানিয়েছেন, শনিবার হাওরে কুঁচিয়া ধরতে যান সমরা। দুই হাতে দুটি কুঁচিয়া ধরাবস্থায় তিনি কাদায় আটকে যান। এ সময় একটি কুঁচিয়া তার প্যান্টের ভেতর ঢুকে যায়। তখন তিনি অনুভব করেন পায়ুপথ দিয়ে কিছু ঢুকছে। কিন্তু বিষয়টি তিনি আমলে নেননি। রাতে প্রচণ্ড পেট ব্যথা শুরু হলে তাকে প্রথমে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে মৌলভীবাজার জেলা সদরে নেয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সমরার তলপেটে অস্বাভাবিক কিছু একটার অস্তিত্ব খুঁজে পান চিকিৎসকরা। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালের সার্জারি ইউনিট-২ এর প্রধান ডা. জানে আলমের নেতৃত্বে চারজন চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করে তার পেট থেকে জীবন্ত কুঁচিয়া বের করে আনেন। চিকিৎসক দলের সদস্য রাশেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- সমরা মুণ্ডা হাসপাতালে ভর্তির পর তার প্যান্টের ভেতর কুঁচিয়া ঢুকার কথা জানালেও পায়ুপথ দিয়ে তা পেটে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন না। পরীক্ষা করার পর ধারণা হয়; পেটের ভেতরে কিছু একটা রয়েছে। এরপর অস্ত্রোপচার করে প্রায় ২৫ ইঞ্চি লম্বা কুঁচিয়া বের করা হয়। এবং সেটি জীবিত ছিল। চিকিৎসকরা জানান, পায়ুপথ দিয়ে জীবিত কুঁচিয়া সমরা মুণ্ডার পেটের ভেতরে ছিদ্র করে ফেলেছিল। যার কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে ছিলেন তিনি। অবশ্য চিকিৎসকরা সফলভাবে অস্ত্রোপচার করে এটি বের করে নিয়ে আসতে পেরেছেন। এ ধরনের ঘটনা বিরল ও অবিশ্বাস্য বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সমরার শারীরিক অবস্থা এখন অনেক ভালো জানিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, এখন তার কোনো অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে না। তবে তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বলা হচ্ছে শঙ্কামুক্ত। এরপরও চিকিৎসায় যাতে কোনো গাফিলতি না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন চিকিৎসকরা। তাকে চিকিৎসাপত্র সবই হাসপাতাল থেকে দেয়া হচ্ছে। অবুঝ মুণ্ডা জানিয়েছেন, তার পিতা প্রথমেই কুঁচিয়া ঢুকার বিষয়টি জানালে চিকিৎসা আরও দ্রুত নেয়া সম্ভব হতো। তিনি প্রথমে বুঝতে পারেননি। পরে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে কিছু একটা দেখেন তখন তিনি কুঁচিয়া ঢুকার বিষয়টি স্বীকার করেন।
তিনি জানান, কুঁচিয়া জীবিত থাকায় পেটের ভেতরও ক্ষত হয়েছে। তবে ডাক্তাররা অভয় দিয়েছেন আর কোনো সমস্যা হবে না। এরপরও পিতাকে নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানান। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কাজী জানে আলম জানিয়েছেন, রোগীর শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিকের পথে রয়েছে। তবে আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রেখে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়া হবে। তবে দুই মাস পর তার আরও একটি অস্ত্রোপচার লাগবে বলে জানান তিনি। ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সমরা মুণ্ডার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। আপাতত শঙ্কামুক্ত রয়েছে। তবে- কুঁচিয়া তার পেটের ভেতরটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এজন্য তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন- আশা করা হচ্ছে কোনো সমস্যা হবে না। সঠিক চিকিৎসা চলছে।