ঢাকা, ৭ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

রেকর্ড তাপপ্রবাহে ভোগান্তি অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার
২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার
mzamin

চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙলো চুয়াডাঙ্গা। গতকাল বিকালে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে  ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি মৌসুমে জেলা ও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। একটানা অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। ধারাবাহিক তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি আর ভোগান্তি নেমে এসেছে। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা প্রাণীকূলেও। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এবার এই এপ্রিল মাসে টানা যত দিন তাপপ্রবাহ হয়েছে, তা গত ৭৬ বছরে হয়নি। আবহাওয়াবিদ, জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এবারের তাপপ্রবাহের পেছনে চারটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো- উপমহাদেশীয় উচ্চ তাপ বলয়, শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, এল নিনোর সক্রিয়তা এবং বজ্রমেঘের কম সংখ্যা। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, শুক্রবার বিকালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
যা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ এবং দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। চুয়াডাঙ্গা জেলার অবস্থান কর্কটক্রান্তি রেখার কাছাকাছি। এ কারণে প্রতিবছর এপ্রিলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে বলেও জানান আবহাওয়া অফিসের এ কর্মকর্তা। 

দেশে ৭৬ বছরের মধ্যে রেকর্ড-ভাঙা তাপপ্রবাহ: আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এবার এই এপ্রিল মাসে টানা যত দিন তাপপ্রবাহ হয়েছে, তা গত ৭৬ বছরে হয়নি। গত বছর (২০২৩) একটানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ হয়েছিল। এবার তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে ১লা এপ্রিল থেকে। যা গতকাল ২৬শে এপ্রিল পর্যন্ত বইছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে ১৯৮১ সাল থেকে সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহের উপাত্ত আছে। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর আগে ২০১০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ২০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল, তবে তা টানা ছিল না। কিন্তু এবার টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহ হলো।  আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এমন প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের পেছনে চারটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন। এবারের অতি তাপের কারণে এবার অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প জমা হচ্ছে। আর তাতে চলতি বছর অতিবৃষ্টি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

 আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৪৮ থেকে তাদের কাছে বিভিন্ন স্টেশনের আবহাওয়ার তথ্য-উপাত্ত আছে। তবে সব বছরে সব স্টেশনের উপাত্ত নেই। উপাত্তগুলো একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে আছে ১৯৮১ সাল থেকে। তারপরও আগের স্টেশনগুলো বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ১৯৪৮ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহ হয়েছে এবারের এপ্রিল মাসে। আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক দীর্ঘদিন ধরে তাপপ্রবাহ নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এবারের মতো তাপপ্রবাহ টানা আগে হয়নি। বলা যায়, ৭৬ বছরের রেকর্ড এবার ভেঙে গেল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. উমর ফারুক জানান, এবার টানা যেমন তাপপ্রবাহ হয়েছে, আবার এর বিস্তৃতিও বেশি ছিল। এ বছর দেশের ৭৫ ভাগ এলাকা দিয়ে টানা তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, যা আগে কখনোই ছিল না।  আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১৯৮১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত তাপপ্রবাহের উপাত্ত অনুযায়ী, ২০১০ সালের এপ্রিলে রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি ২০ দিন মৃদু থেকে মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।

 কোনো একক মাসে এর আগে এতদিন ধরে তাপপ্রবাহ হয়নি। গত ৪৩ বছরের মধ্যে দেখা গেছে যশোরে তাপপ্রবাহের দিন সবচেয়ে বেশি। এরপরই আছে ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গা। ১৯৮১ সাল থেকে সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর আগে ২০১০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ২০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল, তবে তা একটানা ছিল না। কিন্তু এবার টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহ হলো। বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক একেএম সাইফুল ইসলাম জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, চৈত্র মাসের শেষ থেকে দেশে গরম বাড়ে। বৈশাখ মাসজুড়েই এর প্রভাব থাকে। আসলে এবার বা সামপ্রতিক সময়ে যে প্রচণ্ড তাপ, এর কারণ তো বৈশ্বিকভাবেই তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। তাপমাত্রা বৈশ্বিকভাবে ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে। এই যে তাপ, এটা পুরো উপমহাদেশজুড়েই বিস্তৃত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

সেখানে একটি অতিমাত্রার তাপবলয় তৈরি হয়েছে। যার প্রভাবে শুধু বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারত ও পাকিস্তানেও এবার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বলে জানান অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। অস্ট্রেলিয়া ব্যুরো অব মেটেরলজি এল নিনোর তথ্য জানায়। ১৬ই এপ্রিল তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এল নিনো শেষ হয়েছে। আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, এল নিনো পরিস্থিতি শেষ ঘোষিত হলেও এর রেশ রয়ে গেছে। তাই এবার এত তাপপ্রবাহ বেড়েছে। এ বছর এপ্রিল মাসে মাত্র একটি বড় কালবৈশাখী হয়েছে। গত বছরও এর সংখ্যা ছিল সাতটি। বজ্রমেঘ সৃষ্টি হয়ে কালবৈশাখী বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া তৈরি করে। এর জন্য ভারতের বিহার, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় সৃষ্টি হওয়া স্কোয়েল বা ঝড়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এবার এর লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। জলবায়ুবিদ অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের মতে, লা নিনার সক্রিয় হয়ে ওঠার অর্থ হলো, এবার বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টি হতে পারে। কারণ, সমুদ্র তো বটেই, ভূপৃষ্ঠেও জমা হয়ে আছে এখন তৈরি হওয়া অতিরিক্ত তাপ। এতে প্রচুর জলীয় বাষ্প তৈরি হবে আর বৃষ্টি ঝরবে বেশি।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status