অর্থ-বাণিজ্য
জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে ৫.৭৮, মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৮৬ শতাংশ
মো. আল-আমিন
(৯ মাস আগে) ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৯ পূর্বাহ্ন
২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বছর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বৃহস্পতিবার এই হিসাব প্রকাশ করেছে। বিবিএসের প্রকাশিত জিডিপির হিসাবে দেখা যায়, দেশের কৃষিতে উৎপাদন বাড়লেও শিল্প ও সেবা খাতে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যেটি আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। কৃষিতে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও হতাশার চিত্র শিল্প ও সেবায়। শিল্প খাতে গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, আগের বছরে তা ছিলো ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সেবা খাতেও প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশে, যেটি ২০২১-২২ অর্থবছরেও ছিলো ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সময়ে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছর তথা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে। যেটি আগের বছরের একই প্রান্তিকে ছিলো ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
বিবিএস জিডিপির প্রান্তিক হিসাব প্রকাশ করে বলছে, জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) নিয়মিতভাবে স্থূল দেশজ উৎপাদ (জিডিপি) প্রাক্কলন করে থাকে। সরকারের গত ২৬ নভেম্বর ২০২০ তারিখের সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তীতে আইএমএফের পরামর্শ মোতাবেক বিবিএস কর্তৃক ত্রৈমাসিক স্থুল দেশজ উৎপাদ প্রাক্কলনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বিবিএসও উৎপাদন পদ্ধতিতে কিউজিডিপি প্রাক্কলন করছে। তবে, বার্ষিক জিডিপি উৎপাদন ও ব্যয় পদ্ধতিতে প্রাক্কলন ও প্রকাশ করা হয়। ত্রৈমাসিক প্রাক্কলনের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির হ্রাস বৃদ্ধির প্রবণতা পরিমাপ করা।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, কোভিডের ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। টানা উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রপ্তানি কমে যাওয়া, দেশের শিল্প ও সেবা খাতের সবচেয়ে উৎপাদন ও কার্যক্রম কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে দেশের প্রবৃদ্ধিতে।
ফের বেড়েছে মূল্যস্ফীতি: এদিকে আগের দুই মাসে কিছুটা কমলেও জানুয়ারিতে এসে ফের বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। এ মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে। এবারে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছে খাদ্য বহির্ভূত পণ্য। নভেম্বরে এরকম পণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিলো ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। অন্যদিকে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশে। বৃহস্পতিবার বিবিএস’র জানুয়ারি মাসের ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, এবার গ্রামের চেয়ে শহর এলাকায় মূল্যস্ফীতি বেশি হয়েছে। জানুয়ারিতে শহর এলাকায় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশে, আগের মাস ডিসেম্বরে যা ছিলো ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। শহরে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ আর খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ওদিকে গ্রামে জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশে, ডিসেম্বরে যা ছিলো ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গ্রামে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে ছিলো ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গ্রামে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে ছিলো ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো সরকারের। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে আমদানি করতে না পারায় সংকট আরও বেড়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য এতদিন মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে আসছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা চলছে।