অর্থ-বাণিজ্য
সরকার ব্যাংক ঋণে ঝুকলে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে: এমসিসিআই
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(২ দিন আগে) ২৩ জুন ২০২৫, সোমবার, ৯:২৭ অপরাহ্ন

সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে অধিক পরিমাণ ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করলে সেটি একদিকে প্রাইভেট সেক্টরের ঋণপ্রাপ্তি কঠিন করে তুলবে, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির চাপও বাড়তে পারে। সোমবার ‘বাজেট অন্তর্দৃষ্টি: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দিগন্ত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান এ কথা বলেন।
এমসিসিআই এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) যৌথভাবে বাজেটের ওপর এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআই কার্যালয়ে এ সভা হয়।
এমসিসিআই সভাপতি বলেন, আমরা সবসময় এমন একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরির পক্ষে মত দিয়েছি, যেখানে করনীতিতে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বজায় থাকবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটটি এমন এক সময়ে পাস হয়েছে যখন বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হার এবং ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
এ পরিস্থিতিতে বাজেট দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বছর আমাদের প্রস্তাবিত বেশ কয়েকটি বিষয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট।
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে-
(১) পারকুইজিট সীমা বৃদ্ধি: আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৫৫(ঘ) অনুযায়ী, আমরা কর্মীদের জন্য করযোগ্য পারকুইজিটের সীমা ১০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লাখ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এটি গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে করযোগ্য সুবিধার আওতায় অনেক খরচ আসবে না, যা দক্ষ কর্মী ধরে রাখার জন্য সহায়ক হবে। এছাড়া, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মজুরি বোর্ড অনুযায়ী প্রদেয় অর্থ যেন এই সীমার মধ্যে না পড়ে—এ প্রস্তাবটিও গৃহীত হয়েছে।
(২) উৎসে কর (টিডিএস) রিটার্নের সময়সীমা সহজীকরণ: আমরা টিডিএস রিটার্ন মাসিকের পরিবর্তে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে দাখিলের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এটি গ্রহণ করায় ব্যবসাগুলোর সময় ও প্রশাসনিক চাপ কমবে এবং কার্যকারিতা বাড়বে।
৩) উৎসে কাটা ভ্যাট সমন্বয়ের সময়সীমা বৃদ্ধি: ভ্যাট আইন ২০১২-এর ধারা ৫০(২) অনুযায়ী, উৎসে কর্তনকৃত ভ্যাট এর সমন্বয়ের সময়সীমা তিন থেকে ছয়টি কর সময়সীমায় বাড়ানো হয়েছে। এটি অগ্রিম কর ও ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ব্যবসার জন্য আরও নমনীয়তা তৈরি করবে। এসব প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, ভারসাম্য ও অগ্রগতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
কামরান তানভিরুর রহমান বলেন, তবে আমরা কিছু বিষয়ে এখনো উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে টার্নওভার ট্যাক্স ০.৬ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি প্রায় সব সেক্টরে প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি অনেক ক্ষুদ্র ও কম মুনাফার ব্যবসার ওপর বাড়তি বোঝা সৃষ্টি করবে, ব্যবসার ব্যয় বাড়াবে এবং আনুষ্ঠানিক খাতে আসার অনুপ্রেরণা কমাবে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারকে এ প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানাই এবং প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে আলোচনা করে কর কাঠামো এমনভাবে নির্ধারণের আহ্বান জানাই যেন তা প্রবৃদ্ধি-সহায়ক ও ন্যায়সঙ্গত হয়।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে পিআরআই-এর গবেষণা পরিচালক ড. বজলুল হক খন্দকার বলেন, কম বাজেট ঘাটতি বজায় রাখার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা রক্ষণশীল উন্নয়ন ব্যয়ের দিকে পরিচালিত করেছে। আবার জিডিপির একটি অংশ হিসাবে এডিপি বরাদ্দ হ্রাস একটি সতর্ক রাজস্ব অবস্থান প্রতিফলিত করে। তবে দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যগুলোকে ক্ষুণ্ন করার ঝুঁকি রয়েছে।
আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার, এমসিসিআইয়ের ট্যারিফ ও ট্যাক্সেশন কমিটির সদস্য এফসিএ আদীব এইচ. খান, এমসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট হাবিবুল্লাহ এন. করিম এবং ট্যারিফ ও ট্যাক্সেশন কমিটির চেয়ারম্যান এফসিএ হাসান মাহমুদসহ ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধিরা।