দেশ বিদেশ
টিপু হত্যা
জিতু-রাকিব কী বলছেন
আল-আমিন
২৪ জুন ২০২২, শুক্রবারমতিঝিল আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুসহ জোড়া খুনের ঘটনায় ওমান ফেরত মাস্টার মাইন্ড মুসার তথ্যের ভিত্তিতে ইশতিয়াক জিতু ও রাকিবকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। জিতু ও রাকিবকে ইতিমধ্যে আদালতের আদেশে পুলিশ রিমান্ডে নিয়েছেন। রিমান্ডে তারা ঘটনার কিছু বিষয় খোলাসা করেছেন। টিপু হত্যাকাণ্ডে মুসা প্রথমে মোল্লা শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে মোল্লা শামীম রাকিবের মাধ্যমে জিতুর কাছে গুলি ও অস্ত্র সংগ্রহ করে। পরে মোল্লা শামীম শুটার ভাড়া করে ওই অস্ত্র ও গুলি দিয়ে শাহজাহানপুরে টিপু ও পথচারী প্রীতিকে হত্যা করে। মামলার তদন্তকারীদের কাছে জিতু ও রাকিব ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রদান করেছে। জিতু জানিয়েছে, দারিদ্র্যতার কারণে সে বেশিদূর পড়াশুনা করতে পারেনি। গ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পর এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে কারাগারে থাকা যুবলীগের নেতা ল্যাংড়া খালেদের সঙ্গে পরিচয় হয়। ল্যাংড়া খালেদ আবার আরেক শীর্ষ যুবলীগের নেতার একান্ত সহযোগী। তারা দু’জনই কারাগারে রয়েছে। জিতু ছিলেন ল্যাংড়া খালেদের বিশ্বস্ত সহযোগী। ল্যাংড়া খালেদের সব অস্ত্র দেখভাল করতো সে।
এ ছাড়াও টেন্ডারের সময় সে টেন্ডার ড্রপকারীদের অস্ত্রের ভয় দেখাতো। যাতে কেউ কোনো কথা বলতে না পারে। এ ছাড়াও ল্যাংড়া খালেদের সঙ্গে সব জায়গায় যেত জিতু। তাকে মাসিক ৪০ হাজার টাকা করে দিতো খালেদ। ওই টাকা দিয়ে জিতু সংসার চালাতো বলে মামলার তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছে। এদিকে, দ্বিতীয় দফার রিমান্ডে মুসা দাবি করেছে যে, টিপু হত্যাকাণ্ডে যে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে ওই অস্ত্র নিয়ে মোল্লা শামীম ভুটানে পালিয়ে গেছে। তবে খুনে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল নিয়ে মুসা তদন্তকারীদের কোনো তথ্য দিতে পারেনি। গত ২৪শে মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকার সড়কে খুন হন টিপু। ওই সময় গাড়ির কাছেই রিকশায় থাকা বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়িচালক মুন্না। এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন।
সূত্র জানায়, গত শুক্রবার মুসার ৬ দিনের রিমান্ড শেষে ডিবি পুলিশ তাকে আবার অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ফের ১২ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন। পরে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবীর তাকে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ছাড়াও আদালত এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ইমরান রহমান জিতু ও রাকিব রহমানের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দুইদিনের রিমান্ড শেষে জিতু ও রাকিবকে পুলিশ আদালতে হাজির করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশে দেন। মামলার মুখ্য সমন্বয়কারী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি নিফাত রহমান শামীম মানবজমিনকে জানান, রিমান্ডে মুসার আপডেট তথ্য নেই। মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, জিতু ছাড়াও গুলি সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত রাকিবও ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছে। রাকিব একজন চোরাই অস্ত্র ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে কয়েকজন চোরাই অস্ত্র ব্যবসায়ীর যোগাযোগের তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ। তাদের নামও জানা গেছে। তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, রাকিব জানায়, গত ১০ বছর আগে মোল্লা শামীমের সঙ্গে তার পরিচয়। মাঝখানে তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। টিপু হত্যাকাণ্ডের পর মোল্লা শামীম গাঢাকা দিলে সেও পলাতক হয়। সূত্র জানায়, টিপু হত্যাকাণ্ডের ২ সপ্তাহ আগে মোল্লা শামীম রাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহের জন্য। রাকিবের কাছে তখন অত্যাধুনিক রিভলবার ও ভালো মানের গুলি ছিল না। রাকিব তখন মোল্লা শামীমকে রিমান্ডে থাকা ইশতিয়াক জিতুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে ইশতিয়াক জিতু ব্রাজিলের চোরাই একটি রিভলবার ও গুলি সংগ্রহ করে দেয়। সূত্র জানায়, টিপু হত্যাকাণ্ডে আদালতে এখন পর্যন্ত ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার আসামি আকাশ ও মানিক। এ হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ডিবি পুলিশ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- আকাশ, আবৃত্তিকার আহকামুল্লাহ’র ভাই আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল, নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির, ওমর ফারুক, মোরশেদুল ইসলাম, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক, মোহাম্মদ মারুফ খান, মশিউর রহমান, ইয়াসির আরাফাত, সেকান্দার শিকদার, হাফিজুল ইসলাম, সুমন শিকদার, গুলি সংগ্রহকারী রাকিব ও ইশতিয়াক জিতু।