অর্থ-বাণিজ্য
টাকার মান আরও কমলো
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(২ বছর আগে) ২৮ এপ্রিল ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৮:২৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

টাকার মান কমছেই। এক দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে ২৫ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে বুধবার এক ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা খরচ করতে হয়েছিল।
ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে সাড়ে পাঁচ-ছয় টাকা বেশি দরে। খোলা বাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯৩ টাকায়। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী-তিন ব্যাংকই বুধবার ৯২ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য দেখা যায়, গত বছরের ৫ই আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে ডলারের দর। দেখা গেছে, এই নয় মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ।
মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দামে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সবমিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বুধবার পর্যন্ত প্রায় দশ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত) ৪৬০ কোটি (৪.৬০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর।
করোনা মহামারির কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।
কিন্তু আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; ৫০ শতাংশের মতো। কিন্তু রেমিট্যান্স না বেড়ে উল্টো ২০ শতাংশ কমেছে। রপ্তানি বাড়ছে ঠিকই। যে করেই হোক আমদানি কমাতেই হবে। আর যদি এটা করা না যায়, তাহলে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে।
আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন (৪ হাজার কোটি) ডলারে নেমে এসেছে। রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৪.৩০ বিলিয়ন ডলার।