দেশ বিদেশ
ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম রাত
কিশোরগঞ্জে পানিবন্দি তিন লাখ মানুষ
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
২৩ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার
কিশোরগঞ্জে প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার এসব পানিবন্দি মানুষকে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয়, খাবার, পানীয় জলসহ নানা সংকটে দিশাহারা তারা। এমন সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যেই হাওরে ছড়িয়ে পড়েছে ডাকাত আতঙ্ক। গবাদিপশু ও মালামাল ডাকাতি হওয়া থেকে বাঁচাতে এখন নিদ্রাহীন রাত কাটছে বানের জলে ভাসা হাওরবাসীর।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে হাওরের ইটনা ও মিঠামইন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মসজিদ থেকে মাইকিং করে গ্রামবাসীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়। মিঠামইন উপজেলার গোপদীঘি গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন হারুন জানান, গোপদীঘি ইউনিয়নের বন্যাকবলিত গ্রামগুলোর বাসিন্দারা ডাকাত আতঙ্কে ঘুমাতে পারেননি। বেশির ভাগ বাড়িঘরে পানি উঠে গেলেও অধিকাংশ মানুষ গবাদিপশু ও মালামাল নিয়ে বাড়িতেই দুর্ভোগকে সঙ্গী করে অবস্থান করছেন। এই সময়ে ডাকাতের আনাগোনায় মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এদিকে বন্যায় আক্রান্ত জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি ইটনা উপজেলার। সেখানে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন পার করছেন। এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের সিংহভাগ গ্রামের ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট ও বাজার। ফলে গবাদিপশু, ধান-চাল ও মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। প্রায় দুই হাজারের মতো পরিবার
আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ঠাঁই নিয়েছে। তবে গৃহহারা আরও অন্তত ১৬ হাজার পরিবার উদ্বাস্তুর মতো দিন কাটাচ্ছেন। বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে চুলা জ্বালানোর উপায় নেই। তারা খেয়ে না খেয়ে আছে। খাবার পানির সংকট চরমে। এদিকে মিঠামইন উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় পানি আর না বাড়লেও পানিবন্দি মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। অনেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে উঠেছেন। অনেক মানুষ ঘরে মাচা তৈরি করে পানির উপর বসবাস করছেন।
উপজেলার গোপদীঘির দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন শরীফপুর গ্রামের মৃত মুক্ত মিয়ার স্ত্রী রহিমা আক্তার। তিনি বলেন, আমার জামাই নাই। পাঁচটা পোলাপাইন লইয়া খুব কষ্টে আছি। ‘৫০ মণ ধান আছিন। টানাটানিতে ২০ মণ ধান নষ্ট অইয়া গেছে। বাড়িঘর পানির তলে। অহন এই স্কুলে আছি।’ গোপদীঘির হাজী ছুরত আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন বজকপুর গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে রোকন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িঘর পানির তলে গেছে। আমি ৩শ’ মণ ধান পাইছি ক্ষেত কইরা। আমার দেড়শ’ মণ ধান পানিতে নষ্ট হইছে, বেপারীরা এই ধান কিনত না। বাহি ধান আর গরু বাছুর লইয়া স্কুলে উঠছি। ধানের দাম নাই, গরুর ও খাওয়ন নাই।’
এদিকে গতকাল এক মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানিয়েছেন, জেলার ১০টি উপজেলার ৬৪টি ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এক লাখ ৭ হাজার ৯৬০ জন মানুষ। এরমধ্যে গভীর হাওরের তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের ৯৪ থেকে ৯৫ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এই ৬৪টি ইউনিয়নে মোট ২৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। তিন হাজারেরও বেশি পরিবার এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া ২২১৩টি গবাদি পশুকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, হাওরের ধনু ও কালনী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। তবে মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাওর এলাকায় কর্মরত সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।