দেশ বিদেশ
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নদভী মাসে নেন ১১ লাখ, স্ত্রী সন্তান সাড়ে ৩ লাখ
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবারনব্বইয়ের দশকের শুরুতে চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। সে সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন আরবি অনুবাদক হিসেবে যোগ দেন আবু রেজা নদভী। এক সময় জামায়াত নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানটির এখন নিয়ন্ত্রণ এমপি নদভীর হাতে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজে-কলমেই নদভী মাসে ১১ লক্ষাধিক ও স্ত্রী রিজিয়া রেজা সাড়ে ৩ লাখ টাকা ‘সম্মানী’ তুলছেন।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকে নৌকার টিকিটে নির্বাচন করছেন আবু রেজা নদভী। নির্বাচন উপলক্ষে দেয়া নদভীর হলফনামা মানবজমিনের হাতে এসেছে। সেই হলফনামা অনুসারে আইআইইউসি থেকে নদভী প্রতি মাসে মিটিং ও সম্মানীসহ ভাতা পান ১১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এরপরও প্রতিষ্ঠানটি থেকে তিনি ঋণ নিয়েছেন ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। আর তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী আইআইইউসি থেকে মাসিক ভাতা পান ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৫৩৭ টাকা। রিজিয়া রেজা আইআইইউসি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। আর আবু রেজা কয়েক বছর আগে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা শামসুল ইসলামকে সরিয়ে নিজেকে এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর স্ত্রীকে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও ফিমেল ক্যাম্পাসের প্রধান করেছেন। যদিও মাওলানা শামসুল ইসলাম এখনো নিজেকে আইআইইউসি ট্রাস্টের বৈধ চেয়ারম্যান দাবি করেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দেয়া হলফনামা অনুসারে জাতীয় সংসদ থেকে নদভী বছরে ২৩ লাখ ১৫ হাজার ৭০৭ টাকা পান। তার কাছে এই মুহূর্তে সোনা আছে ৯০ ভরি। আর স্ত্রী রিজিয়া রেজার কাছে আছে ৫০ ভরি স্বর্ণ। নদভীর বর্তমানে নগদ টাকা আছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৯৪১ টাকা। স্ত্রীর আছে ২০ লাখ ২১ হাজার ২৪৬ টাকা। নদভীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৪ টাকা এবং তার স্ত্রীর রয়েছে ১৩ লাখ ৪১ হাজার টাক। হলফনামায় নদভী নিজেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী বলেও উল্লেখ করেছেন।
এদিকে নদভীর চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেবের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করেছিল বোরকা পরিহিত একদল নারীসহ নৌকা সমর্থকরা। এ সময় তারা বিভিন্ন রকম আপত্তিকর স্লোগান দেন ও মোতালেবের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনসারীদের ওপর হামলারও অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব ঘটনার ভিত্তিতে নদভীকে তলব করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। একইসঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়।
তবে এই তলবের বিষয়ে জানতে চাইলে নদভী মানবজমিনকে বলেন, যে বিষয়ে আমাকে নোটিশ দেয়া হয়েছে সেটার কোনো ভিত্তি নেই। ওইদিনের ঘটনার সময় আমি সাতকানিয়ায় ছিলাম না। এরপরও আমি জবাব দিয়েছি। আইআইইউসি থেকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় আমার। আমি, আমার শ্বশুর (জামায়াত নেতা মুমিনুল হক) এটা প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন আমার স্ত্রীসহ প্রতিষ্ঠানে সময় দিচ্ছি। তাই আমাদের সম্মানী দিচ্ছে, বেতন না। আর এই টাকাগুলো আগ্রাবাদে থাকা আইআইইউসি টাওয়ার থেকে দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বেতন, পরীক্ষার ফি থেকে নেয়া হচ্ছে না।