দেশ বিদেশ
বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের পররাষ্ট্র সচিব
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে বাংলাদেশে আসুন
স্টাফ রিপোর্টার
২৬ নভেম্বর ২০২৩, রবিবারঅবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূতদের বলেছি, আপনারা আসুন। দেখুন। পর্যবেক্ষণ করুন বাংলাদেশের ভোট কতোটা সুষ্ঠু ও অবাধ হয়। কীভাবে মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেন। শনিবার দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব কোন পরিস্থিতিতে ও কী ধরনের পটভূমিতে জাতীয় সংসদের নির্বাচন হতে চলেছে তার ব্যাখ্যা করেন। বলেন, ‘গণতন্ত্রের উৎসব’ দেখতে রাষ্ট্রদূতদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনারা পর্যবেক্ষক পাঠান। আমরা সব রকমের সহযোগিতা করবো।
এর আগে তিন দিনের দিল্লি সফরে এসে পররাষ্ট্র সচিব ও প্রতিনিধিরা গত শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ আলোচনায় অংশ নেন। ওই দিন রাতে হাইকমিশনে ৫০ জনের বেশি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে মিলিত হন তিনি। এই রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় তিনি ভোট আবহে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশে ভোট ও সেটাকে কেন্দ্র করে সামপ্রতিক সহিংসতা কেন, তা রাষ্ট্রদূতদের কাছে ব্যাখ্যা করেছি।
গত ২৮শে অক্টোবর থেকে পরিস্থিতি কীভাবে জটিল হয়ে পড়ে, কীভাবে সহিংসতা মাথাচাড়া দেয়, সরকার বিরোধিতার নামে কীভাবে পুলিশ হত্যা করা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করা হয়েছে- তা জানিয়ে তাদের ভ্রান্তি দূর করতে চেয়েছি। তাদের বলেছি, বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশ সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে বদ্ধপরিকর। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারত ইতিমধ্যে তার মনোভাব স্পষ্ট করেছে। টু প্লাস টু আলোচনায়ও সেটা উঠেছিল। ভারত জানিয়েছে, তারা সংবিধান ও মানুষের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেবে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, কোনো দেশই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ পছন্দ করে না। বাংলাদেশও চায় না, কেউ অযথা অনধিকার চর্চা করুক।
বাংলাদেশ সরকার সে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সংবিধান রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ভোট প্রসঙ্গ বিশেষ প্রাধান্য পায়। কারা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে জানতে চাওয়া হলে মোমেন বলেন, একেক দলের একেক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তবে আপাতত চলছে মনোনয়নপত্র পেশ ও বাছাই প্রক্রিয়া। জাতীয় পার্টি রয়েছে। নতুন কিছু দলও নির্বাচনে উৎসাহী। মোমেন বলেন, তবে নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, বিএনপি রাজি হলে তফসিল নতুনভাবে ঘোষণা করা যাবে।
কমিশনের মতে, ভোটে জনগণের অংশগ্রহণই বড় কথা। জনগণ উৎসাহী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে কিনা, সেটাই সার্থকতার পরিচয়। কোনো কোনো দেশ সংলাপের জন্য সচেষ্ট, সে কথা মেনে নিয়েও এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, আমি রাজনীতিক নই। আমার উত্তর আপনাদের সন্তুষ্ট না-ও করতে পারে। তবে মনে হয়, সংলাপের সময় পেরিয়ে গেছে। এখন আর সংলাপের কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। মানবাধিকার আন্দোলনকর্মীসহ অনেককে দেদার গ্রেপ্তার করা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মোমেন দেশের রাজনৈতিক পটভূমি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ২৮শে অক্টোবরের আগের দিন পর্যন্ত সবকিছু ঠিক ছিল। কিন্তু ওই দিন সব অন্য রকম হয়ে যায়। বিরোধীদের ডাকা আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে ওঠে।
সেই থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলেছে। দুষ্কৃতকারীদের ধরা হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও তার টানাপড়েন নিয়েও একাধিক প্রশ্ন ওঠে। যেমন অধরা তিস্তা, ভিসাকেন্দ্রিক অসন্তোষ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন আমদানি-রপ্তানি নিয়ে বাংলাদেশের চাহিদা ও দাবি আলোচনায় উঠে আসে। মোমেন প্রতিটি প্রশ্নেরই জবাব দেন। তিস্তাসহ অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে আলোচনায় এবারো আমরা আমাদের প্রয়োজনের বিষয়টি জানিয়েছি। তবে আমরা কেউই চাই না, একটি-দুটি বিষয়ের জন্য সার্বিক সম্পর্ক ব্যাহত হোক। ভিসা সমস্যা সম্পর্কে মোমেন বলেন, এই সমস্যা অনেক দিনের।
বাংলাদেশিদের নানা কারণে ভারতে আসতে হয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যত হচ্ছে, তত বেশি মানুষ ভারতে আসতে আগ্রহী হচ্ছেন। বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য। রোগীদের চাহিদা অন্য ধরনের হয়ে থাকে। সে জন্য তাদের দীর্ঘমেয়াদি ভিসার দরকার হয়। তিনি বলেন, ভিসা সমস্যা ও বাংলাদেশের চাহিদা সম্পর্কে ভারত জানে। কোভিড-১৯ এর পর বকেয়া অনেকটাই বেড়ে গেছে। ভিসার বিষয়টি যাতে কোভিড- পূর্ববর্তী সময়ের মতো হয়, সে জন্য ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে তিনি বিশেষ অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, তাকে বলেছি, এ জন্য যেন সম্পর্ক খারাপ না হয়, সেটা দেখা দরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষে জরুরি।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সেদিকে মোমেন বিশেষ জোর দেন। সেই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষিজাত কিছু পণ্য এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই কৃষিনির্ভরতা প্রবল। বাংলাদেশ কৃষিতে স্বাবলম্বী ঠিক; তবে খরা বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাঝেমধ্যেই চাহিদা ও জোগানে ফারাক দেখা দেয়। ভারত বড় দেশ। এ ধরনের ঘাত-প্রতিঘাত তাদের পক্ষে সামাল দেয়া সহজ। সেই কারণে বাংলাদেশ আশা করে, সমস্যা দেখা দিলে ভারত তার সুরাহা করবে। ভারত ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। বন্ধু। তাই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে কিছু কিছু জিনিস প্রয়োজন হলেই যাতে ভারত থেকে আমদানি করা যায়, তা নিশ্চিত করতে।
বাংলাদেশের আরও এক বড় চাহিদা, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার পর ভারতের পূর্ণ সহযোগিতা। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ সেই মর্যাদায় পাকাপাকিভাবে উন্নীত হবে। তখন বাণিজ্যিক অনেক বিধি আরোপিত হবে। শুল্কসংক্রান্ত অনেক সুবিধা বিলুপ্ত হবে। তখন ভারতের সমর্থন ও সহযোগিতা বাংলাদেশের কাছে জরুরি। এই প্রসঙ্গ টেনে মোমেন বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা প্রাপ্তি যাতে টেকসই হয়, সে জন্য ভারতের সহযোগিতা কাম্য। সে জন্য বাংলাদেশ চায় ‘কমিপ্রহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট’-এর (সেপা) দ্রুত বাস্তবায়ন।