দেশ বিদেশ
বেসরকারি ঋণ নিয়ে সুখবর
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১০ মে ২০২৫, শনিবার
সুখবর, দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। টানা সাত মাস ধরে কমে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকের প্রবৃদ্ধি ফেব্রুয়ারিতে ৬.৮২ শতাংশে নেমে এসেছিল। মার্চে তা বেড়ে ৭.৫৭ শতাংশে উঠেছে। ফেব্রুয়ারির ৬.৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারির পরে আর কখনো এতটা কম হয়নি বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের নিম্নমুখী এই ধারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০২২ সালের নভেম্বরে শুরু হয়। ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে তা আরও কমতে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নবম মাস মার্চে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় ৭.৫৭ শতাংশ বেড়েছে। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে এই হার ছিল ৬.৮২ শতাংশ। জানুয়ারিতে ছিল ৭.১৫ শতাংশ। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ছিল ৭.২৮ শতাংশ। তার আগে নভেম্বরে ৭.৬৬, অক্টোবরে ৮.৩০, সেপ্টেম্বরে ৯.২০, আগস্টে ৯.৮৬, জুলাইয়ে ১০.১৩ এবং জুনে ৯.৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, মার্চ মাস শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১৯ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এ হিসাবেই মার্চ শেষে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৫৭ শতাংশ। গত ১০ই ফেব্রুয়ারি ঘোষিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা আছে ৯.৮ শতাংশ। সে হিসাবে মার্চে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২.২৩ শতাংশ পয়েন্ট কম হয়েছে প্রবৃদ্ধি।
বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ। মার্চে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়লেও বাংলাদেশ এখন আছে অস্বস্তিতে।
নতুন বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান নির্দেশক মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানিও আশঙ্কাজনভাবে কমছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) মূল্যধনী যন্তপাতি আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমেছে ২৬.০২ শতাংশ।
এই নয় মাসে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির জন্য ১৩৩ কোটি ৫০ লাখ (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ১৮০ কোটি ৪৭ লাখ (১.৮০ বিলিয়ন) ডলার। সব মিলিয়ে দেশে শিল্প স্থাপনের নতুন উদ্যোগ ও ব্যবসা সমপ্রসারণ স্থবির হয়ে আছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে চিন্তায় আছেন উদ্যোক্তারা।
ব্যবসায়ী বলছেন, অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে বেসরকারি খাত। সেই খাতে ঋণপ্রবাহ ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ার অর্থ হলো বিনিয়োগ থমকে যাওয়া। আর বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে না। ফলে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যবসার পরিবেশে অনিশ্চয়তা আর ব্যাংক ঋণে উচ্চ সুদহারের প্রভাবে গত কয়েক মাস বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমছিল বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৪.০৭ শতাংশে উঠেছিল। এরপর থেকে কমছেই। ২০২৩ সালের মে মাসে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১.১০ শতাংশ। তার আগের মাস এপ্রিলে ছিল ১১.২৮ শতাংশ। মার্চে ছিল ১২.০৩ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.১৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২.৬২ শতাংশ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.৮৯ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল ১৩.৯৭ শতাংশ। অক্টোবর, সেপ্টেম্বর ও আগস্টে ছিল যথাক্রমে ১৩.৯১ শতাংশ, ১৩.৯৩ শতাংশ ও ১৪.০৭ শতাংশ। ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে সঙ্কোচনমুখী মুদ্রানীতি গ্রহণ করছে। ফলে সব ধরনের ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিও কমছিল। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনেরও একটা প্রভাব পড়েছিল বলে মনে করেন এবিবি’র সাবেক সভাপতি। তিনি বলেন, আগামী দিনগুলো কী হবে, নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। এমন অবস্থায় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা অপেক্ষা করছেন, যার প্রভাবে ঋণপ্রবাহ কমে গিয়েছিল।
ঈদের আগে দুই শনিবার খোলা থাকবে ব্যাংক
অর্থনৈতিক রিপোর্টার: ঈদের আগের দুই শনিবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ সাপ্তাহিক ছুটি থাকা সত্ত্বেও আগামী ১৭ ও ২৪শে মে ব্যাংক খোলা থাকবে। এই দুইদিন স্বাভাবিক দিনের মতোই গ্রাহক লেনদেন করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছেন। সরকারি নির্দেশ অনুসারে, ঈদুল আজহার ছুটি ১০ দিন কার্যকর করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে আগামী ১১ ও ১২ই জুন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) ব্যাংক বন্ধ থাকবে। এর আগে গত মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১০ দিন ছুটির সিদ্ধান্ত হয়। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু আগামী ৫ই জুন থেকে। ছুটি শেষ হবে ১৪ই জুন। ঈদের ছুটি শুরুর আগে ১৭ই মে ও ২৪শে মে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার সব সরকারি অফিস খোলা থাকবে।