অর্থ-বাণিজ্য
শ্রমিকরা কাজ না করে বের হলেই কারখানা বন্ধ: বিজিএমইএ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(১ বছর আগে) ৮ নভেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৯:০১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১:৫৯ অপরাহ্ন
দেশ ও শিল্পের স্বার্থে, শ্রমিকদের কর্মসংস্থানকে সুরক্ষিত রাখতে, যদি কোনো কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করেন এবং কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যান, তবে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধ রাখবেন মালিকরা। একই সঙ্গে আগামী ডিসেম্বর মাস থেকেই ঘোষিত নতুন মজুরি বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে ফারুক হাসান বলেন, বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি এক সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছে। করোনা-পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতি যখন পুনরুদ্ধারে লিপ্ত রয়েছে, তখন পরিস্থিতিকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়ে শুরু হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। সেই ধাক্কায় বিশ্বে রেকর্ড মূল্যস্ফীতির যে চাপ তৈরি হয়, তা এখনো শেষ হয়নি। এরই মধ্যে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে আবারও ঘোরতর অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব আমাদের দেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে পোশাক শিল্পে অনুভূত হবে।
তিনি বলেন, এমনিতেই জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে বিশ্বব্যাপী নজীরবিহীন যে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে, তা নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন উন্নত দেশগুলো সংকোচনশীল মুদ্রানীতি গ্রহণ করায় ভোক্তাদের আয়, ব্যয় এবং পণ্যের চাহিদায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফলশ্রুতিতে আমাদের পণ্যের খুচরা বিক্রয় কমে গেছে, প্রধান বাজারগুলোর পোশাক আমদানি কমে এসেছে।
বিজিএমইএ তথ্য মতে, চলতি ২০২৩ (পঞ্জিকা বছর) এর প্রথম ৯ মাসে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামগ্রিক পোশাক আমদানি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে এসেছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পোশাক আমদানি ভ্যাল্যুতে কমেছে ২২.২৭%, যেখানে বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি কমেছে প্রায় ২৩.৩৩%,- শুধুমাত্র আগস্টেই কমেছে ৩৩.৭১%, সেপ্টেম্বরে কমেছে ৩৪.৭২%। অন্যদিকে এই ৯ মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি এক তৃতীয়াংশ কমে গেছে। চলতি ২০২৩ (পঞ্জিকা বছর) এর প্রথম ৮ মাসে ইউরোপের বৈশ্বিক আমদানি কমেছে ৯.৬১% এবং বাংলাদেশ থেকে কমেছে ১৩.৭১%, শুধু মাত্র আগস্ট মাসেই কমেছে ২৬.০৬%। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক কারণের জের ধরে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বহুগুন বেড়েছে। বিগত ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সময়ে গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ২৮৬.৫% এবং বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে ২১.৪৭%। গত ৫ বছরে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৪০% বেড়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি অক্টোবর ২০২২ এর তুলনায় ১৩.৬৪% হ্রাস পেয়েছে। এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে পোশাক রপ্তানির কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রকৃত রপ্তানি পারফরমেন্স ২৮.৩৫% নিচে নেমে এসেছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, তারপরও দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে বাজার ধরে রাখার জন্য উদ্যোক্তারা নামমাত্র উৎপাদন মূল্যে এমনকি তার চেয়েও কম মূল্যে অর্ডার গ্রহণ করে চলেছেন। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন, পাশাপাশি ইনোভেশন, ডিজিটালাইজেশন, পণ্য ও ফাইবার ডাইভারসিফিকেশন, ডিজাইন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ করছেন, যদিও এসব বিনিয়োগেও আমাদের ব্যয় অনেক বেড়েছে।
সকল উদ্যোক্তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, শ্রমিকরাই পোশাক শিল্পের প্রাণ। তারা ভালো থাকলে শিল্প ভালো থাকবে। তাদের কর্মসংস্থানের খাত, পোশাক শিল্পকে সুরক্ষিত রাখার জন্য শিল্পে নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করতে উদ্যোক্তারা এত সব সীমাবদ্ধতা স্বত্ত্বেও ধৈর্য সহকারে একের পর এক বিনিয়োগ করেই চলেছেন। তারা যেন আরামদায়ক পরিবেশে থেকে কাজ করতে পারেন, সেজন্য উদ্যোক্তারা প্রযুক্তি ও মেশিনারি আমদানিতে বিনিয়োগ করে চলেছেন।
ফারুক হাসান বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আমাদের শ্রমিকরা কতখানি কষ্টে আছেন। তাদের এই কষ্টে শিল্পের প্রতিটি উদ্যোক্তা সমব্যাথী। প্রতিটি উদ্যোক্তা বিশ্বাস করেন, - শিল্প যতো সমস্যাতেই থাকুক না কেন, পোশাক পরিবারের সদস্য, - প্রতিটি শ্রমিকদের সাধ্য অনুযায়ী ভালো রাখা উদ্যোক্তাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। আর তাই, শিল্পের আকাশে যখন অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে, তখন পোশাকখাতের শ্রমিকদের জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করার জন্য, পোশাকখাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আনন্দের বিষয় হলো, সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনা করে গত ৭ই নভেম্বর ন্যূনতম মজুরি ১২,৫০০ টাকা ঘোষণা করেছেন। অনেক উদ্যোক্তার জন্যই এই মজুরি দেয়াই কঠিন হবে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমরা গত ৩১শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলাম, সরকার নতুন যে বেতনকাঠামো ঘোষণা করবে, আমরা পোশাক শিল্পের সকল উদ্যোক্তা সেটিই মেনে নিবো, শিল্পে যত প্রতিকূলতাই থাকুক না কেন। আমরা ঘোষিত মজুরি মেনে নিয়েছি। যত কষ্টই হোক, এই মজুরি বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নতুন মজুরি কাঠামো আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে পোশাক শিল্পের পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ। ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামোতে শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী ৭টি গ্রেডের জায়গায় ৫টি গ্রেড করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে মজুরি বাড়ানো বহাল রয়েছে। নতুন মজুরিতে মোট বেতনের তুলনায় মূল বেতন আনুপাতিকভাবে বেশি বাড়ানো হয়েছে। ফলে শ্রমিকরা অনুপাতিকভাবে বোনাস ও অন্যান্য ভাতাগুলো বেশি পাবেন।
আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করার পর বেশ কিছু কারখানায় শ্রমিকরা ধর্মঘট করছেন, কারখানা ভাংচুর করছেন, যা অনভিপ্রেত।
শ্রমিকদের প্রতি আমার অনুরোধ, এমন কিছু করবেন না যাতে করে শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় - ক্রেতাদের আস্থা বিনষ্ট হয়। আপনাদের অবদানেই শিল্প বর্তমান পর্যায়ে আসতে পেরেছে। এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে করে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ ক্রেতারা শিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর আপনারা কর্মহীন হয়ে পড়বেন, যা কাম্য নয়।
দেশ ও শিল্পের স্বার্থে, শ্রমিকদের কর্মসংস্থানকে সুরক্ষিত রাখতে, যদি কোনো কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করেন, কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যান, তবে মালিকরা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন। আশা করি, বৃহস্পতিবার হতে শ্রমিকরা যথারীতি নিয়ম মেনে কারখানায় কাজ করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
গার্মেন্টস মালিকদের সীমাহীন লোভ দেখলে অবাক লাগে। কম বেতনে কাজ করিয়ে আজ তারা বাংলাদেশের ৮০% ধনী তারাই। এখন একটু বেতন বাড়াতে গেলে তাদের লাভের গুড়ে হাত পড়ে বলে কতো বাহানা। দায়িত্ব নিয়ে বলছি ব্যাংকের টাকা মারা কাপড় বাইরে বিক্রী করা ও ওভার ইনভয়েস ছাড়া একটা গার্মেন্টসের মালিক ও বড়লোক হতে পারতেন না।