ঢাকা, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

বাংলাদেশ ব্যাংকে দুই অর্থনীতিবিদ

ব্যাংক ও রাজস্ব খাত এভাবে চলতে পারে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(২ মাস আগে) ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:৫৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১১:১০ পূর্বাহ্ন

mzamin

সাদিক আহমেদ, আহসান এইচ মনসুর

ব্যাংক খাত, রাজস্ব ব্যবস্থাপনাসহ পুরো আর্থিক খাত এখন যেভাবে চলছে, সেভাবে চলতে পারে না। পরিবর্তন আনতে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। রাজনৈতিক কারণে নির্বাচনের আগে সংস্কার শুরু করা সম্ভব না-ও হতে পারে। তবে আগামী নির্বাচনের পর যে সরকারই আসুক না কেন, তাদের বড় ধরনের সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করতেই হবে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভের পতন থামাতে হবে। সুদহার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দিকে নিতে হবে।

সরকারকে এমন পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ ও নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। দেশের অর্থনীতির চলমান সংকট সমাধানে অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে শুরু করেছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে যান এই দুই অর্থনীতিবিদ। সেখানে তারা এই পরামর্শ দেন বলে জানা গেছে।

সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থনীতির নানা সূচক, নীতি উদ্যোগ ও তার প্রভাব নিয়ে একটি উপস্থাপনা দেন প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান।

বিজ্ঞাপন
সংকট কাটাতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, উপস্থাপনায় সেগুলো তুলে ধরা হয়।

অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া শুরু হয় ২১শে সেপ্টেম্বর থেকে। প্রথম দিন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের পরামর্শ নেয়া হয়। ওই দিন বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বৈঠকের আলোচনা অবহিত করেছিলেন। তবে বুধবার সাংবাদিকদের কিছু বলা হয়নি।

পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, স্বল্পমেয়াদি চ্যালেঞ্জ ও মধ্যমেয়াদি সংস্কার নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। রিজার্ভের যাতে আর পতন না হয়, সেদিকে সতর্ক নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে। যেসব সংস্কার প্রয়োজন, রাজনৈতিক কারণে তার বাস্তবায়ন এখন সম্ভব নয়। এটা আমরাও বুঝি। তবে এখনই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে, যাতে নির্বাচনের পরে যে সরকারই আসে, তারা যেন সংস্কার শুরু করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘যেভাবে আর্থিক খাত চলছে, সেভাবে চলতে পারে না। ব্যাংক খাত, রাজস্ব খাতসহ পুরো আর্থিক খাতে বড় সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই।’

স্বল্পমেয়াদি চ্যালেঞ্জ

অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে সরকারের পক্ষ থেকে এমন সময়ে এসব বৈঠকের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যখন দেশের অর্থনীতি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। দেড় বছর ধরে চলা ডলার-সংকটে ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাড়ছে খেলাপি ঋণও। আবার শরিয়াহভিত্তিক কিছু ব্যাংকে চলছে তারল্যসংকট।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আলোচনায় দুই অর্থনীতিবিদ পরামর্শ দেন, এমন পরিস্থিতিতে দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি চালাতে হবে, যাতে নতুন করে কোনো ধরনের সংকট তৈরি না হয় অথবা চলমান সংকট গভীর না হয়। তারা বলেন, টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেয়া বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের খরচ কমিয়ে আনতে হবে এবং অগ্রাধিকার প্রকল্প ছাড়া অন্যগুলো বাদ দিতে হবে।

পিআরআইয়ের দুই অর্থনীতিবিদ সুদহার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন। তাদের মতে, এখন যে পদ্ধতিতে সুদহার নির্ধারণ করা হচ্ছে, তা পুরোপুরি বাজারভিত্তিক না। তারা ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেয়া শর্ত পরিপালনে অগ্রাধিকার দেয়ার তাগিদ দেন।

মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার

দুই অর্থনীতিবিদ নানা সমস্যা তুলে ধরে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেন। তারা বলেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে ও করপোরেট সুশাসনের ঘাটতি চরমে পৌঁছেছে। ব্যাংক পরিচালকদের দৌরাত্ম্যও বেড়েছে। নামে-বেনামে ঋণ তৈরি হচ্ছে। সরকারি ব্যাংকগুলোতেও আগের মতো অনিয়ম চলছে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। কারণ, এই ব্যাংক খাত নিয়ে দেশের অর্থনীতির উন্নতি করা সম্ভব নয়।

একই সঙ্গে তারা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা খাতেও বড় ধরনের সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেয়ার পরামর্শ দেন। কারণ হিসেবে দুই অর্থনীতিবিদ বলেন, এখনো যেসব দেশে কর-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। পাশাপাশি তারা সরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন। যেসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে লোকসান দিচ্ছে, তাদের নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করার পরামর্শও দেন তারা।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গভর্নরসহ উপস্থিত অন্য কর্মকর্তারা দুই কোনো কোনো পরামর্শের ক্ষেত্রে একমত পোষণ করেন। তবে সব ক্ষমতা তাদের হাতে না থাকায় অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য হবে, তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন সভায় উপস্থিত থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, দুই অর্থনীতিবিদ একই পরামর্শ দিয়েছেন এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে রাখতে বলেছেন।
 

পাঠকের মতামত

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দ্রুতই দরকার। বিদ্যমান অবস্থায় দেশ চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্হ হতেই থাকবে .......... কিন্ত সমস্যা হলো, বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার মতো সক্ষম মানুষ নেই !! আর যারা সক্ষম তাঁদের কে অক্ষম করে রাখা হয়েছে।।

মোঃ মাহফুজুর রহমান
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৫:০৯ পূর্বাহ্ন

ভাল অর্থনীতির দেশে মন্দ রাজনীতি অজুহাত হতে পারে তবে কারন হতে পারে না। যে রাজনীতি অর্থনীতির সংস্কারে অন্তরায় হয় সে রাজনীতির সংস্কার আগে শুরু করা জরুরী।

মোহাম্মদ হারুন আল রশ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:২৮ পূর্বাহ্ন

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status