বিশ্বজমিন
লিবিয়ায় বীভৎস দৃশ্য
মানবজমিন ডেস্ক
(৬ দিন আগে) ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার, ১১:১৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৩ পূর্বাহ্ন

প্লাস্টিকের কালো ব্যাগে থরে থরে সাজানো মৃতদেহ। মুখোশ পরা একজন ডাক্তার উপুড় হয়ে তা পরীক্ষা করছেন। লাশের পা দেখে তা শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। ওই ডাক্তার বলেন, প্রথমে আমরা লাশের বয়স, লিঙ্গ এবং তার উচ্চতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করি। লাশগুলোতে পচন ধরেছে। এ এক বীভৎস দৃশ্য।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ডেরনা শহরে একটি হাসপাতালের কারপার্ক। সেখানেই রাখা হয়েছে বেশ কিছু লাশ। সতর্কতার সঙ্গে শেষবার তা চেক করা হচ্ছে এবং লগবুকে তা লেখা হচ্ছে। এখন সেখানে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ওই চিকিৎসক যে মৃতদেহ শনাক্ত করার চেষ্টা করছিলেন তা এক সপ্তাহ ধরে সাগরে ছিল।
বিশেষজ্ঞরা সেখানে শান্ত মাথায় কাজ করছেন। লাশকে শনাক্ত করার কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউবা ডিএনএ নেয়ার চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এসব লাশ নিজেদের বলে গ্রহণ করতে এখনও অনেক পরিবার অপেক্ষায়। গত সপ্তাহে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ধ্বংস করে দিয়েছে ডেরনাকে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত লিবিয়া সরকার বলেছে, শহরটির কমপক্ষে এক চতুর্থাংশ ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এখনও নিখোঁজ ১০,০০০ মানুষ। এ তথ্য জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় বিষয়ক অফিসের। অন্যদিকে নিহত বা নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে ভিন্ন সংখ্যা দিয়েছে রেডক্রস।
জাতিসংঘ বলছে, এ পর্যন্ত সেখানে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১,৩০০। তবে শেষ পর্যন্ত প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ মানুষ মারা গিয়েছেন তা পরিষ্কার নয়। এমন স্বজন হারানো একজন মোহাম্মদ মিফতাহ। তিনি জানেন, তার পরিবারের নিখোঁজ সদস্যরা আছেন ওইসব ব্যাগের ভিতর। বন্যার পর তিনি বোন ও তার স্বামীর খোঁজে তাদের বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখানে কিছুই পাননি। সব পানিতে ধুয়ে চলে গেছে সমুদ্রে। তারপর থেকে তাদের আর কোনো খবর শোনেননি।
ডেরনাতে এখনও ভয়াবহতার চিহ্ন বর্তমান। বোঝা যায় পানির স্রোত কোথা দিয়ে এবং কী গতিতে প্রবাহিত হয়েছে। কোথাও গাড়ি আটকে আছে গাছের সঙ্গে। কোথাও ভাসিয়ে নেয়া আবর্জনা কয়েকতলা উপরে ভবনে আটকে আছে।
ওদিকে আন্তর্জাতিক সহায়তা পৌঁছা শুরু হয়েছে। এমন সময় লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ডেরনায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন গ্রিসের চার উদ্ধারকর্মী। আহত হয়েছেন ১৫ জন। ফ্রান্স এবং ইতালি থেকে যাওয়া উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল তাদের। কয়েক টন সরবরাহ পাঠিয়েছে কুয়েত ও সৌদি আরব। এখন এসব সরবরাহ যাথে যথাযথভাবে এবং সুষ্ঠুভাবে বিতরণ হয়, সেটাই সবার কাম্য।