বিশ্বজমিন
একটি পিটিআই প্রতিবেদন
কেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে?
(২ সপ্তাহ আগে) ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৯:১২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৫:৫৭ অপরাহ্ন

আগামী বছরের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের আগেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে তার জন্মের পর থেকে, বাংলাদেশ গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন নিয়ে বহুবার সমালোচনার মুখে পড়েছে। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্টকে হত্যা এবং জন্মের প্রথম দশকগুলিতে একাধিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গেছে বাংলাদেশ । দেশের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপকে বিভিন্ন শাসন ব্যবস্থা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন একদলীয় শাসন, সামরিক নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনী গণতন্ত্র এবং বেসামরিক সরকারের অধীনে স্বৈরাচার।
দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থা এখন রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ-একদল অলিগার্চ প্রচুর আর্থিক সুবিধা ভোগ করছে এবং বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে। ভারতের সরকারি সংবাদ সংস্থা পিটিআই এ খবর দিয়েছে। প্রভাবশালী ভারতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া পিটিআই-এর বরাতে এই খবরটি ছেপেছে। রিপোর্টে বলা হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে একটি নির্বাচন আসার সাথে সাথে, সরকারের প্রধান বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের থেকে চাপ বাড়ছে। তারা একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে একের পর এক বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে রাস্তায় নেমেছে। তবে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন করতে চায় ।
২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন দুটি বিতর্কে পরিপূর্ণ ছিলো। ২০১৪ সালের নির্বাচন বিরোধীরা বয়কট করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়াসহ প্রধান উদার গণতান্ত্রিক দেশগুলো একটি নতুন ভোটের আহ্বান জানিয়েছে। তবে ভারত, রাশিয়া এবং চীন ফলাফল নিয়ে কোনও ওজর-আপত্তি করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও চীন ও রাশিয়া বর্তমান সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। হাসিনার ওপর মার্কিন চাপের নিন্দা করে বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না এবং রাশিয়া বাংলাদেশে মার্কিন দূতের হস্তক্ষেপের নিন্দা করেছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবত বাংলাদেশের স্বৈরাচারী শাসনের পথ অবরুদ্ধ করবে এবং বৃহত্তর জবাবদিহিতার পথ প্রশস্ত করবে।
দেশের অর্থনীতি এখনো টালমাটাল, বাড়ছে বেকারত্ব। সৌদি আরব, মিশর এবং ইরানের চেয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনসংখ্যা সম্বলিত তারুণ্যে পূর্ণ একটি দেশের জন্য কার্যকর গণতন্ত্রই আশার আলো দেখাতে পারে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে আগামী নির্বাচন বয়কট করতে পারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তারপরেও, তারা সম্ভবত দেশব্যাপী বিক্ষোভ অব্যাহত রাখবে । ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধীরা অংশগ্রহণ করলেও ক্ষমতাসীন দলের দ্বারা বিরোধীদের দমন এবং ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগে ভোটটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ভোটে ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৭টিতেই একাধিক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে। হাসিনা জোর দিয়ে বলেছেন যে, তার মেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেছে, যার কারণে দেশের জনগণ তার সাথে রয়েছে। তিনি বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছেন, মার্কিন অর্থনীতিবিদ জেফরি শ্যাস তার নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়েছেন।
পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং রাষ্ট্রীয় আমলাদেরকে হাসিনার সমর্থক হিসেবে দেখা হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারসাজি করার দায়ে যুক্ত ব্যক্তিদের ওপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞার মতো কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে। নির্বাচন আগে দেশে উৎসবের মতো ছিল। এখন তরুণ প্রজন্ম বুঝতে পারছে তাদের নেতা নির্বাচন করার মৌলিক অধিকারকে দমন করা হয়েছে। বাক-বিরোধী আইন তাদের সমালোচনা করার অধিকারকে খর্ব করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সমালোচক ও বিরোধী ব্যক্তিদের জেলে পাঠানোর অভিযোগ করেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ জনেরও বেশি লোক নিখোঁজ হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে নিরাপত্তা বাহিনী ৬০০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত। সুইডিশ অনুসন্ধানী সংবাদ সাইট নেত্র নিউজ ঢাকা সেনানিবাসে আয়নাঘর নামে একটি গোপন কারাগার খুঁজে পেয়েছে যেখানে নিখোঁজ ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ । ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, বাইডেন প্রশাসন ঘোষণা করেছিল যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভিজাত আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং এর ছয়জন প্রাক্তন কর্মকর্তার পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দুই প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নিউইয়র্ক টাইমস উল্লেখ করেছে, বিচার বিভাগের সাথে রাজনীতি কতটা জড়িয়ে পড়েছে তার প্রমাণ লক্ষাধিক বিরোধী কর্মীকে বিচারের আওতায় আনা । নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আদালতে ১৯৮টি মামলা রয়েছে এবং একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল যিনি বলেছিলেন যে ইউনূস বিচারিক হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড জুরিস্ট প্রজেক্ট তার আইনের শাসন সূচকে ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ১২৭ নম্বরে রেখেছে। ফ্রিডম হাউস দেশটিকে 'আংশিকভাবে মুক্ত' হিসাবে স্থান দিয়েছে, এবং সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম সূচকে বাংলাদেশকে ১৬৩ নম্বর স্থানে রাখা হয়েছে । যা আফগানিস্তান (১৫২) এবং স্বৈরাচারী কম্বোডিয়ার (১৪৭) চেয়ে নিচে । ইতিমধ্যে, বর্তমান সরকারের সাথে গভীর সম্পর্কযুক্ত রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর এবং অন্যান্য জায়গায় বাড়ি কিনেছেন এবং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে জানা গেছে।
পাঠকের মতামত
প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারত সরকারের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছি।
আমরা নামে স্বাধীন একটা দেশে বাস করছি! আমাদের বলা কথার দাম নেই নীতিনির্ধারকদের কাছে! বাইরের কেউ কিছু বললে সেটিই যেন উত্তম কথা। যাই হোক কথা গুলো বাংলাদেশের জনসাধারণের পক্ষে গেছে।
এত দিন পর ভারত সরকার সত্য অনুধাবন করতে পেরেছে। তাই ভারত সরকার কে ধন্যবাদ যে দেরীতে হলেও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনে কথা বুঝতে পারার জন্য।
এর আগে কখনো মানবজমিন রাখতাম না। এই মাস থেকে মানবজমিন রাখছি। কারণ মানবজমিন অনেক সত্য প্রকাশে সাহসী, যা অন্য অনেক পত্রিকা করে না, সরকারের ভয়ে।
পিটিআই সংবাদ সংস্থাকে ধন্যবাদ, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনের কথা গুলো প্রকাশ করার জন্য।
ভাই আমি মরার আগে তার পতন জেন আল্লাহ তালা আমাকে দেকায়
পিটিআই সংবাদ সংস্থাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। এই খবর বাংলাদেশের ৯০ ভাগ জনগনের মনের খবর ।১০০% সত্য খবর অনেকদিন পর ইন্ডিয়ার কোন সরকারি সংবাদ সংস্থা এ ধরনের সত্য সংবাদ প্রকাশ করল আমরা জনগণ ভোটের অধিকার চাই । গত দুটি নির্বাচনে যেমন ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা জনগণ ভোট দিতে পারিনি।
তবুও পিটিআই কে ধন্যবাদ, গনতন্ত্রের পক্ষে বলার জন্য!
Many many thanks to PTI News. This is the first time they have published such type of article.
ইন্ডিয়ানরা যা নেওয়ার নিয়ে নিছে। এখন আম্লীগ বা বিমপি, কে আসে ক্ষমতায় সেটা অপ্রাসঙ্গিক।
100% correct news
100% correct news
ভারতের পরীক্ষিত হৃদয়ের বন্ধু আওয়ামীলীগের দুঃসময়ে বুঝি এবার ১৮০ডিগ্রী এঙ্গেলে পীঠটান মেরেছে। আওয়ামী দুঃশাসনের যে চিত্র পিটিআই জনসম্মুখে হাজির করেছ তাতে ত ভারত আওয়ামীলীগের মধুচন্দ্রিমায় ছেদ রেখা একেঁ দিয়েছে যা আওয়ামীলীগ ঘুনাক্ষরেও ভাবেনি। আওয়ামী দানবীয়তা দাম্ভিকতা আর বেপরোয়া শাসন ক্ষমতার এবার কি হবে তা ভারতীয় সার্টিফিকেটের পর চিন্তা করা সত্যিই দুষ্কর।
ছোট বেলা দেখেছি ভোটের সময় ঈদের যে আনন্দ সেই আনন্দ লাগতো এখন আর সেই আনন্দ নেই। আমার বয়স এখন ২৭ আমি এখন পর্যন্ত আমার ভোট আমি দিতে পারি নাই,,আফসোস লাগে কবে যে আমার ভোট আমি দেবো জানি না।মরার আগে হলে যেন আমার ভোট আমি যেন দিতে পারি।
100% RIGHT
মন্তব্য করুন
বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন
বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত
পিটার হাসের নিরাপত্তা উদ্বেগ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়/ কূটনীতিকদের নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, প্রয়োজনে আরো নিষেধাজ্ঞা
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ১৫ এমপির চিঠি/ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান
ব্রিফিংয়ে ম্যাথিউ মিলার/ আমরা চাই বাংলাদেশে নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]