ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৮ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্বজমিন

অপারেশন থিয়েটারে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ: নারী সার্জনরা ভয়ে মুখ খোলেন না

মানবজমিন ডেস্ক

(১ সপ্তাহ আগে) ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:২৮ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৫:৪৪ অপরাহ্ন

mzamin

বৃটেনে নারী সার্জনরা অভিযোগ করেছেন তাদের যৌন হয়রান করা হয়। অবমাননা করা হয়। এমনকি সহকর্মীরা কখনো কখনো তাদেরকে ধর্ষণও করে। বৃটেনের ন্যাশনাল হেলথ স্কিমের (এনএইচএস) স্টাফদের ওপর বড় রকমের এক বিশ্লেষণে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যেসব নারী অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন চলাকালে এমন সব যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। তার ওপর ভিত্তি করে দীর্ঘ একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে তারা। 

এ নিয়ে গবেষণার লেখকরা বলেছেন, সিনিয়র পুরুষ সার্জনদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের ধারা চলছে ট্রেইনি নারী সার্জনদের ওপর। এ ঘটনা এখন এনএইচএসভুক্ত হাসপাতালগুলোতে ঘটছে। এ ঘটনাকে ‘সত্যিকার অর্থে হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেছে রয়েল কলেজ অব সার্জনস। 

অভিযোগে বলা হয়েছে, সার্জারি করার সময় যৌন হয়রান, অবমাননা এবং ধর্ষণ এখন ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে। রিপোর্টে এর পরে যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তা এখানে তুলে ধরা সমীচীন নয়। বলা হয়েছে, কোনো কোনো ট্রেইনিকে যৌনতার বিনিময়ে ক্যারিয়ার গড়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়।

বিজ্ঞাপন
অযাচিতভাবে তাদের শরীরে সার্জনরা শরীর লাগিয়ে থাকেন। শরীর স্পর্শ করেন। 

এই গবেষণা করেছে ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটার, ইউনিভার্সিটি অব সারে, ওয়ার্কিং পার্টি অব সেক্সুয়াল মিসকন্ডাক্ট ইন সার্জারি। তারা তাদের গবেষণা বিবিসির সঙ্গে শেয়ার করেছে। গবেষকদের সহযোগিতা করেছেন যেসব নারী সার্জন তাদের মধ্যে তিন ভাগের প্রায় দুই ভাগই বলেছেন, তাদের যৌন হয়রানির জন্য টার্গেট করা হয়। 

এক তৃতীয়াংশ বলেছেন, গত ৫ বছরে তারা সহকর্মীদের হাতে যৌন অবমাননার শিকারে পরিণত হয়েছেন। তারা এ বিষয়টিতে রিপোর্ট করার সাহস পান না। কারণ, তাতে তাদের ক্যারিয়ারের ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া এনএইচএস যে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবে, তাতেও তাদের আস্থার ঘাটতি আছে। 

যেসব নারী সার্জন প্রকাশ্যে কথা বলেছেন তার মধ্যে অন্যতম জুডিথ। তিনি শুধু নামের প্রথম অংশ দিয়ে নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন। তিনি এখন একজন অভিজ্ঞ এবং মেধাবী কনসালট্যান্ট সার্জন। তার ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে যৌন নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়েছেন। ওই সময় তিনি অপারেশন থিয়েটারে কোনো ক্ষমতাধর ছিলেন না। এক সময় দেখতে পান সিনিয়র পুরুষ সার্জন ঘামছেন। জুডিথ বলেন, তিনি আকস্মিক ঘুরে দাঁড়ালেন। আমার বুকের মাঝে নিজের মাথা রাখলেন। মুখ ঘষে ঘষে ভ্রুর ভিতরকার ঘাম মুছলেন। তিনি দ্বিতীয়বার একই কাজ করলেন। এ সময় জুডিথ তাকে একটি তোয়ালে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। জবাবে ওই সার্জন বললেন- না, তার চেয়ে এটাই বেশি আনন্দের। 

জুডিথ বলেন, এতে আমি নোংরা অনুভব করেছি। অপমানিত বোধ করেছি। তার চেয়েও খারাপ যা ছিল, তাহলো আমার সহকর্মীরাও একেবারে নিশ্চুপ ছিলেন। অপারেটিং থিয়েটারে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সিনিয়র ব্যক্তি। কিন্তু তার জানা উচিত তার আচরণ পচে গেছে। 

নিজের প্রকৃত নাম প্রকাশ করেননি আরেকজন নারী সার্জন। তিনি অ্যান ছদ্মনামে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, তিনি যখন একজন ট্রেইনি ছিলেন তখন একজন সিনিয়র সার্জন তার সম্মতি ছাড়াই তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। এই ধর্ষণের সময় যা ঘটেছে তা তিনি ব্যাখ্যা করতে চান না। 

অ্যান বলেন, এ ঘটনা ঘটেছে একটি সামাজিক ইভেন্টে। সেটা ছিল এক মেডিকেল কনফারেন্স। একই রকম স্পেশালিস্টদের এক মিটিং ছিল সেটা। অ্যান বলেন, আমি তাকে বিশ্বাস করতাম। তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। অনুষ্ঠান শেষে তিনি আমার পিছু নিলেন।

যেখানে থাকি সেখানে ছুটে এলেন। ভেবেছিলাম তিনি কথা বলতে চাইছেন। কিন্তু তিনি আকস্মিক আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং আমাকে ধর্ষণ করলেন। অ্যান বলেন, এ সময় ভয়ে আমার শরীর ফ্রিজ হয়ে গিয়েছিল। আমি তাকে থামাতে পারছিলাম না। আসলে আমি তার কাছে এটা চাইনি। যা ঘটেছে তা ছিল অস্বাভাবিক। পরের দিন তার সঙ্গে দেখা হলো। তিনি আমাকে তার হাতের মধ্যে নিয়ে নিলেন। 

এমন সব আচরণের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে সবাই নীরব। সার্জারিতে যেসব ট্রেইনি থাকেন, তাদেরকে সিনিয়র সহকর্মীদের কাছ থেকে শিখতে হয়। এ জন্য তাদের ওপর নির্ভর করতে হয়। ওইসব সিনিয়রদের অনেক ক্ষমতা থাকে। তারা একজন নারী সার্জনের ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিতে পারেন। তাই নীরবে সয়ে যান অনেক নারী। 

গবেষণায় নিবন্ধিত নারী-পুরুষ সার্জনদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। তারা স্বেচ্ছায় এতে অংশ নিয়েছেন। সাড়া দিয়েছেন ১৪৩৪ জন। তার মধ্যে অর্ধেকই নারী। তার মধ্যে শতকরা ৬৩ ভাগ নারী বলেছেন, সহকর্মীদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকারে পরিণত হয়েছেন। শতকরা ৩০ ভাগ নারী বলেছেন সহকর্মীর হাতে যৌন অবমাননার শিকারে পরিণত হয়েছেন। শতকরা ১১ ভাগ নারী বলেছেন ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য বাধ্য হয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়েছে। কমপক্ষে ১১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শতকরা ৯০ ভাগ নারী এবং ৮১ ভাগ পুরুষ যৌন অসদাচরণ প্রত্যক্ষ করেছেন। 
 

পাঠকের মতামত

পশ্চিমা সভ্যতা নারী পুরুষের ব্যবধান তুলে দিয়ে সবাইকে এককাতারে নিয়ে আসতে প্রানান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই কুফল এটি।ইসলামী জীবনব্যবস্হাই সঠিক।বারবার তাই প্রমানিত হয়।

Syed Jahangir Kabir
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:৩১ অপরাহ্ন

ইসলামে কেনো পর্দার গুরুত্ব এবং জেনার বিচারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে? কারন এটাই।

হাবিবী
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ২:৩২ পূর্বাহ্ন

পাঠক এখন বুঝতে পারছেন পর্দার কি গুরুত্ব।

Mahbubul Islam
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ২:১৬ পূর্বাহ্ন

Islam is the solution for Women.

Iqbal
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার, ২:০১ পূর্বাহ্ন

১৪০০ শত বছর পূর্বে নারীদের জন্য অত্যন্ত টেকশই নিরাপদ জীবন যাপন নির্ধারণ করে দিয়েছে পবিত্র কুরআন ও হাদীস। আজ যুগে যুগে প্রমাণিত হচ্ছে নারী ্ও পুরুষের অবাদ চলাচল বা উঠাবসা উভয়ের জন্য বিষেশ করে নারীর জন্য নিরাপদ নয়।

সরল মন
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার, ১১:০০ অপরাহ্ন

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি/ কানাডায় বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার আশঙ্কা

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status