অর্থ-বাণিজ্য
পুঁজিবাজারে বাজেটের প্রভাব
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৩ জুন ২০২২, সোমবার
প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পর সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে গতকাল পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেন কমেছে। কেনার চেয়ে বিক্রির চাপ বেশি থাকায় এদিন ২২টি খাতের কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। ক্রেতা ছিল না প্রায় ৪০টি কোম্পানিরই। একদিনে কোনো শেয়ারের সর্বোচ্চ পতনের হার ২ শতাংশ বেঁধে দেয়ার পরও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ৪৮ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ১৩৪ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি কমেছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম ও লেনদেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবার প্রত্যাশা ছিল বাজেটে অপ্রত্যাশিত অর্থ (কালোটাকা) পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হবে। দ্বৈত কর নীতি পরিহার করা হবে, পাশাপাশি তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়করমুক্ত করা হবে। করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা এক লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হবে।
তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট করের ১০ শতাংশ ব্যবধান রাখতে হবে। কিন্তু বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন হয়নি। এদিকে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার আগের মতোই ৩৭.৫ শতাংশ রাখা হয়েছে। আবার কোম্পানির করপোরেট কর কমানো ছাড়া বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কিছুই ছিল না। আবার করপোরেট কর কমানোর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার সুবিধাও শেয়ারবাজারের এক-তৃতীয়াংশ কোম্পানি পাবে না। এ কারণে বাজেট-উত্তর প্রথম কার্যদিবসে বাজেটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। ডিএসই’র তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল বাজার দুটিতেই লেনদেনের প্রথম ঘণ্টায় সূচক ওঠানামা করে। কিন্তু তারপর থেকে লেনদেনের শেষ সময় পর্যন্ত শেয়ারের দাম কমেছে। সূচকও কমেছে।
দিন শেষে ডিএসসিতে ৩৭৯টি প্রতিষ্ঠানের ১৭ কোটি ৬২ লাখ ৬৮ হাজার ৫২২টি শেয়ার ও ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ৩০৬টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির দাম। এদিন সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে ব্যাংক-বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের শেয়ারের। এই তিন খাতের দেখাদেখি অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমায় ডিএসই’র প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ৪৮ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪৩১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে কমেছে ১০ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক কমেছে ১৭ পয়েন্ট। এদিন ডিএসইতে ৬৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৭ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৭৫৮ কোটি ২৬ লাখ ৬২ হাজার টাকার শেয়ার। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকের শেয়ার।
এরপর যথাক্রমে রয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড, বিডিকম, আইপিডিসি, বিএসসি, ফরচুন সুজ, বিডি ফাইন্যান্স, ফুয়াং ফুড, সালভো কেমিক্যাল এবং ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৮৯১ পয়েন্টে। বাজারটিতে ৩০১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৫১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ২২৪টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির। এদিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার ৯৫৪ টাকা। মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, বাজেটে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ না থাকা বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে। ফলে শেয়ার কেনায় আগ্রহ দেখা যায়নি। বাজেট পুনঃবিবেচনায় কী আসে, সেটাই হয়তো দেখবেন তারা।