অর্থ-বাণিজ্য
বাজেট প্রতিক্রিয়া
কৃষি বাজেট গতানুগতিক হয়েছে
মো. আল-আমিন
১২ জুন ২০২২, রবিবার
কোভিড কালে কৃষি মোটামুটি ভালো করেছিল বলেই আমরা অনেকটা বেঁচে গেছি। নইলে আমাদের অবস্থা অনেক খারাপ হতো। এজন্য সরকারের উচিত ছিল পরিকল্পিত একটা কৃষি বাজেট প্রণয়ন করা। কিন্তু কোনো পরিকল্পনা না করেই একটি গতানুগতিক কৃষি বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার কথা বলেছে। এ জন্য কৃষিকে প্রস্তুত করতে হবে। তারা কিন্তু সেগুলো করছে না। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে। পানির বিষয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা বলতে পারে পানি তো আমাদের হাতে না। এজন্য সমন্বয় করতে হবে। কৃষির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এটা নিয়ে বাজেটে কোনো কিছুই বলা হয়নি। যদিও এর আগের বাজেটগুলোতে জলবায়ু প্রসঙ্গে কথা বলা হলেও কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
এই গবেষক বলেন, কৃষিতে ধারাবাহিক নাইট্রোজেন সার ব্যবহারের একটা প্রভাব আছে। স্পষ্টভাবে সেটা থেকে সরে আসবেন কৃষক- সে ব্যবস্থা তো করছে না সরকার। সারে ভর্তুকি দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিছুদিন আগেই সারের জন্য ডোমেস্টিক গ্যাসের দাম ৪ থেকে ১৬ টাকা করা হয়েছে। এতে ইউরিয়া সারের উৎপাদন ব্যয় অনেক বাড়লো। এই ব্যয় বাড়ার কারণে যদি ভর্তুকি দিয়ে থাকেন তাহলে তো আরেকটি অসুবিধা। বিষয়টি হচ্ছে সামগ্রিকভাবে তারা ভাবছেন না। পুরো বাজেটই গতানুগতিক হয়েছে। আসাদুজ্জামান বলেন, তারা ম্যাকানাইজেশনের কথা বলছেন। এটা ভালো জিনিস। আমাদের লেবার শর্টেজ আছে। কি কারণে লেবার শর্টেজ হয়েছে এটা তারা বলেননি। লেবারের খরচ বাড়ছে। শুধু লেবারের শর্টেজ আছে বলেই এটা হচ্ছে না। আপনি ম্যাকানাইজড হবেন বলছেন। এতে তো তারা কাজ হারাবে। তাদের জন্য কিছু বলেননি। লাখ লাখ লেবার আছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ শুধু ধান কাটার মধ্যেই থাকে। তারা যে ডিসপ্লেস হবে তাদের জন্য ভবিষ্যতে কী ব্যবস্থা করছেন। কী খাবে তারা। কম্বাইন হার্ভেস্ট আমদানিতে ছাড় দেয়া হচ্ছে। আপনি জমিই করেন আধা একর- এটা চালাতে পারবেন? আপনাকে যদি চালাতে হয় তাহলে যিনি কিনবেন তার তো সেরকম পকেটের জোর থাকতে হবে। সরকার ছাড় দিলেও তার তো ইনিশিয়াল ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে বিরাট বড়। এটা তো ছোট ছোট আইলের মধ্যে দিয়ে চালানো যাবে না। জমি সমান করতে হবে। উদ্যোগটি ভালো কিন্তু ধাপে ধাপে করতে হবে। পরিকল্পনা করে করতে হবে।
এগ্রিকালচার ট্রান্সফরমেশনের রূপরেখা সামনে ১০ বছরে আমরা করবো। এই বছর এটা- ওই বছর ওটা। সে জন্য তো বাজেটের রিকোয়ারমেন্ট এরকম হতে হবে। আমি একজেক্ট ফিগার চাই না। ডেলটা প্ল্যান নিয়ে বসে আছে। ডেলটা প্ল্যানে তো এগুলো কিছু নেই। প্রোপার এগ্রিকালচার প্ল্যান বলে কিছু নেই। তিনি শুধু ক্রপ এগ্রিকালচারের কথা বলছেন। বাকিগুলোর খোঁজ নিচ্ছেন না। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদও এগ্রিকালচার। ফরেস্টও কিন্তু এগ্রিকালচার। তাহলে ‘মিনিস্ট্রি অব এগ্রিকালচার’ নাম না দিয়ে ‘ক্রপ এগ্রিকালচার’ নাম দেয়ায় উচিত ছিল।