অর্থ-বাণিজ্য
উচ্চমূল্যে স্থির নিত্যপণ্যের বাজার
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(২ মাস আগে) ২১ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার, ৮:৪৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৩:৪২ অপরাহ্ন

রাজধানীর বাজারে দীর্ঘদিন ধরে একটানা ঊর্ধ্বমুখী মাছ-মাংস, একাধিক সবজি, কাঁচা মরিচ, আদা, আলু ও চিনির দাম। ভরা মৌসুমেও বাজারে কোনো স্বস্তির সুখবর পাওয়া যায় না। চাল, ডাল, চিনি, ভোজ্য তেলসহ আরও যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছিল, তা খুব একটা কমেনি। এসব পণ্যের দাম উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে। এতে নিম্ন ও নিম্ন্নমধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচা বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকারিভাবে বিশ্ববাজারকে দায়ী করা হয়েছিল। আসলে সেটা নয়। তাদের মতে, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ বাজারব্যবস্থার বড় রকমের দুর্বলতা রয়েছে এবং এটাই মূল সমস্যা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়েছে, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রভাবের কারণে বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাসে বাংলাদেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল গড়ে ৯.৯৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১০.২ শতাংশ।
বর্ষায় ভরা মৌসুমেও মাছের দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। মৌসুমে না কমে বরং তা আরও বেড়েছে। মাছ বাজারে আকারভেদে তেলাপিয়ার কেজি ২২০ থেকে ২৬০ টাকা, পাঙাশের কেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, সিলভার কার্প বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে। অথচ কিছুদিন আগেও এ তিন ধরনের মাছের দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকার কম ছিল। এ জাতীয় মাছেই আমিষের চাহিদা মিটতো নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের। কিন্তু দাম বাড়ায় তাও এখন তাদের পাতে জুটছে না। শুধু পাঙাশ, তেলাপিয়া বা সিলভার কার্পই নয়, সপ্তাহের ব্যবধানে অন্য মাছের দামও বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি চাষের নলামাছ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আর আকারভেদে রুই-কাতলা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া চিংড়ি মাছের মধ্যে ছোট আকারের প্রতি কেজির দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। মাঝারি আকারের প্রতি কেজি ৯০০ থেকে হাজার টাকার বেশি। আকারে বড় হলে ক্রেতাকে কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে ১২০০ টাকারও বেশি। অন্যদিকে ইলিশ মাছের দামও আকাশছোঁয়া। প্রজনন মৌসুম হিসেবে সাগরে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলছে। তাই বাজারে ইলিশের সরবরাহও কম। এক কেজির কম ওজনের অর্থাৎ ৮০০ গ্রামের একটি ইলিশ কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইলিশের সরবরাহ বাড়লে দামও কমে আসবে।
কথা হয় পোশাক শ্রমিক আতিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, যে টাকা আয় করি তা দিয়ে কুলানো যায় না। ফলে প্রয়োজনের অর্ধেক কেনাকাটা করে বাসায় ফিরতে হয়। সাধ থাকলেও সাধ্যের মধ্যে মাছ-মাংস কিনতে পারি না। পাঙাশ, তেলাপিয়া, সিলভার কার্পের মতো মাছের দামও কেজিপ্রতি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাড়তি দামের কারণে এসব মাছও এখন আগের মতো খেতে পারি না।
রাজধানীর একাধিক বাজারে পিয়াজ, কাঁচা মরিচ, আদা, রসুন, আলু ও শাক-সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি। কয়েক সপ্তাহের ধরেই এসব নিত্যপণ্যের দাম চড়া। উল্টো কোরবানির ঈদের পর থেকে টমেটো, কাঁচা মরিচের দাম থেমে থেমে বাড়ছে। এ দুই ধরনের সবজি কিনতে ক্রেতাকে বাজারভেদে কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে ৩০০ টাকার কিছু কমবেশি। বাজারে আলুর কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭৫ টাকায়। আদার দাম প্রায় দুই মাস ধরে ৩০০ টাকার উপরে। এরমধ্যে এ সপ্তাহে নতুন করে রসুনের দাম কেজিতে প্রায় ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়।
সবজির বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে বেশির ভাগ সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি করলা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পেঁপে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং কচুরমুখি ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে ১৭৯ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। তবে স্বস্তি ফেরেনি চিনির দামে। প্রতি কেজি চিনিতে গুনতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।
কিছুদিন আগে মুরগির দাম বাড়লেও এখন কিছুটা কমেছে। সাধারণ ক্রেতারা এখনো মুরগি কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। সাধারণ ক্রেতাদের মতে, বাজারে ব্রয়লার ছাড়া অন্য মুরগি কেনাই দায়। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়, সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ টাকায়, লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায়, কক (লাল) মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। এদিকে ফার্মের বাদামি ডিমের হালি এখনো ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। এ ছাড়া অপরিবর্তিত দামে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস।
বাজার করতে আসা কবিরুল ইসলাম বলেন, ব্রয়লার ছাড়া অন্য মুরগি কিনে খাওয়াই কঠিন। কারণ সব ধরনের মুরগির দাম বেশি। দেশি মুরগি কেনার কথা তো চিন্তাও করতে পারি না। গরুর মাংসের দামের কাছাকাছি দেশি মুরগির কেজি। সব মিলিয়ে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের জন্য ব্রয়লার ছাড়া অন্য মুরগি কেনাই দায়।
মুরগি বিক্রেতা সিরাজুল বলেন, আসলে মুরগির বাচ্চা থেকে শুরু করে মুরগির খাবারের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। যে কারণে খামারিরা বেশি দামে মুরগি বিক্রি করেন। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই, বাজার যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তারাই মূল কারণ বলতে পারবেন।
মগবাজারের একটি মেসে থাকেন শিক্ষার্থী ফেরদৌস। তিনি বলেন, মেসে সাধারণত শুক্রবারে একটু ভালো খাবার রান্না হয়। কিন্তু বর্তমান বাজারের যে ঊর্ধ্বগতি এতে করে ভালো মাছ-মাংস কেনা কঠিন হয়ে গেছে। বেশি দামের কারণে ব্রয়লার মুরগিই ভরসা।
এরশাদ আহমেদ নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়তি। আমার যা আয় তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। মাসের ১০ তারিখ হলেই টাকা শেষ। সারা মাস তাহলে কীভাবে চলবো? যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে তাতে পরিবারের সব চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান মনে করেন, আমরা অতীতেও দেখেছি, বাংলাদেশে একবার জিনিসপত্রের দাম বাড়লে আর কমে না। কারণ, বাজারব্যবস্থায় গলদ আছে। অভ্যন্তরীণ বাজারব্যবস্থার দুর্বলতাই দায়ী। আর জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে।
পাঠকের মতামত
ভোটচোরদের যোগসাজে অসাধূ ব্যবসায়ীদের সম্মিলিত লুটপাট অব্যাহত আছে। যতদিন গণতন্ত্র ও জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হবে ততদিন এই লুটপাট অব্যাহত থাকবে।
The high price is to collect money for BAL election campaign.
মন্তব্য করুন
অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন
অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত
বেশি মূল্যে ডলার কেনাবেচা/ ১৩ ব্যাংকের ব্যাখ্যা চাইলো বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকে দুই অর্থনীতিবিদ/ ব্যাংক ও রাজস্ব খাত এভাবে চলতে পারে না

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]