দেশ বিদেশ
নাইজেরিয়ানসহ গ্রেপ্তার ৪ প্রতারক
বিদেশি পার্সেলের ফাঁদ
স্টাফ রিপোর্টার
২৬ মে ২০২৩, শুক্রবারবিদেশি পার্সেলের লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে প্রতারণার অভিযোগে নাইজেরিয়ানসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল রাজধানীর কাররান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন র্যাব জানায়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- নাইজেরিয়ার নাগরিক চার্লস ইফেনডি উডিজিও ও ফ্রাঙ্ক কোকো ওব্রিক্স। আর দুই বাংলাদেশি হলেন- শফি মোল্লা এবং মোছা. মৌসুমী খাতুন। গতকাল র্যাবের একটি দল রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং কদমতলীর শামীমবাগে অভিযান চালিয়ে দুই বিদেশি নাগরিকসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল, ৮টি মোবাইল ফোন ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ভুয়া ইনভয়েস উদ্ধার করা হয়। র্যাবের অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানায়, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান থানাধীন এলাকায় বসবাস করেন ২৬ বছর বয়সী এক নারী।
তার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে বিদেশি এক ব্যক্তির পরিচয় হয়। বিদেশি ব্যক্তি গত ১৭ই মে ওই নারীর ঠিকানায় একটি পার্সেল পাঠিয়েছেন বলে জানান। পার্সেলটি বিমানবন্দর থেকে সংগ্রহ করতে বলেন তিনি। পরদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাস্টমসের পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা এক নারী ফোন করেন ভুক্তভোগীকে। তিনি বলেন, আপনার নামে বিদেশে থেকে একটি মূল্যবান পার্সেল এসেছে। পার্সেল ডেলিভারি করতে কাস্টমস চার্জ হিসেবে ৬০ হাজার টাকা দিতে হবে। এভাবেই চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এই চক্রে বাংলাদেশিদের সঙ্গে নাইজেরিয়ান নাগরিকও রয়েছেন।
র্যাব জানায়, ভুক্তভোগী ওই নারী অভিযোগ করেন যে, পার্সেল ডেলিভারির জন্য কাস্টমস চার্জ হিসেবে ৬০ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে তাকে বলা হয়। এরপর ভুক্তভোগী ওই নারী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির দেয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩৫ হাজার টাকা দেন। এরপর সিকিউরিটি বাবদ আরও ৩০ হাজার টাকার জন্য বিভিন্নভাবে তাকে চাপ দেয়া হয়। ফোন করা ওই নারীর কথা অনুযায়ী আরও ৩০ হাজার টাকা পাঠান ভুক্তভোগী। এরপর পার্সেল দাবি করলে ওই নারী ফোনে জানান, তার পার্সেল বাসায় পৌঁছে যাবে। নানা কথা বলে আরও ৮ হাজার ৩২০ টাকা বিকাশের মধ্যমে পাঠাতে বলা হয়। এ অবস্থায় ভিকটিম তার আত্মীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে র্যাবের কাছে অভিযোগ করেন। র্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেঁটে ঘেঁটে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও উচ্চবিত্তসহ সহজ-সরল মানুষকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। এরপর তাদের কাছে নিজেকে পশ্চিমা বিশ্বের একটি উন্নত দেশের ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় দেয়। এভাবে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে।
পরে সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য একটি উপহার পাঠাতে চায় তারা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও উপহারের মিথ্যা নাটক তৈরি করে প্রতারক চক্রের এক সদস্য কাস্টমস অফিসার সেজে ভিকটিমকে ফোন করে। পরে ভিকটিম বন্ধুত্বের মান রাখতে উক্ত পার্সেল গ্রহণ করার জন্য প্রতারক চক্রকে টাকা দিতে বাধ্য হয়। গ্রেপ্তার হওয়া নাইজেরিয়ার ২ ব্যক্তির বিষয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বিদেশি নাগরিকেরা ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াবাসায় অবস্থান করে গার্মেন্টস ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশা শুরু করেন। গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তারা বাংলাদেশি সহযোগীদের নিয়ে এ অভিনব প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।