দেশ বিদেশ
‘বাজারে মাংস দেখে শুধু ফিরে আসি’
স্টাফ রিপোর্টার
২৫ মার্চ ২০২৩, শনিবারসকাল ১০টা। পণ্যের ভ্যানের দিকে চোখ রওশন আরার। চেহারায় বয়সের ছাপ। বাজারের ব্যাগ হাতে সুলভমূল্যে পণ্য ক্রয়ের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। অপেক্ষা টিকিট পাওয়ার। টিকিট হাতে পেয়ে খুশিতে ছুটে যান ভ্যানের দিকে। ক্রয় করেন মাংস, দুধ ও ডিম। ব্যাগের দিকে নজর তার। ব্যাগ থেকে তুলে মাংসের প্যাকেট বার বার ছুঁয়ে দেখছেন। খামারবাড়ি মোড়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
রমজান উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর খামারবাড়ির প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে বাজারদরের চেয়ে কিছুটা কম দামে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
বিজ্ঞাপন
রওশন আরা বলেন, এক বছর ধরে বাজারে মাংস দেখে শুধু ফিরে আসি। এই তিন মাস পর গরুর মাংস চোখে দেখেছি। নাতি-নাতনিদের মুখেও দিতে পারবো মাংসের টুকরা। তিনি বলেন, দুধ দুই লিটার, ডিম এক ডজন, গুরুর মাংস এক কেজি ক্রয় করেছি।
শুক্রাবাদ থেকে সকালের দিকে এসেছি। এখানে একটু দাম কম। বাজারে গেলে খালি ব্যাগ নিয়ে ফিরে আসতে হয়। এখানে কষ্ট করে হলেও কিছু টাকা বাঁচানো যায়। একজন মানুষের আয় দিয়ে পাঁচ-ছয়জন মানুষের খেতে হয়। রওশন আরা বলেন, আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর পণ্য নিতে পেরেছি। কত কিছু তো নিতে ইচ্ছে করে কিন্তু টাকাতো নেই। ছেলে টাকা পাঠিয়েছে তা দিয়ে বাসা ভাড়া দিয়েই সব শেষ। ৩০-৪০ বছর ধরে এই ঢাকায় থাকি এই রকম দুর্দিন কখনো যায়নি।
খামারবাড়ি মোড়ে সরজমিন দেখা যায়, এসব পণ্য ক্রয়ের অপেক্ষায় ছিলেন ক্রেতারা। পণ্যের ভ্যানে ১০০ কেজি গরুর মাংস, ৭ কেজি খাসির মাংস, ৭০ কেজি মুরগির মাংস, দুধ ১৭০ লিটার ও ২ হাজার ২০০টি ডিম আনা হয়েছে। গরু, খাসি ও মুরগি আধা কেজি করেও ক্রয় করতে পারছেন ক্রেতারা। আধা কেজি গরুর মাংস ৩২০ টাকা, আধা কেজি খাসির মাংস ৪৭০ টাকা, আধা কেজি ড্রেসড (চামড়া ছাড়া) ব্রয়লার ১৭০ টাকা, ১ লিটার দুধ ৮০ টাকা ও এক ডজন ডিম ১২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। সাড়ে ৯টার পরে পণ্যের ভ্যান এসেছে। ৯টা ৪০ মিনিটের মধ্যে শুরু হয় বিক্রি। দুপুর ১২টার দিকে সব পণ্যে বিক্রি শেষ হয়। তবে কয়েকজন এসে পণ্যে না পেয়ে ফিরেও গিয়েছেন। এখানে থাকা দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, সরকারিভাবে বরাদ্দ যতটুকু তারচেয়ে বেশি ক্রেতা এখানে সিরিয়াল ধরেন। আমরা সকালে পণ্যের ভ্যান নিয়ে এসে দেখি ৬০-৭০ জন দাঁড়িয়ে আছেন। মোট ১৫০ জনকে পণ্য দিতে পেরেছি।
মিরপুর থেকে আসা অপরাজিতা বলেন, আমি এক কেজি গরুর মাংস, ডিম আর এক কেজি মুরগির মাংস নিয়েছি। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। এই যে পণ্য দিচ্ছে সেটির দামও আমাদের জন্য বেশি হয়ে যাচ্ছে। তবুও এক-দুই টাকা বাঁচলেও এই আগুনের বাজারে অন্য কিছু নিতে পারবো। কিছুটা হলেও সাশ্রয় হচ্ছে। গত রমজানের চেয়ে এই রমজান বেশি কষ্টদায়ক হচ্ছে। কোনোমতে ভর্তা ভাত খেয়ে রোজা রাখতে হচ্ছে। যেখানে আগে মোটামুটি মাংস থাকতো একবেলা।
রুবিনা বলেন, খবর শুনে ইন্দিরা রোড থেকে এসেছি। এখানে যে আইটেম আছে সব নিতে ইচ্ছে করে কিন্তু টাকা নেই। অল্প টাকা আছে দুধ আর ডিম নিবো। মাংসের দাম বেশি সেজন্য নিতে পারছি না। এখানে বাজারের তুলনায় সামান্য কিছু কম।
পৌনে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে দুধ, ডিম, গরুর মাংস কিনেছেন জাহিদুর হোসেন। তিনি বলেন, এই সবকিছু মিলে আমার ১১০ টাকা সাশ্রয় হয়েছে বাজার মূল্যের চেয়ে। খুবই খারাপ অবস্থা যাচ্ছে দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধিতে। আমাদের সাতজনের পরিবার। আমি একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করি। এই ১১০ টাকা সাশ্রয় হয়েছে এটাই এখন এই সময়ের জন্য আমার কাছে অনেক কিছু। এই টাকা দিয়ে আমি অন্য একটা সবজি কিনতে পারবো।
মিরপুর থেকে এসেছেন নূর ইসলাম। তিনি সিএনজি চালক। রাস্তা থেকে যাওয়ার সময় দেখতে পান পণ্যের গাড়ি। ২০ মিনিট বসে তিনি ৩ লিটার দুধ আর ১৪ পিস ডিম কিনেছেন। তিনি বলেন, প্রয়োজন ছিল গরুর ও মুরগির মাংস। কিন্তু টাকার অভাবে কিনতে পারিনি। সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সিএনজি চালিয়ে ৩০০ টাকা আয় হয়েছে।
সুলভমূল্যে পণ্য বিক্রয় প্রজেক্টের সুপারভাইজার মো. সারোয়ার হোসেন রবিন বলেন, গত বৃহস্পতিবার শুধুমাত্র আমাদের উদ্বোধন হয়েছে এবং আমরা অল্প পণ্য বিক্রয় করেছি। আমাদের ২০টি স্থানে এই সুলভমূল্যে পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে। সচিবালয়সংলগ্ন আব্দুল গণি রোড, খামারবাড়ি, মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি, মিরপুর ষাট ফুট রাস্তা, আজিমপুর মাতৃসনদ, পুরান ঢাকার নয়াবাজার, আরামবাগ, নতুনবাজার, মিরপুরের কালশী, খিলগাঁও রেলগেট, নাখালপাড়ার লুকাস মোড়, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার, মোহাম্মদপুরের বছিলা, উত্তরার দিয়াবাড়ি, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, হাজারীবাগ, বনানীর কড়াইল বস্তি, কামরাঙ্গীরচর ও রামপুরা।