ঢাকা, ১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

অর্থ-বাণিজ্য

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি কোনো মতেই ২৫ হাজার টাকার নিচে হওয়া উচিত নয়: আনু মুহাম্মদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

(২ বছর আগে) ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ১১:১৮ অপরাহ্ন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, দারিদ্রসীমার আয়ের যে মানদণ্ড, তার চেয়ে শ্রমিক কম মজুরি পায়। সেই হিসেবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কোনো মতেই ২৫ হাজার টাকার নিচে হওয়া উচিত নয়। শনিবার পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বিষয়ে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনা সভায় মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আগামী ১লা মার্চ মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‍বর্তমানে শ্রমিকের মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা উচিত। আর ন্যূনতম মজুরির দাবি কোনো দয়া বা দাক্ষিণ্যের বিষয় না, এটা শ্রমিকের অধিকার। উন্নয়নের গল্প যে বলা হয়- এই উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে; আবার পরিবেশ দূষণের প্রভাবও শ্রমিকের উপরেই পড়ে। বাংলাদেশের তুলনায় পৃথিবীতে এত কম মজুরি আর কোথাও দেয়া হয় না। পোশাক রপ্তানির বিষয়ে আমরা যদি পাল্লা দিতে পারি, তাহলে ‍ন্যূনতম মজুরি প্রদানে আমরা কেন অপরাপর দেশের সাথে পাল্লা দিতে পারছি না? উৎপাদন ব্যয় বাড়লে যদি মূল্য সমন্বয় করা হয়, তাহলে উৎপাদনের অন্যতম প্রধান শক্তি শ্রমিকের মজুরি কেন বাড়বে না? তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির জন্য যুদ্ধকে অজুহাত হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এ সংকট তৈরি হত না যদি সরকার গ্যাস, তেলসহ জ্বালানি ইস্যুতে পুরো মাত্রায় আমদানি নির্ভর না হতো। নিজের সম্পদ বের করলে এটি হতো না। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকার কমিশনের লোভে তারা এটি আমদানিনির্ভর করে ফেলেছে। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‍‍‍‌বিজিএমইএ ধনিক শ্রেণির প্রধান সাংগঠনিক কাঠামো হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো প্রকার বাড়তি বিনিয়োগ ছাড়াই ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে মালিকপক্ষ ৬০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার মুনাফা করলেও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি হয়নি। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‍টাকার মান যেভাবে কমছে, তাতে শ্রমিকদের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। আগের ১০ হাজার টাকা দিয়ে এখন আর ১০ হাজার টাকার পণ্য পাওয়া যায় না। ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের যে অজুহাত সরকার দিচ্ছে, তাতে সামনের দিনেও টাকার মান আরও কমে যাবে। তখন ২৫ হাজার টাকার পণ্য কিনতে ৩০ হাজার টাকাই লাগবে। পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা না হলে জুলাইয়ের পর তা ৩০ হাজার টাকা করার দাবিতে শ্রমিকরা মাঠে নামবে বলে জানান তিনি। শুধু পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করলে তা টেকসই হবে না উল্লেখ করে সেলিম বলেন, ‍প্রয়োজন ‘জাতীয় মজুরি বোর্ড’ গঠন করা; যেখানে সেবাসহ চা, হোটেল, দিনমজুর, অন্যান্য শিল্পসহ সবখাতের শ্রমিকদের মজুরি কেমন হবে তার নীতিমালা থাকবে। তিনি বলেন, নির্ধারিত আয়ের মানুষ বড় মাছের ‍পুরোটা কেনার সামর্থ্য হারিয়েছেন অনেক আগেই। এখন কাচকি মাছের মতো ছোট ছোট মাছ কিনতে পারছেন। পরিস্থিতি এভাবে চললে আগামীতে কাচকি মাছও হালিতে কিনতে হবে। সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, কোনো দেশের শিল্পের বিকাশ হলে তার সঙ্গে শ্রমিকদের জীবনমানও উন্নত হতে হয়। বাংলাদেশে তার উল্টো হয়েছে। দেশে পোশাক খাত বড় হলেও শ্রমিকরা অধিকার ফিরে পায়নি। ২০১৮ সালের পর আর মজুরি বাড়েনি শ্রমিকদের। শ্রমিক নেতা মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, বর্তমানে একজন শ্রমিকের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও বাসা ভাড়া মিলিয়ে ১৪ হাজার টাকার নিচে চলা সম্ভব না। বাড়তি বাজারে শুধু চালের পেছনেই প্রতিটি পরিবারে খরচ বেড়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা। শ্রমিকদের মহার্ঘ ভাতা দেয়ার দাবি জানান শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জলি তালুকদার। সংগঠনের সভাপতি মন্টু ঘোষ বলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মিল রেখেই প্রতিনিয়ত মজুরি বাড়ানো প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মাসিক ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করা হয় ৪ হাজার ১০০ টাকা, বাসা ভাড়া ২ হাজার ৫০ টাকা, খাদ্য ভাতা ৯০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা ও যাতায়াত ভাতা ৩৫০ টাকা। সবমিলিয়ে সর্বনিম্ন মজুরি ধরা হয় ৮ হাজার টাকা।

অর্থ-বাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অর্থ-বাণিজ্য সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status