ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্বজমিন

নেপালের রাজনীতিতে তরুণদের চ্যালেঞ্জ, ভাঙতে চান পুরনো ধারা

মানবজমিন ডেস্ক

(১ বছর আগে) ৫ ডিসেম্বর ২০২২, সোমবার, ৬:০৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

mzamin

একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে টিনেজ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছেন বিরাজ ভক্ত শ্রেষ্ঠা। মাঝে মাঝেই তিনি নেপালের রাজধানীতে জনপ্রিয় এলাকা ফ্রিক স্ট্রিটে সময় কাটাতেন। হাতে থাকতো গিটার। কাঠমান্ডুর  বসন্তপুর এলাকার রাস্তায় একটি স্থান বেছে নেন। নিজের কিছু গান বাজান। কিছু গান লেড জেপেলিন এবং পিংক ফ্লয়েডের বাজাতেন। এ সময় হিমালয় দুহিতা নেপালে চলছিল মাওবাদী বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ শেষ হয় ২০০৬ সালে। এর দু’বছর পরে জনপ্রিয়তা হারানো রাজতন্ত্র বাতিল হয়। রাজতন্ত্র থেকে কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে যাত্রা করে নেপাল।

বিজ্ঞাপন
বিরাজ ভক্ত শ্রেষ্ঠা বলেছেন, ওই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শের বাহাদুর দেউবা। দুই দশক পরে সেই শের বাহাদুর দেউবার বয়স এখন ৭৬ বছর। এখনও তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী। ৫ম বারের মতো ক্ষমতায় আছেন। নেপালের রাজনীতিতে এভাবেই প্রবীণ নেতারা আধিপত্য বিস্তার করে আছেন। এর ফলে শ্রেষ্ঠার মতো কয়েক ডজন তরুণ নেতা গত মাসে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। 

২০ নভেম্বরে নির্বাচন হয় নেপালে। সেখানে প্রবীণ নেতাদের রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একদল তরুণ তারকার উত্থান ঘটে। তাদের অনেকে জিতেছেন। অনেকে পর্যাপ্ত ভোট পেয়েছেন। দীর্ঘদিন এমপি হিসেবে আসন ধরে রেখেছেন এমন জনপ্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধেও তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। বিরাজ ভক্ত শ্রেষ্ঠা নবগঠিত ন্যাশনাল ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টির (এনআইপি) প্রার্থী হন। বিজয়ীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। কাঠমান্ডু-৮ সংসদীয় আসন থেকে প্রতিনিধি পরিষদে নির্বাচিত হয়েছেন। 

বিরাজ ভক্ত শ্রেষ্ঠা বলেন, আমি যা করছি তা নিয়ে আসলেই খুব সন্তুষ্ট। আমি আর্ট পছন্দ করি। মিউজিক পছন্দ করি। একজন তরুণ পর্যটন বিষয়ক উদ্যোক্তা ছিলাম এবং একজন আগ্রহী ভ্রমণকারীও ছিলাম। সবসময় নিজের মধ্যে আত্মমর্যাদাকে সম্মান করতাম। যখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম, তখন মনে হলো আমার কাজের জন্য দেশকে সম্মান জানানো কঠিন। সব পেশাজীবির মর্যাদার প্রতি সম্মান এবং তা বিস্তৃত করা উচিত রাষ্ট্রের। মনে হলো এর জন্য আমিও তো দায়ী। 

হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে পার্লামেন্টে বিরাজ ভক্ত শ্রেষ্ঠার সঙ্গে আরও যোগ দেবেন সবিতা গৌতম। তিনি ২৭ বছর বয়সী একজন যুবতী, আইনজীবী এবং সাংবাদিক। তিনি বিজয়ী হয়েছেন কাঠমান্ডু-২ আসন থেকে। এই আসনটিতে প্রচলিত দলগুলোর কব্জায় থাকে। এ জন্য এর দিকে তীক্ষè দৃষ্টি ছিল সবার। আল জাজিরাকে গৌতম বলেছে, একজন তরুণ প্রতিনিধি হিসেবে পার্লামেন্টের ধারা বদলে দেয়ার পরিকল্পনা আছে আমার। অতীতে আমরা সব সময় পুরনো রাজনীতির মুখাপেক্ষী হয়েছি। একই মুখ বার বার এসেছেন। তাদের কেউই সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন না। একই সময়ে আমরা শিক্ষিত হয়েছি। আমাদের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। এটা আমাদেরকে বৈচিত্রতা দিয়েছে। তাই আমরা রাজনীতির গতিধারা বদলে দিতে পারি। নতুন পথে নিয়ে যেতে পারি রাজনীতিকে। 

এনআইপির হয়ে পার্লামেন্টে যোগ দিচ্ছেন শিশির খানাল। তিনি শিক্ষাবিদ থেকে উদ্যোক্তা। কাজ করছেন স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষার মান উন্নত করতে। শিশির খানাল নির্বাচিত হয়েছেন কাঠমান্ডু-৬ আসন থেকে। প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘টিচ ফর নেপাল’। নেপালের সব শিশু যেন ভাল শিক্ষার সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ এটা। শিশির বলেন, অনুধাবন করতে পেরেছি যে, তরুণরা/যুবকরা দেশ ছাড়ছেন। কারণ, সুশিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের অভাব আছে। নেপালে যেসব ইস্যু সামনে আছে তা রাজনীতিকে ঘিরে। এ বিষয়টিকে আমি জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে চাই। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিষ্ণু সাপকোতা মনে করেন, এবারের নির্বাচনের মধ্যে যে বার্তা আছে তা হলো পরিবর্তন এবং এই পরিবর্তনে পথ দেখাতে পারেন তরুণরা। তিনি বলেন, এখন এ বিষয়টি লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার এবং অনুপ্রেরণামূলক। প্রচলিত দলগুলোতে দলীয় কাঠামোকে দীর্ঘদিন ধরে হাইজ্যাক করেছে পুরনো নেতারা। এর ফলে দলগুলোর ভিতরে আভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র দুর্বল হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু যুবক যারা পুরনো এবং স্বতন্ত্রদের বিরুদ্ধে নির্বাচিত হয়েছেন, তারা ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছেন। 

নেপালের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য সংখ্যা ২৭৫। এর মধ্যে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হন ১৬৫ জন। বাকি ১১০ টি আসন প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে বন্টন করা হয়। একটি সরকার গঠনের জন্য কোনো পার্টি বা জোটের প্রয়োজন হয় কমপক্ষে ১৩৮ আসন। এখনও নির্বাচনের সরকারি ফল প্রকাশ হয়নি। তবে বেশির ভাগ ভোট গণনা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে কোনো পার্টিই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। তবে ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেস জোট সরকার গঠন করতে পারে।  
 

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status